ছেলের জন্মদিন উপলক্ষে প্রায় চারমাস আগে দুইটি খরগোশ উপহার দিয়েছিলাম। সেই খরগোশ পেয়ে তার সেকি আনন্দ। খরগোশের জন্য ঘর বানানো হল। সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে সে নিজের হাতে তাদের খাবার দিয়ে যায়। দারুয়ান মাইকেলকে খুব করে বলে যায় যাতে একটু পর পর তাদের খাবার দেয়। স্কুল থেকে এসে গাড়ি থেকে নেমেই আগে তাদের কোলে নিয়ে আদর করে। সন্ধ্যার আগে বাসার নিচে নেমেই খরগোশকে ঘর থেকে বের করে আমাদের সবজি বাগানে নিয়ে যায়। তাদের সাথে ঘন্টা খানেক দৌড়াদৌড়ি করে, খরগোশ মনের আনন্দে ঘাস খায়,লাফায়। তারপর অন্ধকার হওয়ার আগেই খরগোশ নিজেই তাদের ঘরে চলে আসে।
মাস খানেক আগে মাইকেল ফোন দিয়ে বলে খরগোশের বাচ্চা হয়েছে। আকিফ দুপুরের খাবার খাচ্ছে তখন। খাবার ফেলে দৌড়ে নিচে নেমে গেল বাচ্চা দেখতে। ছবি তুলে নিয়ে এল, তার খুশি তখন আরো বেড়ে গেল। আমি বাচ্চা দেখতে যায়নি। পরদিন সকালে আকিফকে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার আগে বাচ্চা দেখতে গেলাম, কিন্তু খরগোশের ঘরে বাচ্চা নেই। সবাই মিলে অনেক খুঁজেও বাচ্চা পাইনি। বাচ্চা কোথায় গেল কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না। আকিফের স্কুলের সময় হয়ে গেল তাই তাকে স্কুলে নামাতে গেলাম, বললাম যে ফিরে এসে বাচ্চা খুঁজে বের করব।
স্কুল থেকে এসেই শুরু হল বাচ্চা খোঁজার অভিযান। আমার পুরা বাহিনী বাসার সমস্ত কম্পাউন্ডে বাচ্চা খুঁজে বেড়াচ্ছে কিন্তু কিসের কি, বাচ্চার পাত্তাও নেই। মাইকেল নাকি অনেক আগে খরগোশের ঘরে তাদের গর্ত খুঁড়তে দেখেছিল, কিন্তু এখন সেই গর্তও নাই। মাইকেল কি মনে করে তাদের ঘরের যেখানে গর্ত ছিল সেখানে মাটি সরাতে লাগলো। কিছু মাটি সরানোর পর গর্তের মুখ বের হল, মাইকেল আরো বেশি করে মাটি সরিয়ে দেখে অনেক বড় গর্ত, আর উঁকি দিয়ে দেখে ভেতরে বাচ্চা। আমি বাচ্চা দেখার আগেই মা আর বাবা খরগোশ মিলে মাইকেলের হাতের উপর বসেই তাদের পা দিয়ে আবার গর্ত ঢেকে দিল। গর্তের ভেতর কয়টা বাচ্চা, কত বড়, দেখতে কেমন কিছুই জানা হলনা। খরগোশ খাবার খেয়ে গর্তের মুখের কাছেই শুয়ে থাকে, পাহারা দেয়, যাতে আমরা গর্তের মুখ খুলে বাচ্চা বের করতে না পারি।
সেই যে গর্তের মুখ বন্ধ করেছে বাবা, মা আর খুলে না। তারা খাবার খায়, বাইরে এসে বাগানে ঘাস খায় কিন্তু বাচ্চার কোন খবর নাই। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি কখন বাচ্চা দেখতে পাব। অবশেষে অনেকদিন পর দেখি খরগোশ নিজেই গর্তের মুখ খুলে দিয়েছে আর বাচ্চারা গর্তের মুখে বসে থাকে, আমাদের দেখলেই আবার গর্তের ভেতর চলে যায়।কয়টা বাচ্চা আছে তা আর জানা হয়না।একদিন দেখি সব বাচ্চা গর্তের বাইরে চলে এসেছে, সবাই মিলে খাবার খাচ্ছে। মোট তিনটা বাচ্চা। এখন তারা আর গর্তের ভেতর যায় না, আমাদের দেখে ভয়ও পায়না। এখন আমাদের খরগোশের ৫ জনের বিশাল পরিবার।
সামান্য পশুও যেখানে নিজের বাচ্চাকে বাইরের সমস্ত বিপদ থেকে রক্ষার জন্য সর্তক থাকে আর সেখানে আমরা মানুষ হয়েও নিজের সন্তানকে নিজেই হত্যা করি।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৩৩