সময়টা ১৯৯৭! আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ! ট্রফি উচিয়ে ধরে আকরাম খানরা আজকের তামিম সাকিবের আগমনের দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছিলেন!
বাবা-দাদু সাদাকালো নিপ্পন টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখতেন! আমার দাদু ক্রিকেটটা খুব ভালই বুঝতেন, সে সময়টা ক্রিকেটকি জিনিস আড়স্ত করতে পারি নি আমি! ক্লাস ফাইভে কি সিক্স থেকে ক্রিকেটটা বুঝতে শিখে গেছি! স্কুলে হাফ টাইমে, কিনবা পেট ব্যাথার উছিলা দিয়ে মাঠে খেলতে গিয়ে #গৌরাঙ্গ_দাদামণির কম মার খাই নি, আবার বাসায় ঢুকে মার মাইর খাইনি এমন দিন খুব কমই গেছে জীবনে! স্কুল ছুটির পর এলুম্যুনিয়াম ফ্যাক্টরীর সামনে চায়ের দোকানে পানি খাওয়ার উছিলায় রঙ্গিন টিভির পর্দায় ঘন্টার পর ঘন্টা ক্রিকেট দেখেছি স্কুল জামা পড়ে, আর শচীন, লারা, গ্রিলক্রিস্ট, ওয়াসিম, জয়সুরিয়া, বেভান, ওয়ার্ন, গাঙ্গুলি, সাইদ আনোয়ার, ক্যারেস্টেন, ডোনাল্ড, জন্টি রোডস্ এ এতটাই ডুবে যেতাম যে জাস্ট টাইমে কোনদিন বাসায় ঢুকতে পারি নি!
সাল ৯৯!বাংলাদেশ প্রথমবার বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে! আর ততোদিনে আমাদের বড় রঙ্গিন টিভি কেনা হয়ে গেছে! ছোট চাচার রুমে টিভি শিফট করলাম আর দল বেধে পরিবারের সবাই সেই মজা করে টিভিতে ক্রিকেট দেখা! ইশ্ আজকের প্রজন্মের কাছে সেটা দুর্বোধ্য!
বাবার মুখে শুনেছি এবং দেখেছি কিছুটা- একটা সময় বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলাটা চট্টগ্রাম নির্ভর ছিলো! আকরাম খান, ইকবাল খান, নোবেল, নান্নু সহ আরো অনেকেরই নাম আগেই শোনা হয়ে গেছে। এমনও শুনেছি সেসময়কার ড্যাশিং ব্যাটসম্যান নান্নুকে বিশ্বকাপ দলে অন্তর্ভুক্তির জন্য চট্টগ্রামে মিছিল সমাবেশ হয়েছিলো! ততদিনে নাম জানা লোকগুলোর চেহারাটাও চিনে নিয়েছি। আজও বিশ্বকাপে পাকিস্তান কে হারানোর স্মৃতিটি জ্বল জ্বল করে!এই নামগুলোকে ভালবাসতে গিয়েই সেদিন ক্রিকেটটাকে অজান্তে ভালবেসেছে আমার মতো লাখ লাখ শিশু কিশোর! তারপর নিজের ক্রিকেটার হবার স্বপ্ন এবং স্বপ্ন ভঙ্গের গল্প...... ()
আকরাম, আমিনুল, দুর্জয়, বাশার,পাইলট, সুজন, ফারুক, আতাহার, রফিক, অপি, মনজুরুল, নান্নুদের ক্রিকেট খেলার ইতিহাস কষ্টে মোডানো! তখন ট্রান্সপোর্ট ফ্যাসিলিটি, মিল এলাউন্স, বিলাশবহুল হোটেল, জিমনেসিয়াম, সুইমিংপুল, ব্র্যান্ডেড স্পোর্টিং কিটস্, ফিজিও, এসব ছিলো না! তারপরও তারা ক্রিকেট টা খেলে গেছেন ভালবেসে! এক আশরাফুল -আফতাব, নাজিমউদ্দিন, শাহরিয়ার, রাজিন সালেহ, মাশরাফিরা(মাশরাফি এখনো দপটের সাথে খেলছে) এসে বাংলার ক্রিকেটটাই খোলনচলে পাল্টে দিলো! অথচ ক্রিকেট ক্রেজ তখনো ছিলো! ঘরের টেবিলে রাখা টাটকা বাসি দৈনিক আজাদী থেকে নাপিতের সেলুনে থাকা ইত্তেফাফ এলাকায় এক আঙ্কেল এর দোকানে নেওয়া ইনকিলাব সব ঘাটাঘাটি করে শুধু খেলার সাদাকালো পেপারটা বের করতাম.......আহঃ
দেখতে দেখতে বিশটা বছর কেটে গেলোআজকের সমীহ জাগানিয়া বাংলাদেশ দল তাদের ত্যাগের ফল! অথচ আজকে সবচেয়ে বেশী বোধহয় কটাক্ষ করি সেই সুজন, বাশার, নান্নু কিনবা আকরাম কে।
বিসিসিবি থেকে আজকের বিসিবি! বিশ্বের চতুর্থ ধনী ক্রিকেট বোর্ড। অথচ একটা সময় এদের কিছুই ছিলো না! সাবের হোসেন চৌধুরীর একটা বড় অবদান ছিল ক্রিকেট প্রান্তিক প্রসারে। দক্ষ সংগঠকও বটে!
