কলিগদের একজনকে দেখলাম টেবিল পরিষ্কার করতেছে। জিজ্ঞেস করলাম ছুটিতে যাবি নাকি? বল্লো না। এমনিতেই টেবিল গোছগাছ করতেছে। নিজের টেবিলের দিকে থাকিয়ে মুছকি হেসে বল্লাম আমারটা অব্স্হা তো তোর থেকেও খারাপ। বল্লো এইজন্যই তো আমরা ডেভোলপার। শুনে যদিও একটু ভালো লাগলো তারপরও টেবিলের অবস্হা দেখে খারাপই লাগলো। কয়েক শ না হলে কয়েক হাজার বিভিন্ন রকমের প্রিন্ট করা কাগজ, বিভিন্ন রকমের ম্যাগাজিন, অনেকগুলো প্রোডাক্টের বই, কয়েকটি ডিভাইস, কয়েকশ ক্যাবল, দুইটা কম্পু, ২৫/৩০টা বিভিন্ন রকমের কলম, কয়েকটি ক্যালকুলেটর, ইলেকট্রিক বোর্ড সহ আরো অনেক হাবিজাবি। দুটি বড়ো টেবিল আমার দখলে। তারপরও এই অবস্হা। এতো হাবিজাবি অবস্হায় থেকেও অন্যের তুলনায় আমি একটু ভালোই গোছানো। এখন বুঝেন অন্যের অব্স্হা কি? সকালে একজনের রুমে ঢু মেরেছিলাম। অবস্হা বড়ই করুন।
মনেমনে আর একটি কথা উকি দিলো আমার আর একজন কলিগকে নিয়ে। ঐ ব্যাটা সত্যিকারের ডেভোলপার। উনার অবস্হা নিম্নরূপ:
*অফিস আসতে ১১/১১:৩০ (আমি আসি ৮/৮:৩০)
*দুইমাসে একবার সেইভ করবে (একদিন পর পর)
*শার্ট/জ্যাকেট একটা মনে হয় কয়েকশো বছর আগে কিনেছে। আর ধৌত করেছে মিনিমাম ২৫ বছর আগে। (আমার আম্মাজান দুইদিন একই শার্ট পরতে দেখলে কিছু না বলেই মেশিনে)
*কফির কাপ মিনিমাম ২/৩ সপ্তাহ পরপর ওয়াশ হয় (আমি যতোবার কফি খাই ততোবার)
আর কিছু বল্লাম না। ঐ ডেভোলপারের তুলনায় আমি এখনো দোলনায়
ছোটবেলা থেকেই একটু অগোছালো। নিজের চেহারার কোন যত্ন নেওয়া হয়নি। আমার কাছে রূপচর্চা মেয়েদের কাজ। অবশ্য চেহারা খুব একটা খারাপ না তাই কষ্ট করার কোনই প্রয়োজন হয়নি। ফাকতালে কিছু লাভও হয়েছিলো। মুখে ব্রন অথবা অন্য কোন ঝামেলা হয়নি। আমার অভজারভেশনে যারা চেহারা নিয়ে একটু খুতখুত টাইপের তারা এইসব ঝামেলায় পড়েন। আমার বড়ো ভাইজান এই টাইপের। উনি সারাক্ষন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য যতো রকমের কষ্টের দরকার সব করতে রাজি। আমি ঐসবের ধারে কাছেও নাই। ছোটবেলায় মা, পরবর্তিতে মামী সব সামাল দিতেন। ভাগ্য ভালো আমার অফিসে ভাইদের আমন্ত্রন জানাই না। না হলে বাসায় ঢুকতে দিতো কি না সন্দেহ। ঘরের অবস্হা পিঠ বাচানোর জন্য যতোটুকু দরকার ততটুকুই।
