কবি, নায়ক, নায়িকা (ছোটগল্প)
নায়িকাঃ
উত্তরার মত জায়গায় এইরকম ঠিক মানায় না। ৪ নাম্বার সেক্টরটাকে বৃত্ত ধরে নিলে একেবারে কেন্দ্রের দিকে অনেকগুলো ছ’তলা বিল্ডিং এর মধ্যে হঠাৎ ছোট্ট দোতলা একটা বাড়ি; মতান্তরে আড়াই।
নিচতলায় থাকে নায়িকা। নায়িকার জানালায় রংধনু, নায়িকার জানালা রঙ্গীন। নায়িকা পড়ালেখা করে অনেক, তারচেয়েও বেশি শোনে গান, আরো বেশি ভাবে নায়ককে নিয়ে আর তারচেয়েও বেশি দ্যাখে স্বপ্ন। অথচ, নায়কের মতিগতি বোঝা মুশকিল। কোথায় যে থাকে সারাদিন! কী যে এতো দৌড়াদৌড়ি! এই গিটার নিয়ে দৌড়াদৌড়ি, এই কোন জায়গায় কনসার্ট, দাওয়াত, উৎসব, বন্ধু-বান্ধব কত কী! অথচ, নায়িকার যে নিস্তব্ধতা পছন্দ, মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছা করে নায়কের সাথে বারান্দায় বসে চায়ের কাপ হাতে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দেয়। কিন্তু ঐ ইচ্ছাটুকু পর্যন্তই, ‘হাই, হ্যালো’র পর কখনো যে এই সেই কথা বলতে বলতে ভালোলাগার কথা জানাবে, তা আর হয়ে ওঠে না। কী বলবে, কী উত্তর পাবে তার সম্ভাব্য ইমাজিনারি স্ক্রিপ্টের সংখ্যা দু’ডজন ছাড়িয়ে গেছে বহু আগে। নায়িকা বোঝে, দেরী করার কোন অর্থ নাই, কিন্তু যদি নায়ক তার চিন্তার মত না হয়, যদিও সম্ভাবনা কম, কিন্তু তাও নায়িকার ভয় হয়, যদি হাসি তামাশা করে, যদি অপমান করে ! এইসব ভয়, লজ্জা, আত্নগোপন প্রবণতা আর ঘরের এক কোণে একা আপন ভুবনে হারিয়ে যাওয়া থেকে হঠাত নায়কের আলোর মাঝে যাওয়া, নায়িকা ঠিক মেলাতে পারে না, যারফলে নায়কের পরিসীমার মাঝে অনুপ্রবেশ থেকে যায় একটি অধরা টিকেট।
অবশ্য এক কাজ করা যায়, কবিকে মিডিয়াম হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এই লোকটাকে নায়িকার পছন্দ; নায়িকার বোঝামতে- লোকটার রাগ নাই, হিংসা নাই, তাড়াহুড়া নাই, কারো সাথে কোনরকম বন্ধনও নাই। কিন্তু এইসব প্রেমের দালালী কবি করবে না বলেই নায়িকার ধারণা, হয়তো শুনবেই না নায়িকার কথা, শুনলেও ভুলে যাবে। আরেক কাজ করা যায়, কবিকে দিয়ে সেইরকম একটা রোমান্টিক কবিতা লিখিয়ে নিয়ে নায়ককে দেয়া যায়। নাহ! বেশি ড্রামাটিক হয়ে যায় ব্যাপারটা; যদিও নায়ক ঐরকম না, কিন্তু তারপরও সেই কবিতা যদি নায়ক তার বন্ধুদের দ্যাখায় ! লজ্জা, লজ্জা।
তারচাইতে যেমন চলছে চলুক, কোন একটা উপায় তো বের হবেই।
নায়কঃ
নায়ক জানে, সুখী থাকার সবচাইতে কার্যকরী উপায় হল ব্যস্ত থাকা। অবশ্য, ইদানীং ব্যস্ততাগুলো বড্ড বেশী বংশ বিস্তার করা শুরু করেছে। একটার ঘাড়ে চেপে আরেকটা। আরাম কেদারায় বসে নিজেকে একটু সময় দেয়ার মত সময় কোথায়? বন্ধু বাড়ছে, আড্ডা বাড়ছে, পাঁচ-ছ বছর ধরে লেগে থাকার পর বাজারে নিজেদের ব্যান্ডের অ্যালবাম বের করার সুবর্ণ সুযোগ হেতু চাপ বাড়ছে, বাড়ছে পড়ালেখা নিয়ে সিরিয়াসনেস, জব নিয়ে চিন্তা, আর বাড়ছে অনাকাংখিত সাংসারিক দায়িত্ব, আবার থেকে থেকে একটা দুইটা থেকে ধীরে ধীরে বাড়ছে বিবাহের প্রস্তাবনা। এতো কিছুর মাঝেও নায়কের চোখ এড়ায় না-সবচাইতে বাড়ছে তার প্রতি একতলার নায়িকার আগ্রহ। হ্যাঁ, নায়িকা প্রায় সব দিক দিয়েই নায়কের সাথে মানানসই, তবে ইয়ে; এই যে বস্তা বস্তা ব্যস্ততা, নায়ক ভাবে- একটু রয়েসয়ে।
