হঠাত করে তাপমাত্রা -১ হয়ে গেলো। সপ্তাহের শুরুতে ১৫/১৬ ডিগ্রী ছিলো। আবহাওয়ার পুর্বাভাস দেখে সামারের জ্যাকেট ছেড়ে শীতেরটা বের করতে হলো। দেশ থেকে কয়েকজন বন্ধুস্হানীয় লোকজন বেড়াতে এসেছিলেন। আসার আগে বলে দিয়েছিলাম ঠান্ডার কাপড় নিয়ে আসতে। আসার পর উনারা বেশ ঘোরাঘুরি নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। অষ্ট্রিয়া, মিউনিখ সহ বিভিন্ন শহরে। দেখা হয়েছে গতকাল। কেমন হলো জার্মান ঘোরাফেরা জিঞ্জেস করতেই সবার মন খারাপ। ঠান্ডার কাপড় নিয়ে আসেননি কেউই। এরমধ্যে অষ্ট্রিয়া গেছে বেড়াতে। ওখানে ঠান্ডা আরো বেশী।
কয়েকমাস হলো শরীর ঠিক রাখতে গাড়ি ছেড়ে দিয়েছি। এখন বাইসাইকেল, হন্টন, বাস-ট্রামে যাতায়াত। সারাদিন বসে কাজ করতে হয়। বাসায় ফিরেও শুয়ে-বসে সময় কাটানো। সপ্তাহান্তে শুধু ঘর পরিষ্কারের কাজ । এতো বসে থাকতে থাকতে গোল আলু হয়ে গেলাম। কিন্তু এই ঠান্ডার মধ্যে সাইকেল চালাতে মোটামুটি চোখের পানি, নাকের পানি এক। কানের অবস্হা তো আরো খারাপ। ইনার, হাতমোজা, কানটুপি, গলার মাফলার, এগুলো আমার ভালো লাগে না। ঘুম থেকে উঠতে হয় সেই ভোরে। তখন ফজরের নামাযের সময়ও হয়নি। তারপর নাস্তা থেকে শুরু করে সবকিছু শেষ করে দৌড়। অফিস থেকে ফিরতেও সেই রাত। শীতে প্রথম প্রথম বেশ কষ্ট হয়। কয়েকদিনের মধ্যেই অভ্যস্ত হয়ে যাই। তবে শীতে বৃষ্টি হচ্ছে সবচে বড়ো ফাজলামী।
আমাদের সেকশনে দুজন সেক্রেটারী। একজন এতো বেশী কথা বলে যে দ্বিতীয়জনের কথা বলার কোন চান্সই নাই। আসতে দ্বিতীয়জন পুরোপুরি জন্মগত বোবা। প্রথমে অফিসে জয়েন করার পর সেটা জানতাম না। আমি হাই-হেলো বলতাম। কিন্তু মহিলা জবাব দিতো না। কয়েকমাস পর কি একটা কাজে উনার কাছে যেতে উদ্যত হলে একজন বল্লো যে এই মহিলা বোবা। কিছুক্ষন ভেবে দেখলাম সেক্রেটারীর কাজই বা কি? শুধু ফাইল নাড়াচাড়া করা, কেউ কোথাও অফিসের কাজে গেলে খরচ হিসেব করা, টিকেট বোকিং করা, মিটিংয়ের রুমে চা-কফি দিয়ে যাওয়া। অবশ্য চা-কফিগুলো আমরা নিজেরাই নিয়ে যাই। মাঝে মাঝে ম্যানেজারকে দেখি ট্রলি ঠেলে চা-কফি, পানির বোতল নিয়ে যাচ্ছে। একজন ডিজএবল লোককে শুধু বসিয়ে না রেখে রাষ্ট্র বিভিন্ন প্রতিষ্টানের মাধ্যেমে কাজের পরিবেশ তৈরি করে দিতে পেরেছে।
নিজের ব্যবহারে জন্য দুটো পিসির প্রয়োজন। সবগুলোতে আলাদা কিবোর্ড, মাউস, মনিটর। একটা লেপিও আছে। নিজের কাজে ব্যবহার করি তাই নিজের ইচ্ছেমতো কিবোর্ড মাউস কিনে নিয়ে এসে বিল করলেই টাকা ফেরত। কেনাকাটায় আমি কোনদিনই নেই। বন্ধুদের অনেকেই গিগা ছেড়ে টেরাবাইটের হার্ডডিক্স, হরেক রকমের নতুন নতুন ইলেকট্রনিক্স কিসব কিনে। আমার লেপির ১৬০ গিগার হার্ডডিক্স পুরোটাই খালি। আমার মনে হয় কম্পু পড়া অথবা এই লেবেলে কাজ করা ঠিক হয়নি। কাজের জন্য মাঝে মাঝে এক কলিগ আমার ডেক্সে আসে। আমার মাউস হাতে নিয়ে ব্যাটা চিল্লানো শুরু করে। মাউস নাকি খুবই স্লো, ঠিকমতো কাজ করে না। আমি বলি এতোগুলো বছর তো