চিড়িয়া বাংলা ভাষার এক আজব শব্দ। কাউকে ইচ্ছে করে বা মনের ভুলে বা অজান্তে যে ভাবেই হোক একবার বলেছেন তো মরেছেন। তবে এটাও ঠিক, এটা কিন্তু একটা টিনেজ শব্দ। টিনেজ রা কোন চতুর বন্ধু বা বান্ধবী যাদের বুঝে উঠা কঠিন তাদের ক্ষেত্রে এই শব্দটি বেশি প্রয়োগ করেন বলে আমার মনে হয়। প্রথমেই শব্দটিকে আজব বলার কারন হলো, শব্দের সাথে খানা শব্দটি যোগ করলে তখন আর সেই টিনেজ বন্ধু বা বান্ধবীর খাবার দাবারের কোন কিছু না বুঝিয়ে বন্য জন্তু জানোয়ার কে বন্দি করে প্রদর্শনের স্থানকে বুঝায়। আবার দেখুন আপনি যখন চিড়িয়া হয়ে যান মানে খাচায় বন্ধি, জন্তুরা বাইরে তখন এটিকে বাংলায় কি বলে, আমি কিন্তু জানি না, তাই বল্লাম সাফারি। যাই হোক এই চিড়িয়া খানায় যাওয়া নিয়েই আজকের পর্ব।
আমার সাথে আরো ২ জনের একজন বাংলাদেশী মেরিন ইন্জিনিয়ার সাইফ চৌধুরি, যিনি একটি জার্মান কোম্পানীর শিপ সুপারিনটেনডেন্ট এবং অন্যজন মি ক্রিয়াকজ, যিনি একজন গ্রীক পেশায় নেভাল আর্কিটেক্ট ঐ একই কোম্পানীতে কর্মরত। তাদের উভয়ের কর্মস্থল হংকং। তারা সুবিক এসেছেন হানজিন শিপইয়ার্ডে নির্মিত তাদের কোম্পানির জাহাজের সী ট্রায়াল ও ডেলেভারী বুঝে নেওয়ার জন্য। তাদের সাথে আলাপ হলো শিপইয়ার্ডে। সাপ্তাহিক ছুটি শনিবারে আমরা মিলিত হলাম আমার আ্যাপার্টমেন্টে,আগামীকাল রবিবার, ছুটির দিনটিতে কি করা যায়, তখন নানা প্রস্তাবের মাঝে সিদ্ধান্ত হলো আমরা জুবিক সাফারি (Zoobic Safari) ই যাবো। জুবিক (Zoobic) শব্দটি আসলে জু (Zoo) এবং সুবিক (Subic) এই দুই শব্দের মিলিত রূপ। চিড়িয়াখানায় কিছু চিড়িয়া দেখতে তৈরি আমরা তিন চিড়িয়া।
Subic Bay Freeport এর Forest Adventure এর অভ্যন্তরে Zoobic Safari স্থানীয় এবং বিদেশী পর্যটকদের জন্য একটি অন্যতম আকর্ষণ। ২৫ হেক্টর বনভুমির উপর অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে তৈরি এই সাফারি তে গৃহ পালিত পশু এবং বন্য প্রানীদের তাদের উপযোগি পরিবেশে রাখা হয়েছে। তাই এখানে শুধু বাঘের জন্য ২ হেক্টর বনভুমি বরাদ্ধ। এই বাঘ আর সিংহের সাফারি এখানের প্রধান আকর্ষন। ফিলিপাইনের একমাত্র বাঘের সাফারি এই Zoobic Safari। বছরের কিছু নির্ধারিত সময়ে শুধু Night Safari করা যায়। ওয়েব সাইটে দেখতে ক্লিকান এখানে Zoobic Safari ফেবুতে গুতাইতে পারেন এখানে FB Zoobic Safari
আমার আ্যাপার্টমেন্ট থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার। আধাঘন্টার ও কম সময়ে আমরা প্রথমে পৌঁছালাম Forest Adventure Park
এই Forest Adventure Park এর ভিতরে Zoobic Safari ছাড়াও আরো অনেক পার্ক আছে, যেমন Ocean Adventure, Tree top Adventure। আমাদের আপাতত গন্তব্য Zoobic Safari।
গেটে প্রথম যে কাজটি করতে হয় তা হল টিকেট কাটা। টিকেটে সাথে পাওয়া গেল ম্যাপ যেটি এখানে আসলে তেমন একটা প্রয়োজন নেই। তবু ও দিলাম শুধু আপনাদের জন্য।
১০/১৫ জনের জন্য একটি করে গ্রুপ তৈরি করা হয়। প্রতিটি গ্রুপের জন্য কাগজের ম্যাপ এর চেয়েও বড় ম্যাপ মানে একজন গাইড, যিনি প্রথমে ব্রিফিং দেওয়া থেকে শুরু করে আপনাকে বাই বাই বলা পর্যন্ত আপনাদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে।
প্রথমে আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো বার্ড ওয়াক। নাম থেকে বুঝা যাচ্ছে পাখির রাজ্য কিন্তু না কাকাতুয়া, ময়ুর, শালিক, ভূতুম পেচা, লাভ বার্ড সহ মাত্র ৭/৮ ধরনের পাখি আছে। তবে লাভ বার্ডকে খাবার খাওয়াতে পারবেন (খাবার কিনতে অতিরিক্ত ১০ পেসো দিতে হবে) আবার ভূতুম পেচাকে কাধে নিয়ে ফটো তুলতে পারবেন (অতিরিক্ত ৫০ পেসো দিতে হবে)। সবই করা হলো।
বার্ড ওয়াক থেকে বের হয়ে আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো ডমিষ্টিক পার্ক বা গৃহ পালিত প্রানীদের এলাকায় যারা হিংস্র নয়। যেমন ঘোড়া, গাধা, খচ্ছর, হরিন, ছাগল, উট, মহিষ। প্রানী গুলি শুধু বেড়া দিয়ে আলাদা করা আছে। ফিলিপাইনে ছাগল খুব একটা নেই, তাই ছাগলের সংখ্যা যেমন বেশি, আবার ছাগল রাখার জায়গা টাও তুলনা মুলক ভাবে বড়। আবার ছাগলের বাচ্ছাকে ফিডারে দুধ খাওয়াতে পারবেন (অতিরিক্ত ৫০ পেসো দিতে হবে।
তবেএই অংশে সবচেয়ে মজার ছবি মনে হয় এটি। ছাগইল্লা দাড়ির নাম করনের সার্থকতা (নিছক মজা, কেউ দু:খ পেলে সরি)
এবার বন্য প্রানী অংশে আসুন । প্রথমে বানরের খাচা। তবে আমাদের একজনকে বানরের সাজে কেমন লাগছে দেখুন।
এবার ফিলিপাইনের একটি বিশেয প্রানী, যা আমি আগে কখনো দেখিনি। তা হলো বিয়ার ক্যাট বাংলায় বল্লে বিড়ালের মত ভালুক। আবার সবসময় থাকে গাছে।
আজ এই পর্যন্ত থাক। আগামী পর্বে টাইগার সাফারির অভিজ্ঞতা সহ বাদবাকি অংশ।
পরের পর্ব Part 2