ছোটবোনের স্কুল ছুটি। দেশে আসার কোন চান্স নেই। গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে কোথাও না গেলে সারা বছর কানের কাছে ঘ্যান-ঘ্যান শুনতে হবে। ভাইয়া একদিনের নোটিশে ফ্রান্সে যাবার আয়োজন করে ফোন করে জিঞ্জেস করলো আমি শুক্রবার ছুটি পাবো কি না? আমার ম্যানেজার ছুটি দিতে রাজি হয়ে গেলো। যাত্রা আপাতত ডিজনীল্যান্ড আর আইফেল। ফ্রান্সে আমার অলরেডি ২/৩ বার যাওয়া হয়ে গেছে। তাই খুব একটা মজা পাবো না জেনেও যেতে হলো। ইন্টারনেটে দুটো বাড়ি ২দিনের জন্য বুকিং দেওয়া হলো। প্রথমে যেহেতু ডিজনীল্যান্ড যাবো তাই বাড়িগুলো ওখানেই বুকিং দেওয়া হলো।
ভোর ৪ টায় দুটো গাড়ি নিয়ে রওয়ানা। গাড়ি কে চালাবে সেইটা নিয়ে প্রথমে একচোট হয়ে গেলো ভাই-ভাবীর সাথে। আমি চাইছিলাম ভাইয়া প্রথমে চালাক। পরে না হয় আমি নিবো। ভাইয়া বলে আমি পুরো রাস্তা দৌড়াবো। মোটামুটি নতুন গাড়ি। তবে ঐটা আমার গাড়ি না। তাই প্রথমে একটু অসুবিধা হবে গিয়ার, ব্রাক, লাইট এগুলো চিনতে হবে (এগুলো গাড়ি টু গাড়ি পার্থক্য হয়)। উনি পাশে বসে আমাকে ভুল হলে বলবেন। গাড়ি চালানোতে কেউ ইন্টারাপ্ট করলে আমার মেজাজ খারাপ হয় আর ভুল হবার সম্ভাবনা থাকে বেশী। একবার তো ট্রাকের তলায় ঢুকে গিয়েছিলাম। পরে ভাইয়া বল্লো তোর ভাবী এইসবে আরো বড়ো উস্তাদ। কোথাও ৯০ কি.মি থাকলে কোনভাবেই ঐটা ক্রস করা যাবে না। পাশে বসে চিল্লাবে। এজন্য উনি ড্রাইভ করেনি।
আমি ৫ মিনিটে গাড়ি গিয়ার থেকে শুরু করে সবগুলো মোটামুটি দেখে আল্লার নাম নিয়ে রওয়ানা। রাস্তা বেশ ফাকা ছিলো তাই বেশ ভালো স্পিডে গাড়ি চালানো গেছে। যদিও আমরা যে রাস্তা ধরে গিয়েছি ঐটা মাত্র ৩ লেনের ছিলো। স্পিড লিমিট লিখা ছিলো ৯০ কি.মি। আমি দৌড়াইছি ২২০ কি.মি তে। আর আমাদের অন্য গাড়ি (ঐটা একদম নতুন) দৌড়াইছে ২৪০ কি.মি তে।
ওদের হাইওয়েতে কিছুক্ষন পরপর টুল সিস্টেম। মহা গেইঞ্জাম। ইতালীতেও দেখেছি টুল সিস্টেম। প্রায় ৬০ ইউরো টুল দিতে হলো
মধ্যিখানে নাস্তা/কফির জন্য কিছুটা যাত্রা বিরতি ছিলো। প্রায় ৬ ঘন্টায় মোটামুটি ডিজনীল্যান্ডে কাছে আমাদের আবাসিক হোটেলে পৌছানো গেছে।
একটু রেষ্ট নিয়ে মহান (!!) ডিজনীল্যান্ডের উদ্যেশে যাত্রা। হোটেল থেকে মাত্র ২ স্টপেজ। হেটে গেলে ১৫ মিনিট। এখন শুধু ছবি...
ডিজনীল্যান্ডে যে নামডাক শুনেছিলাম দেখে তা মনে হলো না। গ্রুপের সবাই খুবই হতাশ। এর থেকে জার্মানী ইউরোপা পার্ক অনেককক ভালো। আইটেমও অনেক বেশী। তবে ডিজনীল্যান্ডের ২/৩ টা আইটেম বেশ ভালো বাচ্চাদের জন্য। তবে অভারওল আমরা সবাই হতাশ। এন্ট্রি টিকেট ৫২ ইউরো প্রতিজন (অনেক বেশী)। একদিনেই মোটামুটি সবগুলো আইটেম চড়ে ফেলা হয়েছিলো। বেশী হতাশায় ২ দিন থাকার কথা থাকলেও একদিন থেকেই ভাগার চিন্তায় অস্হির। তবে থাকার জায়গাটা খুবই ভালো ছিলো। ডিশওয়াশার, কাপড়ধোয়ার মেশিন থেকে সবই ছিলো। ভাড়া মাত্র ১৫০ ইউরো প্রতিদিন। এতো কমে কিভাবে ওরা মেইনটেইন করে বুঝলাম না।
পরের দিন আইফেল টাওয়ার। প্রায় ২ ঘন্টা লাইনে খাড়া। উপরে উঠেই সবার সখ মিঠে গেছে। সাথে সাথে নীচে নামার জন্য তাড়াহুড়ো। স্কুল ছুটি থাকায় এতো ভীড় আগে আন্দাজ করা যায়নি।
প্যারিসে গাড়ি পার্কিং মহা ঝামেলা। galerieslafayette তে সারাদিনের জন্য রেখে বের হয়েছিলাম। প্রায় ২৪ ইউরো বিল আসছে । তবে ওদের পার্কিং থেকে গাড়ি বের করতে আমার ড্রাইভিংয়ের ষোলকলা পূর্ন। পুরো একটা ডানজিওন টাইপ। ক্লাচ আর এক্সেলেটর চাপতে চাপতে পুরো পা কাঁপাকাঁপি।
সন্ধ্যার পর আবার বাড়ি ফেরা। গাড়ির সবাই মোটামুটি ঘুমে। রাস্তায় প্রচন্ড বৃষ্টিতে ড্রাইভ করতে খুবই কষ্ট হয়েছে। আমিও মাঝে মাঝে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। থেমে আবার কফি খেয়ে ড্রাইভ। ভোরে বাসায়। পরের কয়েক সপ্তাহ গাড়ি ড্রাইভ করা বন্ধ।
(কয়েক হাজার ছবি। এতোগুলো দেওয়া সম্ভব না। একটা একটা করে সিলেক্ট করে আবার ইনসার্ট করতে হাত ব্যথা করে )
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১০ দুপুর ১:১৭