লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে
গতকাল সন্ধ্যায় সন্ধ্যা নামলে-
এক পায়ের উপর আরেকটা ভাঁজ করে
ডান হাতে কবিতার ঝড়;
আর বাম হাত গালে মুষ্টি পাকিয়ে আমি কি সুনিপুণ সুকান্ত হয়ে যাই।
আমি কবিতা পড়ি- উঠতি কবিদের কবিতা
লিটল ম্যাগাজিনের কবিতা;
শহুরে বেশ্যার নাভীতে পিয়ার্সিং এর গান, ডিজে পার্টিতে নিঃসঙ্গতা,
দুপুর দুটোর চা,
মধ্যবিত্ত পিতার ঘড়ির কবিতা –
ব্যাটারির আয়ু শেষ, তিনি স্ট্যাটাস রক্ষা করার জন্য –
দাওয়াতে পড়ে যান; ঘড়ি চলে না, শুধু হাতটার নগ্নতা ঢাকে।
আমি এইসব কাব্য পড়ি,
জলের কাব্য, শহুরে কাব্য, অন্ধ গলিতে নদীর কাব্য,
অরণ্যের কাব্য, লাবণ্যের কাব্য, প্রেমের কাব্য, সঙ্গমের কাব্য।
সেলসম্যান বিরক্ত হয় – “কোনটা নেবেন ভাই??”
আমি মাথা চুলকাই,
চশমাটা ঠিক করি, চার পাঁচবার চোখের পাতা ফেলে –
এক নিখুঁত এলিয়েন সেজে যাই,
সে বড় তুখোড় ক্যামোফ্লেজ।
“ও, হ্যাঁ, নেওয়া?? হ্যাঁ, নিব তো, দেখি একটু চেখে, কোনটা নেয়া যায় !!”
সেলসম্যান দৃষ্টি ঘুরায়,
খুব ফূর্তিতে দুলতে থাকা চারটে মেয়ের দিকে-
নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে
শহুরে বেশ্যা ঠাওর করে –
পাশের সেলসম্যান এর সাথে বুকগুলি নিয়ে,
সরু পিঠে আছড়ে পড়া চুলগুলি নিয়ে -
গল্পে মশগুল হয়ে যায়।
আর আমি,
আমি কবিতা পড়ি -
ছোট কবিতা, বড় কবিতা, ভোরের কবিতা, মধ্যরাতের কবিতা
প্রেমের কবিতা, হেমের কবিতা, ক্ষুধা আর কামের কবিতা।
শব্দের দল, স্মৃতি আর বিস্মৃতির দল ক্রমশ-
আমার ডান হাতে অনবগুন্ঠিতা হয়ে পড়ে-
আমি কবিতা পড়ি;
আমার স্কালে বয়ে যায় নিখুঁত বাক্যের সুনামি।
এভাবে রাত নামে,
কড়ই গাছের ঝিরঝির করা পাতাগুলি পায়ের কাছে ধূলোর সাথে মেশে,
বই পত্র সব গুছানো শুরু হয়, স্টলের ঝাঁপি পড়ে।
আমি মাথা চুলকাই, চশমাটা নাড়াচাড়া দেই, চার পাঁচবার চোখের পাতা ফেলি, এলিয়েন ক্যামোফ্লেজ নিয়ে –
কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে একটা নগ্ন শূন্যতা পুরে রেখে বেরিয়ে যাই বইমেলা থেকে।
“দেখি, একটা বেনসন দিন তো; ও খুচরা নাই!! আচ্ছা তাহলে অনেকগুলো দিন। হা হা হা ” ।
বাহ, কি নিখাঁদ ভদ্রলোক !!
নিজের শালীনতায়, ভব্যতায় মুগ্ধ হয়ে যাই।
দুটো বন্ধুকে সাথে নিয়ে -
কাধে হাত রেখে
উঠতি কবিদের অপার সম্ভাবনাসমূহে আলোকপাত করতে করতে রিকশায় উঠি। ঠাটারিবাজার স্টারে যাই, লেগরোস্ট দিয়ে ভরপেট খেয়ে –
একটা অত্যাবশ্যকীয় ঢেকুর তুলি শহিদুল জহিরের আবু ইব্রাহিম
- “আহ, ভালোই খাইলাম” ।
পরে, আপন স্বর্গে-
বিছানায় এলিয়ে দেই শরীর, বাঘের ছবি আঁকা তুলতুলে কম্বল জড়িয়ে খুব আরামে চোখ বুজে আসে।
আরো পরে, অনেক পরে, মধ্যরাতে আসে অনাহূত আগন্তুক, দুঃস্বপ্নের দল।
মধ্যরাতের চাঁদ ধোয়া ধূ ধূ রাস্তা,
কিছু যুবক;
ছেঁড়া জিন্স, রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে, নোংরা,
চেক শার্ট, এখানে ওখানে দাগ, নোংরা
বড় বড় নখ, নখের মাঝে রাজ্যের ময়লা, নোংরা
দাঁড়িগুলো এলোপাতাড়ি, চুলখুলো উস্কোখুস্কো, নোংরা
উঠতি মাস্তান বোধহয় -
আমাকে ঘিরে ধরে।
“মাদারচোদ, খানকির পোলা...
আইজকা দুপুরে কি খাইসি জানোস ??
দুইটা ঠান্ডা সিঙ্গারা আর এক গ্লাস কলের পানি;
সারারাত শব্দ গাঁথতে গিয়ে, একটা লাইনের সাথে আরেকটা লাইন এর সূতা বুনতে গিয়ে আমাদের খুব খিদা লাগতাসিলো, আমরা ফুটপাতের টং এ শুকনা পাউরুটি খাইসি, চোদানির পোলা; তুই সব, সব কেড়ে নিলি।
আমাদের পারিশ্রমিক দে;
আমাদের কবিতা -
নিঃসঙ্গতার সাথে, রাতজাগা চাঁদটার সাথে কতটা সঙ্গমের ফসল, তুই আমাদের কবিতা চুরি করে নিয়ে গেলি, টাকা দে চুতমারানির পো... ”
আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়, আমি চার পাঁচবার চোখের পাতা ফেলি;
মাথা চুলকাই।
তারপর আবার নির্বিকার ঘুম দেই।
সকালে ব্রাশ করবার সময় আয়নায় নিজেকে দেখে চমকে উঠি, কপালে বড় করে খোদাই করা একটা আশ্চর্য শব্দ –
শব্দচোর।