আমরা ঘুরতে গিয়ে কোন পর্যটক গাইডের সাহায্য নেয়নি। গুগল সার্চই ভরসা আর বের হওয়ার আগে হোটেলের লবিতে সমস্ত ট্যুরিষ্ট স্পটের তথ্য পাওয়া যায় যেখানে, সেই ডেস্কে মাঝেমাঝে জিজ্ঞেস করতাম। একদিন বিভিন্ন ট্যুরিষ্ট স্পটে ঘুরে যখন ফিরছিলাম তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ড্রাইভার এক জায়গায় এসে গাড়ি পার্ক করেছে, দেখি কি যেন আশেপাশে হাঁটছে, হাল্কা অন্ধকার হয়ে আসায় বুঝতে পারছিলাম না। ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম কি এসব। ড্রাইভার বললো পেঙ্গুইন।
বইয়ে পড়ে আমার অভিজ্ঞতায় ছিল পেঙ্গুইন মানেই সাদা জমাট বাঁধা বরফের উপর কালো কোট আর সাদা শার্ট পড়া ভদ্রলোক। কিন্তু এমন খোলা পরিবেশে যেখানে বরফের কোন পাত্তাই নেই এমনকি বরফ পড়েওনা সেখানে পেঙ্গুইন ঘুরে বেড়াচ্ছে আমার চোখের সামনে তা বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। গাড়ি থেকে নেমে দেখি আশে পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে পেঙ্গুইন, পাশেই সাগর, এখানের যে বিচ তার নাম ‘বোল্ডারস বিচ’।এই বিচেই বসবাস আফ্রিকান পেঙ্গুইনের।সন্ধ্যা হয়ে যাওয়াতে বোল্ডারস বিচে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ। মন খারাপ করে ভদ্রলোকদের ভালোমত না দেখেই হোটেলে চলে এলাম। কিন্তু বইয়ে পড়া আর টিভিতে দেখা ভদ্রলোকেদের এত কাছে থেকে তাদের না দেখে তো আর ফিরে আসতে পারিনা, তাই পরদিন আবার গেলাম তাদের দেখতে।
বিশ্বের ১৭ প্রজাতির পেঙ্গুইনের মধ্যে একমাত্র আফ্রিকান পেঙ্গুইনই একমাত্র পেঙ্গুইন যাদের জন্ম শুধু আফ্রিকাতেই হয়। ২০১০সালে তাদের বিপন্ন তালিকা থেকে সরানো হয়। প্রতিবছর ৬০হাজার দর্শক আসে এই আফ্রিকান পেঙ্গুইন দেখতে। এবারের ৬০হাজারের মধ্যে আমরাও আছি।
এই কাঠের ব্রিজ দিয়েই যেতে হয় সাগর পাড়ে পেঙ্গুইন দেখতে
বোল্ডারস বিচে আছে একটি তথ্য কেন্দ্র যেখানে এই আফ্রিকান পেঙ্গুইন সম্পর্কে সমস্ত তথ্য পাওয়া যায়। আছে টিকেট কেটে বিচে গিয়ে পেঙ্গুইন দেখার ও তাদের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ। আমরা টিকেট কেটে ভেতরে যাওয়ার পর দেখি পর্যটকেরা হেঁটে সাগর পাড় পর্যন্ত যাওয়ার জন্য কাঠের ব্রিজ তৈরি করা আছে, যাতে পর্যটকের জন্য পেঙ্গুইনদের কোন সমস্যা না হয় তাই এই ব্যবস্থা।
ব্রিজ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখি সাদা শার্ট আর কালো কোট পড়া ভদ্রলোকেরা মনের আনন্দে সাগরের পানিতে সাঁতার কাটছে, আবার অনেকে দল বেঁধে লাইন ধরে এদিক সেদিক হাটছে, অনেকে আবার সাগরের পানি থেকে উঠে সাগর পাড়ের বালিতে বসে পর্যটকেদের দেখছে, অনেকে সাগর পাড়ের ঝোপঝাড়ে চলে যাচ্ছে।সাগর পাড়েই তাদের জন্য আছে লাইন দিয়ে প্লাস্টিকের কন্টেনার দিয়ে তৈরি ছোট ছোট ঘর। অনেক পেঙ্গুইন সেই ঘরের ভেতর বসে আছে তাদের বাচ্চা নিয়ে আবার অনেক পেঙ্গুইন আছে দুজনে মিলে, আবার কেউ একা একা। অনেক পেঙ্গুইন দেখলাম মুখে করে খড় কুটা এনে ডিম পাড়ার জন্য বাসা বানাচ্ছে, অনেক পেঙ্গুইন আবার ডিমে তা দিচ্ছে।
পেঙ্গুইনেরা নিজেদের মধ্যে কি যে কথা বলে তাতো আর আমরা বুঝিনা কিন্তু তাদের কথার শব্দে চারদিক মুখরিত। অনেকক্ষণ সাগর পাড়ে পেঙ্গুইনদের সাথে কাটিয়ে উপরে এসে আবার দেখলাম ঝোপের ভেতর দিয়েও কাঠের ব্রিজ করা আছে, সেই ব্রিজের উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে দুই পাশের ঝোপের ভেতর পেঙ্গুইনদের দেখা যায়। ব্রিজের দুইপাশে নেট দেওয়া আছে হাল্কা উঁচু করে তবে ইচ্ছা করলে যেকেউ নেটের ফাঁক দিয়ে অথবা নেটের উপর দিয়ে পেঙ্গুইন ধরতে পারে। আমার ছেলে যেই ধরতে গেল অমনি তার হাতে একটা পেঙ্গুইন কুট করে কামড় দিয়ে দিল।
উনি ডিমে তা দিচ্ছিলেন, আমাদের দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন
এই হচ্ছে থাকার ঘর আর আরেকজন ডিমে তা দিচ্ছে
পেঙ্গুইন থাকার জন্য ব্যবস্থা
দুইপাশের ঝোপের ভেতর দিয়ে হাঁটার জন্য কাঠের ব্রিজ
অসম্ভব সুন্দর কিছু সময় ওখানে কাটিয়ে ফিরে এলাম। ব্রিজ থেকে সাগর বেশ দূরে তাই আমার ক্যামেরায় এরচেয়ে বেশি বড় করে আনতে পারিনি পেঙ্গুইনদের। একদম উপরের ছবিটি নেট থেকে নেওয়া আর বাকি সব আমার ক্যামেরায় ধারন করা।
এখানে গাড়ি পার্ক করে যেতে হয় সাগর পাড়ে পেঙ্গুইন দেখতে। কিছু পেঙ্গুইন এখানেও ঘুরাঘুরি করে
ফিরে যাচ্ছি যাচ্ছি পেঙ্গুইন দেখে
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:১৩