somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শান্তি নাই !!!

০৮ ই অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশ থেকে সবাই ভাগতে চায়। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিত-অপরিচিত। যাদের আসার সৌভাগ্য (!!) হয়েছে একমাত্র উনারাই বলতে পারবেন বিদেশ কি জিনিস।
অদ্য ইউ.কে তে ছাত্রদের করুন অবস্হা সবাই জেনেছে। এই সমস্যাটা বর্তমানে খুবই প্রখট। আগেও অবস্হা খুব একটা ভালো ছিলো না। ২০০৩ সালে আমিও সিলেটের ২য় রাজধানীতে গিয়েছিলাম। সিলেটি হিসেবে ভেবেছিলাম ওখানেই সব সুখ (আমার দোষ না। আমাদের সিলটিদের জন্মের পর থেকেই এক সাধনা। কিভাবে লন্ডন যাবো)। কিন্তু অবস্হা যা দেখলাম তাতে শুধু পেটে-ভাতে থাকা সম্ভব ছিলো। সেমিষ্টারের ফি জোগাড় করার জন্য অমানুষিক পরিশ্রমের প্রয়োজন। সব দেখেশুনে ব্যাক টু পেভিলিয়ন। স্কান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো (জার্মানি, সুইডেন, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড) টাকা ছাড়া পড়ার যে সুযোগ দিচ্ছে তা লুফে নিলাম। কষ্টসৃষ্টে পড়াশোনা শেষ করলে মোটামুটি চাকরী পাওয়া নিশ্চিত। ৯৯% ছাত্র পড়ালেখার পর চাকরী পেয়ে যায়। পি.এইচ.ডিও পাওয়া অনেক সহজ। পি.এইচ.ডি আর প্রথম শ্রেনীর জবের সেলারি প্রায় সমান। ক্ষেত্রবিশেষে অনেক বেশী। হয়তো ভালোই হয়েছে। বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই এখনো ইউ.কে আছে। কিন্তু কোনভাবেই কিছু করতে পারতেছে না। হয়তো স্কলারশীপসহ পি.এইচ.ডি পাইছে। কিন্তু থাকা খাওয়া নিজের। মানে ম্যাকে অথবা বার্গারে কাজ করতে হবে। ওখানে চাকরী পাওয়া সোনার হরিন। এখানে মোটামুটি ডাল-ভাত।

বর্তমানে জব মার্কেটে অবস্হা খুবই খারাপ। এইসময় কারো চাকরী গেলে আগামী কয়েকমাসে পাওয়ার সম্ভাবনা শুন্য। যদিও সফটওয়্যার সেকশন ধরা খেয়েছে কম। তারপরও ইনভেষ্টরদের ভয় ধরে গেছে। আমার অফিসে প্রতিমাসের সেলারি শীটের পাশাপাশি অন্য একটি পেপারে কোম্পানীর কয়টি পোষ্ট, কোন কোন ডিপার্টমেন্টে খালি আছে তা উল্লেখ থাকে। কেউ যদি ইন্টারনালি যেতে চায় তাহলে যোগাযোগ করলেই মোটামুটি হয়ে যায়। গত প্রায় চার বছরের চাকরী জীবনে এই প্রথম রিক্রুটমেন্টের কোন পেপার পেলাম না। মানে অবস্হা আসলেই খারাপ।

