somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাস্তব সপ্ন (একটি

০৩ রা এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সপ্নের শুরু একটা অন্ধকার ঘরের মধ্য দিয়ে । গাড় অন্ধকার ।হঠাৎ দেখলাম একটা লাল আগুনের ন্যায় দুটি চোখ আমার দিকে তাকিয়ে আছে ।দেখে মনে হচ্ছে অমানবিক বাস্তবতায় সে ক্লান্ত ।ঘরে শুধু একটা দরজা আছে ।দরজাটার নিচের ফাঁক দিয়ে একটু আলো ভিতরে আসছে ।ঘরে আর কোনো আলো নেই ।হঠাৎ এক জোড়া বুটের শব্দ ।অনেকটা লাথি মেরে দরজাটা খোলা হল ।তখন খেয়াল করলাম যেখানে এক জোড়া চোখ দেখেছিলাম সেখানে কিছুই নেই ।অনেক অবাক হলাম ।নিজেকেই প্রশ্ন করলাম “ তাহলে কি হ্যালুসিনেসন ? নাকি মাথায় সমস্যা ? ” নিজেই জানি না ।
যে লোকটি দরজা খুলল এবং উর্দূ আর বাংলা একসাথে মিসিয়ে বলল
"অই বাঙ্গালি মুক্তি ! শালা শুয়ার !হাম লোগোসে শুয়ারগিরি কারতা হ্যায় !চাল তেরা ইলাকা কা কামান্ডার তুঝে বুলারাহা হ্যায় ! চাল ! "
যেতে ইচ্ছা করছিলনা তাই বসে ছিলাম ।ভুল করলাম ।লোকটি তার হাতের রাইফেল এর বেয়নেট দিয়ে বাম হাতে খোঁচা দিল ।হাতের কনুই এর কাছে ছড়ে গেল ।তাই অনিচ্ছা থাকা সত্তেও উঠতে বাধ্য হলাম ।লোকটি সামনে হাটতে লাগলো আর আমি পিছনে ।কয়েক মিনিট পর লোকটি একটা দরজার সামনে এসে দাড়াল ।দরজা খুলে লোকটি আমাকে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকিয়ে দিল এবং আমার পিছনে দাড়াল ।তখন খেয়াল করলাম ঘরটি অনেক পরিপাটি করে গোছান ।একটা ডেস্ক ,একটা বই এর তাক আর কিছুই নেই ।পুরো ঘরে মাত্র একটা জানালা তাও বন্ধ ।ডেস্ক এর রঙ পুড়ে গেছে ।ডেস্ক এর পেছনে একজন বসে আছে ।পরিপাটি জামা কাপড় ।দেখেই বোঝা যায় কড়া করে আয়রন করা ।ক্লিন সেভড ।হাতে একটা কলম নিয়ে কিছু লিখছিল ।আমি ঢোকার সাথে সাথে আমার দিকে তাকাল ।দেখেই বোঝা গেল যে রাজাকার এটা বোঝার জন্য শার্লক হোমস হতে হয় না।
তাকে দেখে বঝা গেল অনেক বিরক্ত হয়েছে আমাকে দেখে ।তবুও মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে তুলে শুদ্ধ ইংলিশ তে বলল –
-" Sit Down ! "
অনেকটা অবজ্ঞা নিয়ে বসলাম ।মুখে বাকা হাসি ।লোকটি কিচ্ছুক্ষন আমাকে পরখ করল ।তারপর শুদ্ধ বাংলায় বলল -

-" নাম কি ? "
-" পার্থ "
-" হিন্দু নাকি বোদ্ধ ? "
-" না ।মুসলমান ।"
-" মুসলমান ?তাইলে পার্থ কেন?কোনো মুসলমান এর নাম পার্থ শুনেছ?আচ্ছা বাদ দেও।এইটা বল তাইলে মুক্তি বাহিনি তে কি করো ? "
-" মুক্তির জন্য যুদ্ধ করি । "
-" মুক্তির জন্য যুদ্ধ কর না ? অই রাফিক ইতার "......" check কর ।দেখ মুসলিম কিনা ।শালা ডান্ডি । "

