ফলে এটা স্বাভাবিক যে, দৃকবাসী শহিদুল আলমরা পশ্চিমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ফেরি করে বেড়াবেন। বাংলাদেশী সাইট আনহিয়ার্ড ভয়েসেস ইংরেজি ভাষায় সযত্নে একপেশে ধারাবিবরণী তুলে ধরবে পশ্চিমাদের জন্য। বাঙালি সেটেলারের জামার ভেতরে তারা রামদা খুঁজে ফিরবে মরিয়া হয়ে। তানভীর মোকাম্মেলরা জাপানি ভাষার সাইটে পায়ের ওপর পা তুলে বাংলাদেশের গোষ্ঠী উদ্ধারে মগ্ন তো হতেই পারেন। মানবাধিকারের সাক্ষাৎ প্রতিমূর্তি তারা! তাদের কথা থাক, বরং দৃষ্টি ফেরানো যাক অন্যদিকে। দেশী ও প্রবাসী উপজাতীয়দের পরিচালিত কমপক্ষে ১৫টি ওয়েবসাইট এবং অন্তত ১০টি বিদেশী সংস্থা সরাসরি বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সরকার ছাড়াও তাদের প্রধান লক্ষ্য বাঙালি জনগোষ্ঠী এবং সেনাবাহিনী। সন্দেহ নেই, এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আসুন, দেখা যাক কারা কিভাবে বাংলাদেশবিরোধী প্রপাগাণ্ডা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে-
জুম্মনেট অর্গ
এটি প্রধানত জাপানি ভাষায় নির্মিত সাইট। তবে এর একটি ক্ষুদ্র ইংরেজি সংস্করণও আছে। মূল সাইটটি গুগল ট্রান্সলেশনের সহায়তা নিয়ে দেখলে এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে কিছুটা আঁচ করা যায়। সাইটটির বেশকিছু স্পর্শকাতর অংশ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়। জুম্মনেট অর্গকে আমরা বলতে পারি, বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণার সবচেয়ে নিকৃষ্ট উদাহরণ।
জুম্ম পিপলস নেটওয়ার্ক ইউকে
ব্রিটেনভিত্তিক আরেকটি প্রপাগাণ্ডা সাইট- http://www.jpnuk.org.uk/
২০০২ সাল থেকে এই সাইটটি বাংলাদেশ বিরোধী প্রপাগাণ্ডা চালিয়ে আসছে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে, যা তারা নিজেরাই জানিয়েছে- পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতি আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ। সাইটটির নিচের দিকে-বাঁয়ে সর্বশেষ লিংকটি বেশ কৌতূহলোদ্দীপক- Jihadist Terrorism in Bangladesh!
সিএইচটি গ্লোবাল ভয়েসেস
জুম্মনেটের আরেকটি প্রপাগান্ডা সাইট হচ্ছে সিএইচটি গ্লোবাল ভয়েসেস। তাদের বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণার মরিয়া রূপটি দেখতে পাবেন এখানে আর প্রপাগাণ্ডা পাবেন এখানে। জাপানি ভাষায়ও সিএইচটি গ্লোবাল ভয়েসেসের আরেকটি প্রপাগাণ্ডা সাইট আছে। জাপানভিত্তিক সিএইচটি কমিটির রহস্যজনক কার্যক্রম দেখতে পাবেন এখানে।
সাম্প্রদায়িকতা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর অপচেষ্টা
শান্তিচুক্তির পরও থেমে নেই বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা। একদশক আগের তথ্য ও ছবিই এই প্রচারণার সম্বল। আছে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টাও। এই সাইটে তেমন কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই 'ধর্মীয় নিগ্রহের' জন্য দায়ী করা হয়েছে মুসলিম ধর্মাবলম্বী এবং সেনাবাহিনীকে। আছে বাঙালিদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক প্রচারণা, পশ্চিমা সুযোগসন্ধানীদের মায়াকান্না, এমনকি বিদেশী সাহায্য নিয়ে কুৎসিত প্রচারণাও। এখানে পাবেন হিল ট্রাক্টস মনিটরের ছদ্মাবরণে
দেশবিরোধী প্রপাগাণ্ডা (পিডিএফ), উপজাতীয়দের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও জাতিসংঘ প্রধানের কাছে পাঠানো চিঠির নমুনা।
এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স
হংকংভিত্তিক 'থিংক ট্যাঙ্ক' এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স তাদের ভাষ্যমতে এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে তথ্য-সেতুবন্ধন তৈরির কাজ করছে। তারা মূলত বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সামরিক-বেসামরিক ভাবনাকেন্দ্রগুলোর (থিঙ্ক ট্যাঙ্ক) নজর রাখে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রভাবিত করার চেষ্টাও করে থাকে। বাংলাদেশবিরোধী জনমত সংগঠনে এশিয়ান অ্যাফেয়ার্সের ভূমিকা একেবারে হেলাফেলার নয়। সাইটটি সবার জন্য উন্মুক্ত নয়। এর গ্রাহক হতে হলে ফি দিতে হয় বার্ষিক ২৫ ইউরো।
একচক্ষু ইউএনপিও
ইউএনপিও নামের আরেকটি সংগঠন বিশ্বজুড়ে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার। তবে সেটা বেছে বেছে। আমি পুরো সাইট সার্চ করে ফিলিস্তিন নিয়ে একটি লাইন দেখলাম না। তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে তাদের একপেশে রিপোর্ট যথারীতি আছেই।
হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস
বিশ্বজুড়ে ছড়ানো হিউম্যান রাইটস কংগ্রেসের প্রচারণা দেখুন, কী ভীষণ সাম্প্রদায়িক এবং একপেশে! একনজর দেখুন বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণার লক্ষ্য কারা।
সংঘবদ্ধ প্রচারণা সর্বত্র
এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের ছদ্মাবরণে বাঙালিদের বিরুদ্ধে কুৎসিত সাম্প্রদায়িক প্রচারণা দেখুন এখানে (পিডিএফ)। লন্ডনভিত্তিক সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনালের একপেশে প্রচারণা পাবেন এখানে। বাঘাইছড়ির ঘটনা নিয়ে পশ্চিমাদের প্রকাশিত সংবাদের মূলভাবটি লক্ষ্য করুন। আর ভালো কথা, জুম্মল্যান্ড নামের 'দেশটি' কি আপনারা কেউ চেনেন? এই দেশটি কোথায়, একটু জানাবেন কেউ?
সংযুক্তি
খাগড়াছড়ি থেকে একজন সেনা কর্মকর্তা কর্তৃক তার উদ্বিগ্ন সহকর্মীদের কাছে পাঠানো ইমেইল পড়ুন এই পোস্টের ২৭ নম্বর মন্তব্যে।