কোম্পানী বিক্রি হবে। নিউক্লিয়ার পাওয়ার সেকশন টি.এন্ড.ডি বিক্রি করে শেয়ার বাড়াবে। সবাই বলাবলি করতেছে আগের কোম্পানী আবার কিনে নিবে। দুই কোম্পানির বস ফ্রান্স সরকার। তাই আপতত ভয় নাই। আগামী বছরের মিডিল পর্যন্ত কাজ এসাইন করা আছে। অবশ্য এই বছরের শেষ দুই মাসের মধ্যে প্রায় দেশ মাস ছুটি কাটাবো। ২০১০ যে কেমন হবে একমাত্র আল্লাহ জানে। জার্মানিতে নতুন সরকার এসেছে নতুন কোয়ালিশন নিয়ে। কোয়ালিশনের ওরা কোম্পানী ফ্রেন্ডলী। ওদের নির্বাচনী ইশতেহার ছিলো সহজে জবে হায়ার + ফায়ার করা যাবে। বর্তমানে কোম্পানী ইচ্ছে করলেই কাউকে ছাটাই করতে পারবে না। ওরা আইন পরিবর্তন করতে গেছে কিছু ক্যাচাল হবে ইউনিয়নের সাথে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয়। আগামীতে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে ইনফ্লেশনের জন্য। সেই অনুপাতে বাড়বে না বেতন। যদি নির্বাচনি ওয়াদায় বলেছে টেক্স কম কাটবে। কিন্তু অন্যদিকে ভ্যাট বাড়িয়ে দেবে। সাধারনত মাস শেষে একমাসের সেলারীশীটের সাথে অন্য মাসেরটা কম্পেয়ার করি না। ওরা এই টেক্স, সেই টেক্স বলে যা কেটে নিয়ে যা থাকে তাই ব্যাংকে দিয়ে দেয়। পোস্টে বেতনের কাগজ আসলে ফাইলে রেখে দেই। কিছু কিছু পুরনো কোম্পানী ছুটি ভাতা দিয়ে থাকে। আমারটাও দেয়। গতদিন কি মনে করে দুইটি বেতনের কাগজ কম্পেয়ার করে দেখলাম ছুটি ভাতা ভালো লিখা আছে। কিন্তু শেষে যে এমাউন্ড ব্যাংকে ট্রান্সফার হয়েছে তা দেখে নিজেই লজ্জা পেলাম। ঐটা না দিলেই হতো। বছর শেষে টেক্স রিটার্ন দাখিল করলে ১০ ইউরো পাওয়া যায়। অথচ উকিলকে দিতে হয় ১২০/১৫০ ইউরো। উল্টো লস। অথচ বছর দুয়েক আগেও তিন/চার হাজার ফেরত পাওয়া যেতো। দিনদিন আইনগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে। যা নিয়ে যাবে তা আর ফেরত পাওয়া যাবে না।

দেশ থেকে আত্মীয়দের অনেকেই পুরো ফ্যামেলীসহ আমেরিকা প্রবাসি হয়েছে অদ্য। ওখানে গিয়ে বর্তমান অবস্হায় খুবই করুন জীবন-যাপন করতেছেন। অনেকেই ফোন করে কান্নাকাটি করতেছেন। দেশে বাড়ি-গাড়ি, উন্নত জীবন ফেলে রেখে ওখানে এক/দুইরুমে গাদাগাদি করে আছেন। কাজের ক্ষেত্রে সাধারন ধোয়া-মুছার কাজও পাওয়া যাচ্ছে না। ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত চিন্তা করেও ফিরতে পারতেছেন না। আমাদেরও সান্তনা দেওয়া ছাড়া কি বা করার আছে। মানুষজনকে যতোই বিদেশের কঠিন জীবনের কথা বলো না কেন কেউই বিশ্বাস করে না। যখন নিজে এসে কষ্টগুলো করতে থাকে তখন আর ফিরে যাওয়ার চান্স থাকে কম।

ছোটবেলায় গীতাপাঠ, ত্রিপিটক পাঠের শেষে অংশটুকু দেখা হতো খুব বেশী। কারন কার্টুন ছবির আগে ঐগুলো দিতো। গীতার প্রথম এবং শেষের কিছু লাইন মুখস্ত হয়ে গিয়েছিলো। শেষ লাইনটি ছিলো-"সব্বে সাত্তা, সুখিতা অন্ত। জগতের সকল প্রানী সুখি হোক, সকলেই মঙ্গল লাভ করুন। কেউ যেনো দু:খভোগ না করে।ওউম শান্তি, ওউম শান্তি,ওউম শান্তি,"। ঐগুলো শুনলেই ভাবতাম কার্টুনের সময় হলো বলে।
বিভিন্ন দেশ বর্তমানে ঘুর্নিঝড়, সুনামী, বন্যা, ভুমিকম্প হচ্ছে। ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, ইন্ডিয়াতে খাদ্য সংকট হবার সম্ভাবনা। বাংলাদেশেও বেশ কয়েকটি মৃদু ভুমিকম্প হলো। এগুলো কি কোন কিছুর আগাম বার্তা? একমাত্র আল্লাহ জানেন। বড়ো কিছু হলে ঢাকা শহরসহ অন্যান্য শহরের চিত্রগুলো চিন্তার বাইরে। বর্তমান সময়ে আল্লাহর কাছে একই প্রার্থনা। এই কঠিন সময়ে সবাই ভালো থাকুক।
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×