ম্যানেজার মোটামুটি দৌড়ের উপর রাখছে। একদিকে কাজ থেকেও নাই। অন্যদিকে দেশ মাসের ছুটি পাওনা। বছর শেষ হয়ে যাচ্ছে। খুব তাড়াতাড়ি ছুটি শুরু করতে হবে। না হলে ইউনিট ম্যানেজারের ঝাড়ি খেতে হবে। একজন অসুস্হ হয়েছে। তাই ডিভাইস ডেলিভারীর তারিখ পিছিয়েছে। কিছু ফাউল টেষ্ট করতেছি। এতোদিন কন্ট্রোল নিয়েই ছিলাম। এখন প্রটেকশনের চৌদ্দগোষ্টি পড়তে হচ্ছে। গতদিন এক কলিগ জিজ্ঞেস করতেছিলো ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি? বল্লাম যে অবস্হায় দেখতেছো আপাতত এখানেই থাকি। সে বল্লো তুমি তো কন্ট্রোল, প্রটেকশন, কমিউনিকেশন (IEC-61850, IEC-101,103,104) নিয়ে কাজ করছো। এখন কোন লাইনে থাকতে চাও (কোম্পানিতে বিভিন্ন ব্রাঞ্চে এক একজন বস) তোমার চয়েজ কি? বল্লাম IEC Protocol নিয়েই কাজ করা একটু সহজ। প্রটেকশনের এ্যালগোরিদম খুবই প্যাচাইল্যা। মাথা খাটাইতে হয় অনেক। সে বল্লো আগামীতে Power System এর Network management সেক্টরের ভবিষ্যত খুবই উজ্জল। বিস্তারিত শুনে ভাবলাম তাইতো। আগামীতে উইন্ড, সোলার, উয়েব, নিউক্লিয়ার সহ অনেক রকমের মাধ্যম থেকে এ্যানার্জি উৎপন্ন হবে। কিন্তু কিছু কিছু সিস্টেম কন্সটেন্ট পাওয়ার সাপ্লাই দিতে পারবে না। যেমন: উইন্ড, সোলার এগুলো সবই নির্ভর করবে প্রকৃতির উপর। (জার্মানরা আফ্রিকার রোদ্র ব্যবহার করে বিদ্যুত নিয়ে আসতেছে)।কিন্তু যখন খুব বেশী বিদ্যুৎ সাপ্লাই লাইনে চলে আসবে তখন মেইনটেইন্স কিভাবে হবে? নিউক্লিয়ার রিয়েকটর তো বন্ধ হতে সময় লাগবে। শুধু মাত্র গ্যাস, ওয়েল জেনারেটরগুলো হয়তো বন্ধ করা যাবে। কিন্তু সেইটা তো পর্যাপ্ত নাও হতে পারে।
বল্লাম, আপাতত যেখানেই যা হোক, আমি চোখ বন্ধ করেই এখানেই থাকবো। চাকরী একটা গেলে আগামী বছরখানেকের আগে পাওয়ার চান্স নাই। অবশ্য বর্তমান ক্রাইসিসে সফটওয়্যার সেক্টর সেইরকম ধরা খায়নি। তারপরও রিক্স নিতে রাজি না। যদি আমাদের কোম্পানী ঐ সেক্টরে কোন কাজ করে তো তখন দেখা যাবে।
জার্মানি নাকি এখন থেকেই আগামী ২৫/৩০বছর পরের চিন্তা করে কাজে লেগে যাচ্ছে। আগামীতে ব্যাটারী চালিত গাড়ি আসতেছে। ওরা পুরো জার্মানিতে আলাদা বিদ্যুত নেটওয়ার্কের চিন্তা করতেছে। যেখানে সবার গাড়ি গ্যারেজে বিদ্যুতের কানেকশন থাকবে। কারো গাড়িতে অতিরিক্ত চার্জ থাকলে অটোমেটিক্যালি অন্য গাড়ি তোমার চার্জ ব্যবহার করবে। তখন তুমি টাকা/ক্রেডিট পাবে। অন্য সময় সেই ক্রেডিট নিয়ে আবার গাড়ি চার্জ করতে পারবে। ব্যাটাদের মাথায় শুধু মাল। অবশ্য চিন্তা করলে আমরাও হয়তো পারতাম। আমাদের নেতাদের চিন্তা তো শুধু বিদেশী নির্ভর। দেশে মাটি বিক্রি করেও পারলে ডলার আনো, খাও আর ওমরা করো।
মাসের শেষে ছুটি নেবো শুনে আরেক কলিগের মাথায় হাত। নতুন একটি ডিভাইসে আমার কাজ করার কথা ছিলো। কিন্তু ম্যানেজার Distance protection ডিভাইসে কাজ করতে বলেছে । কলিগকে বল্লাম যদি দরকার লাগে তো আওয়াজ দিও। আমার ছুটি তো বাসায় বসে থাকা। এখন শীত প্রায় এসেই গেছে। কোথাও ঘুরতে যাওয়ার চান্স নাই।