আমি এই মাউস দিয়ে কাজ করেছি। বলে তুমি একটা কিনে এনে সেক্রেটারীকে বিল করে দিও। মেজাজ খারাপ হলো। নিজের ড্রয়ারে একটি wireless মাউস ছিলো। খুব বেশী ব্যাটারি কনজুম করে দেখে ঐটা এতোদিন একটিভ করা হয়নি। অবশ্য ব্যাটারী অফিস সাপ্লাই দেয়। আমাকে তো কয়েকদিন পরপর ব্যাটারী বদলাতে হয় এজন্য ঐটা বাদ দিয়েছিলাম। কয়েকদিন ব্যবহারের পর ঐটা বাতিল করে আবার ড্রয়ারে। এখন আবার পুরনো মাউস দিয়ে কাজ চালছে। নতুন একটা কিনবো কিনবো করেও কেনা হচ্ছে না
এই সপ্তাহ কাজ শেষে দুই সপ্তাহের ছুটি। নিজের কাজ মোটামুটি শেষ। এখন অন্যের কাজ করতে হচ্ছে। ফাকতালে নিজের কিছু সুনাম অর্জন করা। ছুটিতে কোন প্লান নাই। আপাতত একটি লম্বা ড্রাইভিংয়ে প্লান। তবে শীত বেশী হলে সেটাও বাতিল। ফ্রষ্টের মধ্যে গাড়ি চালানোতে আমি নাই। শীতের টায়ার লাগিয়েও লঙ-ড্রাইভে আমাকে কেউ বিশ্বাস করে না। অবশ্য আমি নিজেও নিজেকে বিশ্বাস করি কম। শহরের ভেতরেই চান্স পেলে ৫ম গিয়ারে গাড়ি হাকাতে মন চায়। আর হাইওয়ে হলে তো কথাই নেই। একটি ভালো গাড়ি কিনবো কিনবো করেও মধ্যবিত্ত মানসিকতার জন্য কেনা হচ্ছে না ( শালার গাড়ির দাম এতো হলে কিনি কিভাবে??)। শুধু গাড়ি কিনলেই হবে না। কতো রকমের চিন্তা মাথায় ঢুকাতে হয়। টেক্স, ইনস্যুরেন্স, গ্রীন/হলুদ/লাল প্লেকার্ড, তেলের দাম। বাকিতে অথবা ব্যাংক লোন নিয়ে গাড়ি কেনার কোন শখ বা ইচ্ছে নেই। চাকরীরও যে অবস্হা। কখন কার বাত্তি নিবে ঠিক নাই।
কয়েকদিন পরপর সেক্রেটারীর রুমে হানা দেই। নতুন কোন কলম এসেছে কি না দেখি। অনেকদিন পর গতকাল গিয়ে দেখি অনেকগুলো নতুন কলম এসেছে। কয়েকটি নিয়ে আসলাম। এখন কিছু আকাআকি হবে টেবিলে। তারপর কোন কলিগের হাত দিয়ে ঐটা হাপিস। অবশ্য আমার ড্রয়ার ভর্তি কলম। অভ্যাসটা স্কুলে থাকতেই শুরু। যদিও তখন ঝর্না কলম দিয়ে লিখতে হতো (এখন মনেহয় দেশে পাওয়া যায় না। এখানে ঝর্না কলমের দাম খুব বেশী। বাচ্চাদের ঝর্না কলম দিয়ে লিখতে হয়)। পরবর্তিতে মামা ডাক্তার হওয়ার সুবাধে শতশত কলম আর লিখার জন্য পেড পাওয়া যেতো। ইউনিতে পড়ার সময় টাকা পেলে শুধু কলম কিনতাম। আর মা-বাবাও দেশের বাইরে থেকে সাপ্লাই দিতো। বদঅভ্যেসটা এখনো রয়ে গেছে। সুপারমার্কেটে গেলে চকলেট আর ফাউল খাবার কেনা আর একটি বদঅভ্যেস। খাই অথবা না খাই একঘাদা কেনা হয়।
জার্মানীতে আসার ৭ বছর পূর্ন হলো (ইউ.কে এক বছর)। চাকরীতে প্রায় চার বছর। অথচ জীবনে এক সাথে দুই বছর কোথাও থাকলে হাপিয়ে উঠতাম। মনে মনে ভাবতাম স্কুল-কলেজের শিক্ষকেরা এতো বছর কিভাবে একই প্রফেশনে কাজ করে। সেই আমি এক চাকরীতে প্রায় চার বছর। ইন্টারশীপ দিয়ে শুরু করেছিলাম। এখনো চলছে। জানি না ভবিষ্যতে বদলানো চান্স নিবো কি না। আমার সাথের অনেকেই ভালো জবের অফার পেয়ে পুরনোটা ছেড়ে চলে গেছে। অনেকে বলেছিলো জব সার্চের জন্য। অভিক্ষতা হলে বেশী টাকার চাকরী পাওয়া যায়। কিন্তু চেনা-জানা পরিবশ ছেড়ে নতুন কোথাও যেতে ভালো লাগলো না।