ছোটবেলার ঈদের স্মৃতি নিয়ে সবাই বুড়োবেলায় বেদনায় কাতর অনেকগুলো পোষ্ট পড়ে নিজেরটা বলার সাহস হয়নি। অবশ্য বলার কিছু নেইও। সব কথার শেষ কথা, আগের মতো ঈদের আনন্দ নেই।
দেশে নেই, ছাত্রাবস্হার কঠিন অবস্হাও নেই। অনেকগুলো ছুটি পাওনা। ছুটি নিয়ে কিছু করার নেই তাই সাধারনত ছুটি নেই না। ঈদে ফাও ছুটি নিয়ে নিলাম। ঈদের দিন ভাইয়ার শশুরগোষ্টির দাওয়াত ছিলো। মা-বাবা (সাথে আমিও) অনেক রাত পর্যন্ত রান্না করলাম। ঈদের দিন কেন পোলাও, রোষ্ট রান্না করে দাওয়াত হলো সেইটা নিয়ে কতোক্ষন চিল্লাফাল্লা করলাম (দাওয়াত বড়ো কথা না। নিজে বাসায় ফিটফাট হয়ে থাকতে হবে সেই চিন্তায় মেজাজ খারাপ)। নিজে চটপটি আর হালিম রান্না করে দেখলাম দুইটাই ঠিকমতো হয়নি। একটাতে লবন বেশী, অন্যটাতে ঝাল বেশী। হয়তো মেজাজ খারাপ তাই এই অবস্হা। ছোটবোন একা একা রাত ১টা পর্যন্ত মেহেদী লাগালো। ডিজাইনগুলো ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করেছে। উনার ধৈর্য্য দেখে অবাক হলাম।
রবিবারে সাপ্তাহিক ছুটি। প্রচুর লোকসমাগম হবে। বাংলাদেশি মসজিদে ঈদের জামাত হবে দুটি। প্রথম জামাতে চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা কম। কোনমতে একটু সেমাই, সন্দেশ, চা খেয়ে মসজিদের উদ্যেশ্যে গাড়ি হাকানো। তারপরও ৭টায় গিয়ে দেখি গাড়ি রাখার জায়গা নাই। একই দিনে তুর্কি, পাকু, আরব, বাংলাদেশের লোকেরা একসাথে ঈদ করছে। কোনমতে চিপায় গাড়ি পার্ক করে এসে মসজিদে জায়গা পেয়ে গেলাম। মনে মনে চিন্তায় আছি কখন আবার টিকেট লাগায় দেয়। অবশ্য সেইটা সমস্যা না। তবে যদি তুলে নিয়ে যায় তাহলে কেল্লাফতে। কোনমতে নামায পড়ে দেখি পেছনে অনেক লোকজন দাড়িয়ে আছে। সময়মতো এসেও জায়গা না পেয়ে পরের জামাতে অংশগ্রহনের অপেক্ষায়। কাছাকাছি দুই, একজনের সাথে কোলাকুলি করে বাহির হয়ে বন্ধুর বাসায়। ওখানে প্রতি বছর বাই-ডিফোল্ট দাওয়াত। অনেকগুলো চটপটি, সেমাই খেয়ে মায়ের ফোন পেয়ে বাসায় দৌড়।
বাসায় তখন ভাইয়া-ভাবীর আগমন। উনাদের সাথে কিছু খাবার গ্রহন। দুপুরে গেষ্ট আসলো দেরী করে। উনাদের সাথে আবার দুপুরের খাবার খেয়ে উনাদের বাসায় রেখেই অন্য দোস্তের সাথে দেখা করার জন্য গাড়ি হাকালাম। অনেকদিন লঙ ড্রাইভে যাই না। মোটামুটি ভালোই একটা ড্রাইভ দিলাম। রাস্তা মোটামুটি ফাকা ছিলো। কিন্তু রাস্তায় কাজ চলতেছিলো। সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিমি। মাঝেমাঝে আনলিমিটেড স্পিড অপশন পাওয়া যায়। তখনই এক্সেলেটরে চাপ। ওদের এতো কনস্ট্রাকশন কাজ দেখে মনে হয় ওরাই ডেভোলপিং দেশ। আমাদের একটা রাস্তা তৈরী করলে ১৫/২০ বছরে মেরামতের কোন প্রয়োজন নেই। সর্বোচ্চ ১৪০ কিমি তে দৌড়াইলাম। সকালে একজন বলতেছিলো উনি ২১০ কিমি তে দৌড়াইছেন। মনেমনে বল্লাম তোমার অডি জিপ কিনছো ৫০হাজার ইউরো দিয়ে। আমারটা তো অতো দামী না।
