ওরা মাত্র ১৯ জন। তার মধ্যে সাত-আটজন এখন ব্লগ থেকেই নিষ্ক্রিয় নানা কারণে। বাকি ১১ কি ১২ জন। এই "বারো ভূঁইয়া" এমন কিছু না। দু একজন আছেন প্রতিভাবান। বাকি সবাই একেবারে সাধারণ মানের ব্লগার। এদের সকলেই আবার ওয়ার্ডপ্রেসনির্ভর একটি ব্লগের মডারেটর। অথচ এই কয়জনের হাতেই সামহোয়্যারইনের মতো একটি ব্লগ আর সেই ব্লগের হাজার হাজার ব্লগার জিম্মি হয়ে আছে। তারা হাসতে বললে আপনি হাসছেন। কাঁদতে বললে কাঁদছেন। নিজের অজান্তেই আপনি ক্ষুদ্র একটি সংঘবদ্ধ দলের ক্রীড়নক হয়ে পড়ছেন। একজন রহিম, যিনি পুরনো ব্লগার, হয়তো গত সপ্তাহেই ব্যান হয়েছে। কিন্তু আপনি তার প্রতিবাদ করেননি। একজন করিম, নতুন এসেছেন ব্লগে, ভুলেভালে হয়তো গত মাসেই ব্যান হয়ে গেছেন। কিন্তু আপনি তার প্রতিবাদ করেননি। কারণ ওই সংঘবদ্ধ দল আপনাকে সে নির্দেশ দেয়নি। কিন্তু আমার এক দীর্ঘদিনের সহ-ব্লগার, যিনি ওই দলটির একজন সদস্য, তিনি আজ ব্যান হওয়াতে আপনি-আমি সবাই প্রতিবাদের ঝড় বইয়ে দিচ্ছি। কারণ আমাদের দলভুক্ত জমিদারেরা সেটাই চাইছে। ওরা প্রতিবাদ করতে বলেছে, আমরা প্রতিবাদ করছি। রহিম-করিমের ভাবার সময় আমাদের নেই। আমরা হলাম প্রজা!
সুতরাং ভুলেও ব্লগ জমিদারদের বিপক্ষে টু শব্দটিও করবেন না। মিরাজ এই ব্লগে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণাধর্মী কাজ করার পরও তিনি রাজাকার! ফারহান দাউদ, মেহরাব শাহরিয়ার, বিডিআইডল, অ্যামাটার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বললেও তারা রাজাকার! মাহবুব সুমন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে স্বাক্ষর সংগ্রহে খাটলেও তিনি রাজাকার! আমাদের জমিদারেরা বলেছেন, তাই অবশ্যই তারা রাজাকার!
আমাদের জমিদারদের কৃপায় ব্লগে এখন কাউকে একটা পোস্ট দিতে দশবার ভাবতে হয়। তাদের মনরক্ষা করে না চললে ১০০টা মাইনাস অবধারিত, সঙ্গে উপরি হিসেবে পাবেন গালিগালাজ। আবার নিজ দলের কারো অর্থহীন অসার পোস্টে ৫০টা প্লাস আসবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে (এই মুহূর্তেই প্রথম পাতায় এরকম একটি পোস্ট আছে)।
আপনি ব্লগে আসেন খোলামন নিয়ে, কিছু কথা বলার ইচ্ছে নিয়ে। আর আমাদের জমিদারেরা আসে আইপি হাইড সফটওয়্যার সঙ্গী করে, যে সফটওয়্যার ব্যবহার করে ১০০-২০০ প্লাস দেওয়াও সম্ভব। শুধু ব্লগে প্রতিপত্তি বিস্তারের জন্য সামহোয়্যারের এক জমিদার, যিনি অন্য একটি ব্লগের কর্ণধারও, মাসে একটি সফটওয়্যার কম্পানিকে ২০ ডলার পে করেন। সেই সফটওয়্যার তিনি দলের সবাইকে ব্যবহার করতে দেন। ভাবা যায়! প্রতিদিন ভালো ভালো কথা বলেন, ব্লগে নীতিবাক্যের নহর বইয়ে দেন, আবার অন্য নিকে এসে গালিগালাজ করেন, নাটকের প্লট সাজান- এমন লোক আপনার আশেপাশেই আছে। নতুন ব্লগাররা এসে তাদের আবার "জনপ্রিয় ব্লগারের" তকমা এঁটে দেন।
নতুন কিংবা পুরনো ব্লগার ব্যান হলে কেউ প্রতিবাদের কথাও মুখে আনেন না। অথচ বারো ভূঁইয়ার কেউ ব্যান হলে ব্লগে একটি কৃত্রিম ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা হয় কৌশলে। অনেকে নতুন পোস্ট দিতে পর্যন্ত ভীত হয়ে পড়েন। অথচ কতোজন নিরীহ নারী ও পুরুষ ব্লগার এদের ফাঁদে পড়ে, গালিগালাজ সহ্য করতে না পেরে এই ব্লগ থেকে চিরতরে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছেন- তার হিসাব ও তথ্যপ্রমাণ আমার কাছে আছে। কারণ একসময় আমি তাদের সঙ্গেই ছিলাম। কতোগুলো আপাদমস্তক ভণ্ডের হাতে আমি নিজেই বহুদিন ব্যবহৃত হয়েছি।
সুদীপ্ত কিংবা নাফিসদের মতো ব্লগে তুলনামূলক নবাগতদের যখন এই ৩-৪ কিংবা ১০-১১ জনের সঙ্গে দেখি, তখন সত্যিই হতাশ হই। এরকম বহু তরুণের সর্বনাশ এরা করেছে আমার চোখের সামনেই। সৃজনশীল মনটাকে চাপা দিয়ে ওরা মুখে ধরিয়ে দিচ্ছে- ব্লগিং মানেই ছাগু! ব্লগিং মানেই অমুকের ব্যান খাওয়া! ব্লগিং মানেই আমাদের সঙ্গে তাল মেলাও!
মনে রাখতে হবে, ব্লগ কারো যাওয়া-আসায় থেমে থাকবে না। থাকেনি অতীতে। ব্লগ একটা ট্রেনের মতো। মানুষ উঠছে, নামছে। কারো দিকে কারো তাকানোর ফুরসৎ নেই। চাইলে বারো ভূঁইয়ার প্রজা হতে পারেন, স্বাধীন প্রজাও হতে পারেন। প্রিয় ব্লগার, সিদ্ধান্ত আপনার!