এখন কেমন জানি না, তবে আমাদের সময় নবম-দশম শ্রেনীতে ইংরেজী ২য় পত্রে কিছু কমন রচনা লিখতে হত, এর মধ্যে একটি রচনা ছিল তোমার সখ। এই রচনায় সবার কমন বিষয় ছিল বাগান করা, সবাই এটার উপর ই লিখতো। কিন্তু আমার মো: প্রাইভেট স্যার আমাকে বলেছিলেন এই রচনাটি বাগান করা নিয়ে অনেকে লিখবে, কিন্তু তুমি লিখবা একটু অন্য রকম করে, তাই তিনি লিখে দিয়েছিলেন মুদ্রা সংগ্রহ এর উপর। ঐ রচনাটি মুখস্ত করতে আমার মত ভালো ছাত্র (?) ও অনেক আন-কমন হয়ে গিয়েছিল। ভালোকথা, আমি কিন্তু রচনা মুখস্ত না করে লিখতে পারতাম না। এত বছর পরে ও ফিলিপাইনে এসে এটি মনে হবার কারন আমাদের ম্যানেজারের মুদ্রা সংগ্রহের সখ।
এখানে আমাদের ম্যানেজার রেনান আলাবা, ভদ্রলোকের জন্মস্হান ফিলিপাইনের দক্ষিন প্রান্তের একটি দ্বীপ ভোহল এ। লেখাপড়ায় নৌ-স্থপতি বা নেভাল আর্কিটেক্ট, ডিগ্রী নিয়েছেন চেবু ইউনিভার্সিটি থেকে, ঘুরেছেন অনেক দেশ। বয়সে আমার চেয়ে ৪/৫ বছরের বড় হলে ও তার সাথে একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। একদিন সে আমার কাছে কিছু বাংলাদেশের মুদ্রা চেয়ে বল্ল, তার সখ মুদ্রা জমানো। তার কাছে এশিয়ার প্রায় সকল দেশের মুদ্রা থাকলে ও বাংলাদেশের কোন মুদ্রা নেই। এর পরদিন সে তার মুদ্রা এলবামটি নিয়ে আসল আমাকে দেখানোর জন্য, আসলেই ভদ্রলোকের অনেক সংগ্রহ বলতে হবে।
তো পরদিন তাই তার জন্য নিয়ে গেলাম একটি লাল চকচকে দশ টাকার নোট। তাতে সে মহাখুশি, অনেক ধন্যবাদ ও পেলাম। ২/৩ দিন পর আবার বল্ল যদি সম্ভব হয়, তাহলে যেন তাকে আরেকটি নোট ও ২/১ টা কয়েন ও দেই। এবার ১০০ টাকার একটা সবুজ নোট ও ১ টাকার একটি কয়েন দিলাম। যথারীতি সে মহাখুশি, আবার অনেক ধন্যবাদ ও পেলাম। কিছুক্ষন পর সে যা বল্ল তার জন্য মোটে ও প্রস্তুত ছিলাম না। তোমাদের দেশে তো দেখি নেতা নেই, সব নোটেই শধু একজনের ছবি। তোমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি বা স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর, উল্ল্যেখ যোগ্য কি কেউ নেই? নাকি ঐ পার্টি ক্ষমতায়? তাকে একটি সন্তোষজনক উত্তর দিতে গিয়ে, আমাকে একজন পুরোপরি আওয়ামিলীগের কর্মী হতে হয়েছিল, কারন আমি হেরে যাওয়া মানেই বাংলাদেশ হেরে যাওয়া।
আমি কি করে তাকে বলব আমদের দেশে ওলিতে গলিতে নেতা পয়দা হয়। সবাই নেতা, তারা কথায় যেমন বড়, অকাজে, কু-কাজে তার চেয়ে ও বড়। তাকে কি করে বুঝাবো, যার নামে (বঙ্গবন্ধু) স্বাধীনতা এলো, আমরা তাকে যেমন হত্যা করেছি, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্ব দেখিয়েছি (চার নেতা, জিয়া ... ) তাদের ও হত্যা করেছি বা নিয়ত অপমান করছি (কা, সিদ্দকী)। ক্ষমতার জন্য আমরা কেউ রাজাকার দের সাথে হাত মেলাই, আবার কেউ সৈরাচার এর সাথে হাত মিলাই। নিজেদের বড়াই করতে করতে আজ ভাসানী, শেরে বাংলা, সরওয়ার্দী, ওসমানি বা তাজউদ্দিন কে স্মরন ই করি না। আমাদের এখানে ভালো নেতার কদর কোথায় ?
অথচ, ফিলিপাইনের মুদ্রাগুলো দেখলে দেখবেন কোন ছবির ই রিপিট নাই, এমন কি যাদের ছবি ও পরিচয় দেয়া আছে, তারা প্রত্যেকের ই হয় ফিলিপাইনের স্বাধীনতায় ভুমিকা আছে অথবা দেশের জন্য এমন কিছু করেছেন যে মানুষ আজ ও স্মরন করে। বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার স্হপতি, কিন্তু আমরা অন্যদের অবদানকে অস্বীকার করব কি করে, কিছু সুবিদা বাদি এতে করে বঙ্গবন্ধুকে ছোটই করে যাচ্ছেন, বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশের গান্ধী হতে পারছেন না।
ম্যনেজার এর সাথে কথা বলার পর গত কয়েকদিন থেকে বাংলাদেশের মুদ্রাগুলোতে ছবি নিয়ে আমি চিন্তা করছিলাম, আমার একটা প্রস্তাব আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই, আমি জানি অনেকের সাথে এর দ্বিমত থাকতে পারে, কিন্তু প্লীজ রাজনীতি টেনে আনবেন না। এটা শুধুই আমার মতামত, আপনার পছন্দ না হলে, কোথায় পরিবর্তন হলে ভালো হয় জানেবেন।
১। ১০০০ টাকার নোট - বঙ্গবন্ধু (আল্টিমেট চয়েজ)
২। ৫০০ টাকার নোট - তাজউদ্দিন আহমেদ এবং ওসমানি
(মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী এবং মুক্তিযুদ্ধের সেনাপতি)
৩। ১০০ টাকার নোট - সাত বীর শ্রেষ্ঠ
৪। ৫০ টাকার নোট - কাজী নজরুল ইসলাম এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৫। ২০ টাকার নোট - মৌলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী, শেরে বাংলা
৬। ১০ টাকার নোট - জিয়াউর রহমান - বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষনা পাঠকারী, সেক্টর কমান্ডার, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট।
৭। ২ টাকার নোট - কোন ছবি প্রয়োজন নেই, এটি এমনিতেই পৃথিবীর অন্যতম সুন্দরতম নোট। যদি দিতেই হয়, তবে ভাষা সৈনিক সালাম, বরকত, জাব্বার।
৮। ১ টাকার নোট - রাস্ট্রপতি / সরকার প্রধান (দায়িত্ব রত)
চলবে ...............।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৩৬