তারপর কি হল আর বলার অবকাশ রাখে না ।রাফিক নামের পাকিস্তানি লোকটি আমার "......" check করল আর বলল -
- " নেহি সাব সাব ঠিক হ্যায় ।মুসলমান ।মুসলমানি হুয়া হ্যা । "
-" অ !তাইলে তুই মুসলমান !মুসলমান হইয়াও তুই তাইলে মুক্তি বাহিনিতে গেলি কেন ?"
আমি চুপ করে থাকলাম ।চোখে তীব্র ঘৃণা ।এক মিনিট নিরবতা ।তারপর লোকটি নিরবতা ভেঙ্গে অনেকটা ভদ্রতার সাথে বলল -
- " আচ্ছা থাক বলা লাগবে না । তুমি শুধু এইটা বল যে তোমাদের কমান্ডার সাব্বির কই ? শুধু এইটা বল তাহলে তোমাকে ছেড়ে দেয়া হবে ।কেউ জানবেও না যে তুমি বলেছ ।কেউ জানবে না ।Kindly বল । "

কিছুই বললাম না ।তারপর প্রচন্ড রাগ সামলাতে পারলাম না । বললাম -
-" শালা রাজাকার !!! তুই কি মনে করছ তুই কইবি আর আমি বলি দিমু ? শালা নিজেরে কি মনে করছ ? শুওরের বাচ্চা ! যা তোর পাকিস্তানি বাপেরে গিয়া বল যে আমি ইতার মা'রে ......... ।শালা পাকিস্তানি দালাল । "

আবার নিরবতা ।তারপর...... " ঠাস্ " আমার বাম গালে একটা থাপ্পর দিল লোকটা ।তারপর বলল -
-" শুন আরেকটা সুযোগ দিচ্ছি ভাল মত বলে দে তোদের কমান্ডার সাব্বির কই ? বল ।"
---" থুহ্ "
মুখ ভরা থুতু শালার মুখে মেরে দিলাম ।
লোকটা আবার একটা থাপ্পর দিল আর বলল -
- " রাফিক ইতারে নিয়া যা যায়া ইতার ঘাউরামি বাইর কর ।শালা মুক্তি পুঙ্গি.........পো তোর হ্যাডাম এবার তোর ............র ফুটা দিয়া ঢুকাম ।শালা মাদা......... । "
-" হা হা হা ......তুই কি আমার হ্যাডাম আমার ............র দিয়া ঢুকাবি দেখতে থাক এই রাইফেল এর বেয়নেট মুক্তি বাহিনি তোর কোন দিক দিয়া ঢুকায় ।আর বাইচা গেলেও তোর মরন আমি দেইখাই যামু ।তুই মরবি শালা ... । "
- " তাই নাকি ? অই কুত্তার বাচ্চারা কি করব আমি দেখমু ।রাফিক নিয়া যা ইতারে । "