দোস্তের বাসা থেকে রাতে এসে আবার প্রথম বন্ধুর বাসায় আড্ডার দাওয়াত। সবার সাথে খাবার টেবিলে বসে শুধু সালাদ খেলাম। সাথে একটু সেমাই। রাত প্রায় বারোটায় বাসায়। যদিও অনেকগুলো পেনডিং ছিলো। বাসায় এসে কিছু পাকা আম উদরস্তো হলো।
পরেরদিন ছুটি তাই বন্ধুকে দাওয়াত করা হলো। দুপুরে উনার সাথে ভুরিভোজ করে বিকেলে আরেকটি ঈদ পার্টিতে উপস্হিত হতে হলো। ওখানেও ব্যাপক খাবারের আয়োজন। আমি ঝাল পার্টি তাই আবারো চটপটি অনেকগুলো খেলাম। অনেকক্ষন ব্লা ব্লা করার পর রাতের খাবার শুধু সালাদ আর কয়েকটুকরো মাংসের উপর দিয়েই সারলাম। মঙ্গলবার অফিস + ছোটবোনেরও স্কুল, তাই তাড়াতাড়ি বাসায়।
এতোগুলো ঝাল আইটেম খাওয়ার পর পেঠের অবস্হা যা হবার তাই হলো। ইচ্ছে করেই কোলা জাতীয় ড্রিক্স খাই না। মঙ্গলবার অফিসে শুধু দুইটা আপেল আর একটি কলা দিয়ে লাঞ্চ। কয়েকদিন ফল জাতীয় কোন কিছুই খাওয়া হয়নি। এখন আবার শুরু।
দেশের ঈদগুলোও ছিলো সকালের সেমাই খাওয়াটা একসাথে। তারপর যেখানে খুশী সেখানে যাও। মামা, খালা, বোন, বন্ধুদের বাড়ি সবখানেই একবার ঠু মারা হতো। আর খাওয়াও হতো সেইরকম।
তবে দেশে সবচে বড়ো ফাজলামি করতো বৃষ্টি। আমার ছেলেবেলার প্রতিটি ঈদেই বৃষ্টি হতো। টিভিতে দেখতাম কি সুন্দর সবাই ঈদগাহে জামাতে নামায পড়তেছে। আর আমরা মসজিদে বৃষ্টির মধ্যে ঈদের নামায পড়তেছি। একই অবস্হা হতো যখন শুক্রবারে থান্ডারক্যাডস কার্টুন দেখতে বসতাম তখন কারেন্ট চলে যেতো। কার্টুন শেষ হওয়ার পরই কারেন্ট চলে আসতো। সেই দু:খটা এখনো ভুলতে পারিনি। এইবেলায় যতোই কার্টুন দেখি আগের মতো অনুভুতি নেই।
এখানে তো এতো আত্মিয়স্বজন নেই তারপরও অনেক ঘোরাফেরা হলো।
এখন আবার দৌড়ের উপর
অনেকদিন পর বসের সাথে লাঞ্চে গিয়ে শুধু স্যুপ খেলাম। ভারী খাবার আপাতত বন্ধ। বসের চেহারা দেখে মনে হলো দৌড়ের উপর আছে। জিজ্ঞেস করলে বল্লো গতকাল সকালে সুইজারল্যান্ডে ৪ঘন্টার মিটিংয়ে উপস্হিত থাকার জন্য গাড়ি, প্লেন, ট্রেন মিলিয়ে প্রায় ১০ ঘন্টা জার্নি করতে হয়েছে। বল্লাম এইসব মিটিং তো টেলিফোন কনফারেন্সের মাধ্যমেই করতে পারো। বল্লো নতুন কাষ্টমার, নতুন প্রজেক্ট, তাই যেতে হয়েছে। মনে মনে বল্লাম ডেভোলপমেন্টে ব্যাপক সুখে আছি। নইলে ঈদ কোথা দিয়ে এসে কোথায় যেতো টেরই পেতাম না