কবির সাথেও দ্যাখা করা দরকার, এই লোকটার কবিতা নায়ক তেমন একটা বোঝে না, তবে বোঝে –লোকটা ট্যালেন্টেড। নতুন অ্যালবামের জন্য চারটা গান তো কবিই লিখে দিল। নায়ক ও তার দল ঘন্টার পর ঘন্টা চা কিংবা গাঁজা কিংবা মদ কিংবা ইয়াবাতে ডুবে গিয়েও তো সেইরকম সুন্দর কোন লিরিক্স লিখতে পারছে না। আরও কয়েকটা গান লিখায় নিতে হবে। বাই প্রোডাক্ট হিসেবে গল্পসল্পও করা যাবে। এই লোকটার সাথে গল্প ঠিক হয় না, আজগুবি চিন্তাধারার একপক্ষীয় বর্ষণ হয়। নায়কের বেশ ভালোই লাগে ব্যাপারটা। কেউ কেউ থাক না পাগল ! এইতো সেদিন হঠাত রাস্তার পাশে টং দোকানে লোকটাকে দেখে নায়ক চা খেতে বসে গেল। অন্যান্য চাখোরেরা তখন দেশের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে হা-হুতাশে ব্যস্ত। কবি কী নিয়ে ভাবছে প্রশ্নের উত্তরে নায়ক যা বুঝলো – সে ভাবছে হালাইব ট্রায়াংগেলের জনৈক যুবক ছিনতাইকারীর কথা। যুবক কোন গানটা শুনলে টের পায়-সেও একজন দেশপ্রেমিক? সুদানের জাতীয় সঙ্গীত? নাকি মিশরের জাতীয় সঙ্গীত?
পারেও বাপ, কেউ কেউ পারেও।
কবিঃ
দুই তলা পার হয়ে মাকড়সা অন্ধকারের মাঝ দিয়ে কয়েক কদম সিঁড়ি পেরোলে চিলেকোঠা, একটা ঘর। হয়তোবা চিলেকোঠার ঘরে থাকার কারণেই সে কবি, কিংবা কবি বলেই হয়তো তার এই কাব্যিক বাসস্থান। কবি বোঝে, তার জীবনের সকল সাফল্য এবং ব্যর্থতার জন্য একজন মাত্র দায়ী- নাম তার অন্যমনস্কতা। কবি আশেপাশে আগাছার মত জন্মাতে থাকা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলিতে ঘুরেফিরে বছরের পর বছর ম্যাথ পড়ায়। হোয়াইট বোর্ডে নিজেরই লেখা কালো কালো অদ্ভূত চিহ্নগুলির দিকে তাকিয়ে তার মনে পড়ে-মানিক বন্ধ্যোপাধ্যায় ম্যাথ পড়তেন, অথচ ভদ্রলোক কবিতা লিখতেন না বললেই চলে। কবিতা আর লজিক কি কন্ট্রাডিকটরি? এই ভাবনায় ডুবে গিয়ে সে মিনিটখানিকের অর্ধেকটুকু হারিয়ে ফেলে, তারপর সে মাথা ঘোরায়, নাদুসনুদুস কয়েকটি টেডি বিয়ার শিশুদের দেখে তার মনে হয়-এই বাচ্চাগুলিই না ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা মনিকা স্কুলে আততায়ীর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলো ! এমনিভাবে, প্রিন্সিপাল ম্যাডামের ঠোঁটের অনবরত কাঁপনের দিকে আধাঘন্টা খুব বুঝদারের মত তাকিয়ে থেকে লিপ্সটিক কে কবে কোন পরিস্থিতিতে আবিষ্কার করেছিলো এ চিন্তা ছাড়া আর কিছুই তার মাথায় খেলে না।