এখানেই তার সাথে আমার শেষ কথা ।তবুও তার চেহারা আমি মনে রেখেছি ।তারপর রাকিক নামের লোকটা আমাকে বেয়নেট দিয়ে আমাকে খুচিয়ে খুচিয়ে নিয়ে গেল একটা রুমের কাছে ।তার পর কয়েকদিন আমার উপর দিয়ে কি গেল বলে বোঝান যাবে না ।কখন দিন কখন রাত কিছুই বুঝতে পারছিলাম না ।শুধু বুঝতে পারছি পেটে প্রচন্ড ক্ষিদে ।ডান আর বাম হাত আছে বলে মনে হচ্ছিল না ।পাজরের দুই একটা হাড় মনে হয় ভেঙ্গে গেছিল ।মুখের মধ্যে ভাঙ্গা দাতের টুকরো ।তারপর হঠাৎ একদিন মনে হল দরজা ভেঙ্গে কেউ ঢুকল ।তারপর আমার চোখের বাঁধন খুলে দেয়া হল । মনে হল আমার সামনে আমাদের কমান্ডার সাব্বির দাড়িয়ে আছে আর বলছে-
- " আর সমস্যা নাই ।চল ।বাংলাদেশ মুক্ত হইছে ।চল । "
তারপর একটা সুন্দর হাসির শব্দ ।একেবারে সাব্বির ভাই এর মত ।তারপর আর কিছু মনে নেই ।মনে হল অনেক যুগ পর চোখ খুললাম ।দেখি আমি হাসপাতালের বেড এ শুয়ে আছি ,চার দিকে আর অনেকে বসে আছে , শুয়ে আছে , হাটছে ...।
আমি একা ।তবুও অনেক কষ্টে বের হলাম । অনেক খোজ নিয়ে জানলাম সাব্বির ভাই মারা গেছেন হানাদারদের Ambush এ ।খারাপ লাগলো ।তার পর অনেক বছর কেটে গেল ।আমি সব দুঃক্ষ দুর্দশা কাটিএ উঠতে সক্ষম হয়েছি ।হঠাৎ একদিন টেলিভিশন এ সেই রাজাকার কে দেখলাম ।সে " জয় বাংলা " বলে চিল্লাচ্ছে ।রাগে সারা গা জলে উঠলো ।কিন্তু কিছুই করার নেই ।তবুও বললাম " তুই মরবিই " ।


২০১২ সাল মুক্তি যুদ্ধের ৪১ বছর কেটে গেছে ।অনেক কিছু পেয়েছি অনেক কিছু হারিয়েছি ।হঠাৎ একদিন একটি দৈনিকের মুল খবরে চোখ পরল ।লেখা আছে –

" সমাজ সেবকের নামধারি ৭১ এর রাজাকার এর ফাঁসি কার্যকর "

নিচে বিস্তারিত খবর আর একটা বড় ছবি দেয়া ।ছবিটা দেখে খবর আর পরতে ইচ্ছা করল না ।দেখলাম ছবিটা সেই রাজাকারের ।মনে মনে বললাম-
- " বলেছিলাম না তুই মরবি আর তোর মরণ আমি দেখে যাব ........."



আমার সপ্ন এখানেই শেষ ।তারপর ঘুম ভেঙ্গে গেল ।সপ্ন তাকে কেমন যেন বাস্তব মনে হল ।তখন মনে মনে বললাম-
- " সত্যিই যদি সব রাজাকারদের এই পরিনতি হত তাহলে বাংলাদেশ এর আজ এই অবস্থা হত না । "


আসলেই কি তাই ?




(বি.দ্রঃ সকল চরিত্র কাল্পনিক কারো সাথে মিলে গেলে লেখক দায়ী নয়)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ৩:৩২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছে থেকে আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৪৬

আমির হোসেন আমুকে দেখা একদিন....

২০০১ সালের কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটা আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ গ্রহণ করে আমার কোম্পানি টেকনিক্যাল অফারে উত্তীর্ণ হয়ে কমার্শিয়াল অফারেও লোয়েস্ট হয়েছে। সেকেন্ড লোয়েস্টের সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নারী বুকের খাতায় লিখে রাখে তার জয়ী হওয়ার গল্প (জীবন গদ্য)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩২



বুকে উচ্ছাস নিয়ে বাঁচতে গিয়ে দেখি! চারদিকে কাঁটায় ঘেরা পথ, হাঁটতে গেলেই বাঁধা, চলতে গেলেই হোঁচট, নারীদের ইচ্ছেগুলো ডিমের ভিতর কুসুম যেমন! কেউ ভেঙ্গে দিয়ে স্বপ্ন, মন ঢেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×