তবে একটা সত্য কথা বিসিবি বস্ হিসাবে পাপন এর মতো ক্রিকেট জ্ঞানসমৃদ্ধ, দুরদর্শি, বিনয়ী, কড়া অভিবাবক, টোঠকাটা, উদার মনের মানুষ বাংলাদেশ ক্রিকেট এ আর আসবে কিনা জানি না।(আমার ব্যাক্তিগত অভিমত)
সাকিব তামিম মুশফিক মাহমুদউল্লাহরা অনেক বড় সুপারস্টার বাংলাদেশের ক্রিকেটে। তারা বাংলাদেশ কে আরো উচুতে নিয়ে যাচ্ছে দিনদিন! আর পুরস্কারগুলো তারা পায় হাতে নাতে! কেউ গাড়ি বাড়ি, প্লট, নগদ নারায়ণ, প্রধানমন্ত্রী কাছে সরাসরি এক্সেস সহ আরো কত কি!
আজ পাপন সাহেবের প্রেস মিট দেখে ক্লিয়ার হলো - লোকটার ছত্রিশ ইঞ্চি একটা কলিজা আছে! ১১ টা পয়েন্ট এর ব্যাখ্যা দিলেন গুনে গুনে যার একটাও আনইথিক্যাল নয়। কারন মোস্ট অফ ইস্যু নিয়ে বিসিবি কাজ শুরু করেছে আরো আগে থেকেই।
শুনেছিলাম ৮৩,৯২ এ ইন্ডিয়া পাকিস্থানের ক্রিকেটাররা বিশ্বকাপ জিতার পর তাদের জাতীয় বীর খেতাব দিয়েছিলো পাশাপাশি একটা স্ট্রং বেতন কাঠামো, দাড় হয়েছিলো! এওয়ার্ড রিওয়ার্ড তো ছিলোই, ঠিক উল্টো ৯৯ বিশ্বকাপ এ বাজে পারফরম্যান্স এর কারণে কিছু পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা ধোলাই খেয়েছিলো তাদের বুনো সমর্থকদের কাছে! ২০০৭ এ শচিন দ্রাবিড়দের ঘর ভাঙচুর হয়েছিল! আররে! আমাদের গুলোতো পাবলিক সেন্টিমেন্ট বুঝে না!
মনে হচ্ছে সাকিব-তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ সহ ডিপিএল, এনসিএল, বিপিএল খেলা মোট ২০০+ ক্রিকেটাররা আমাদের ১টা বিশ্বকাপ, ১টা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, ২টা এশিয়া কাপ জিতিয়ে এনেছেন তাই ওদের আরো খায় খায় করার সুযোগ করে দিতেই হবে! #তাইনা_ক্রিকেটাররা?অর্থের প্রয়োজন অবশ্যই আছে! বিনিময়ে দেশকে কি দিচ্ছি সেটা ইম্পরট্যান্ট! বিচ্ছিন্ন দু এক জনের কথা নাই বা বললাম!
যাইহোক, পরিশেষে বাংলাদেশ ক্রিকেট এগিয়ে যাক, ক্রিকেট বেচে থাকুক হৃদয়ে -মগজে!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১২:১৪