ভাত খাওয়ার সময় সে ভাবে গুহামানবদের কথা, ছাদে দাঁড়িয়ে ভাবে প্রশান্ত মহাসাগরে বিশালায়তন জাহাজের ডেকে সদ্য বিবাহিত মেরিন ইঞ্জিনিয়ারের দৃষ্টি ও দর্শনের কথা, ডেস্পিকেবল মি দেখতে গিয়ে ভাবে রসু খাঁর কথা- এই লোকটাকে নিয়ে একটা সিনেমা বানাতে না পারা পুরো বাংলা চলচ্চিত্র সমাজের জন্য কত্তবড় লজ্জা! বাসের লাইনে দাঁড়িয়ে হারিয়ে যায় অদূরে টুকটুকে লাল ফ্রক পরিহিতার ফুলের মালা বিক্রি ও বিক্রিসংক্রান্ত ঝামেলাসমূহের মাঝে। পেছন থেকে একটা মৃদু ধাক্কা আর একপাল চিৎকার আসে-‘ঐ মিয়া, আপনের সামনে দিয়া ধুমধাম লাইনে মানুষ ঢুইকা যাইতাসে; দ্যাহেন না? ’
এই এতসব ঝক্কি ঝামেলার মাঝে লেখালেখিটাই যা একটু মনযোগটা ধরে রাখতে কবির।
চলবে; ঐটুকু দিয়েই খুব ভালো চালানো যায় জীবন।
কবি, নায়ক, নায়িকাঃ
চিন্তারা এক প্রকার চারচাকার যান, স্পিডব্রেকারে হোঁচট খায় মাঝে মাঝেই। তেমনিভাবে রাতেরাও কিন্তু চারচাকার যান, যেমন এই রাতটা; সন্ধ্যা থেকে কি নিটোল ত্বরণে ছুটছিল ! ছাদের কংক্রিটে সাড়ে দশটা, কবির বামে নায়ক আসন গেড়ে বসা, ডানে নায়িকা দুহাতে হাঁটু মুড়ে, আর কবি হাত দুটো পেছনে ছাদের টাকে রেখে পা দুটো ছড়িয়ে দিয়ে। মূলত কবির প্রলাপ, নায়কের রসিক মন্তব্য আর দুইজনেরই সকল কথায় নায়িকার নিরঙ্কুশ সম্মতি জ্ঞাপন, এই হল নৈশভোজপরবর্তী কদাচিত ঘটা ছোট্ট আড্ডার কলকব্জা। এভাবেই চলতে চলতে এক পর্যায়ে সামনের বিল্ডিং এর চারতলায় লাল আলো জ্বলা একলা জানালায় চোখ রেখে কবি স্বগতোক্তির মত বলে ওঠে- জানো, বলতে গেলে এই যে জীবনের এতোটা পার করে আসলাম, এ পর্যন্ত কোন নারীকে আমি সত্যিকার ভালোবাসিনি, কোন নারীও আমাকে ভালোবাসেনি।
কবির বামে বসা নায়ক তার উশকো খুশকো চুলজংগল সমেত কিংকর্তব্যবিমূঢ় করোটিকে আরো একটু বামে নিয়ে অন্ধকার আকাশে একা জ্বলতে থাকা তারাটির দিকে তাকায়। ভাবে- আশ্চর্য ! কখনো ভালোবাসেনি, ভালোবাসাও পায়নি, এমন লোকের পক্ষেও এতো সুন্দর লেখা সম্ভব ! সাহিত্যে কী অভিজ্ঞতার কোন দরকার নাই? আর ডান পাশে চুলগুলোকে আরো একটু ছড়িয়ে দিয়ে অলৌকিক ভারে পুরো চেহারাটাকে হাঁটুর মাঝে গুঁজে দেয় নায়িকা। ভাবে- কবি কি বিশেষ কোন উদ্দেশ্যে এই কথা বললো ? হয়তো তাকে লক্ষ্য করেই তীর ছোঁড়া; হয়তো কবি সেই নারী হিসেবে তাকেই চায়। সে কি এখন কবির ফেলে রাখা হাতে তার হাতটি রাখবে ? তাহলে নায়ক? নায়কের কী হবে? কী হবে নায়িকার স্বপ্নের ?
এই যে এই পরিস্থিতিটাই হল স্পিডব্রেকার, রাতটা একটু হোঁচট খেল। তারপর আবার নতুন করে ত্বরণ বাড়িয়ে ছুটতে থাকল।
জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা
বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মপোলব্ধি......
আত্মপোলব্ধি......
একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !
হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।
আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।
আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন