আজকাল সিনেমাগুলো থ্রিডি কিংবা আইম্যাক্সে রিলিজ না দিলে বক্স অফিস হিট করে না।হালের যতো অ্যাকশান হিরো কিংবা কমিকস ক্যারেক্টার রয়েছে তাদের উপর ভিত্তি করে প্রতিবছর বের হচ্ছে ধুম ধুম, মার মার, কাট কাট টাইপ সিনেমা।মানুষ খাচ্ছেও তা, এইতো কিছুদিন আগেই দ্যা অ্যাভেন্জারস মুভিটি ওপেনিং উইকএন্ডে খোদ হলিউডেই ২০০ মিলিয়ন ডলার ব্যবসা করে রেকর্ড গড়েছে। মুভিটির সর্বমোট বাজেট ছিলো ২২০ মিলিয়ন ডলার।আর মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই তা আয় করেছে প্রায় ৩৮৪ মিলিয়ন ডলারের মতো।সুতরাং প্রযোজকদের কতো লাভ হতে পারে একটু আন্দাজ করে দেখুন।
এর আগের রেকর্ডটি ছিলো হ্যারি পটার সিরিজের সর্বশেষ মুভিটির যার ইনকাম ছিলো ওপেনিং উইকএন্ডে ১৬৯.২ মিলিয়ন ডলার।
একনজরে ওপেনিং উইকএন্ডের ইনকামের রেকর্ডের হিসাবটা একটু দেখে নেই,
১।The Avengers, $200.3 million
২।Harry Potter and the Deathly Hallows: Part 2, $169.2 million
৩।The Dark Knight, $158.4 million
৪।The Hunger Games, $152.5 million
৫।Spider-Man 3, $151.1 million
৬।The Twilight Saga: New Moon, $142.8 million
৭।The Twilight Saga: Breaking Dawn—Part 1, $138.1 million
৮।Pirates of the Caribbean: Dead Man's Chest, $135.6 million
৯।Iron Man 2, $128.1 million
১০।Harry Potter and the Deathly Hallows: Part 1, $125 million
উপরের তালিকার মুভিগুলোর জেনার কিংবা কমন মেকানিজমগুলো একটু খেয়াল করুন।যেসব মুভিতে স্পেশাল ইফেক্টের ছড়াছড়ি সেগুলোই এই টপ ১০ এ রয়েছে। তবে সব স্পেশাল ইফেক্ট মুভিই যে মানুষ খাবে সেরকম ধরাবাঁধা কিছু নেই।আসলে মোস্ট অ্যান্টিসিপেটেড মুভিগুলোই নরম্যালি বক্স অফিস মাতিয়ে রাখে।আর সেখানে স্পেশাল ইফেক্টসের একটা বড়োসড়ো ভূমিকা রয়েছে সেটাতো সহজেই অনুমেয়।
এবার অল টাইম ইউ.এস আর ওয়ার্ল্ডওয়াইড বক্স অফিস রেকর্ডের দিকে একটু তাকাই,
ইউ.এস:
১।Avatar: $760,507,625
২।Titanic: $658,160,411
৩।The Dark Knight: $533,345,358
৪।Star Wars: Episode I -The Phantom Menace: $474,536,026
৫।Star Wars: $460,998,007
ওয়ার্ল্ডওয়াইড:
১।Avatar: $2,782.3 মিলিয়ন ডলার
২।Titanic: $2,175.9 মিলিয়ন ডলার
৩।Harry Potter and the Deathly Hallows Part 2: $1,328.1 মিলিয়ন ডলার
৪।Transformers: Dark of the Moon: $1,123.7 মিলিয়ন ডলার
5: The Lord of the Rings: The Return of the King : $1,119.9 মিলিয়ন ডলার
খেয়াল করুন, উভয় টপ ফাইভ লিস্টেও সেই কমন প্যাটার্নটি দেখতে পাই।
এখনকার হলিউডের ম্যাক্সিমাম মুভিতেই স্পেশাল ইফেক্টের বহুল ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়।কখনো কখনো কাহিনির সাথে সামন্জ্ঞস্য রেখে কখনো বা মাত্রারিক্তভাবে স্পেশাল ইফেক্ট ব্যবহৃত হচ্ছে।এর পজিটিভ নেগেটিভ দুই সাইডই রয়েছে।আজকে আর সেই আলোচনাই যাবো না।আজকে বরং একটু অন্য কিছু নিয়ে কথা বলি।
স্পেশাল ইফেক্ট মানেই সায়েন্স ফিকশান মুভি। আপনারা কি জানেন, এই সায়েন্স ফিকশান মুভির সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে? প্রথম কবে প্রথম সায়েন্স ফিকশান মুভি তৈরি হয়েছিলো? আজকে সেই গল্পই করছি।
মেইনস্ট্রীম সায়েন্স ফিকশান বলতে কি বুঝি? সোজা কথায় বলতে গেলে বলা যায়, এলিয়েন, টাইম ট্রাভেল, রোবট, সাইবর্গ, গ্রহ নক্ষত্র, কিংবা বিভিন্ন গ্রহে অভিযান, মাল্টিপল ইউনিভার্স আরো কতো কি !!!!! গল্পের বই কিংবা মুভি যাই বলি না কেন ঘুরে ফিরে এইসব ঘটনাগুলোকে ভিত্তি করেই সেগুলো তৈরি হচ্ছে।সায়েন্স ফিকশান নিয়ে এই পর্যন্ত অগণিত মুভি তৈরি হয়েছে, কোনো সায়েন্স ফিকশান মুভির নাম বলতে গেলেই প্রথমেই আসবে স্ট্যানলি কুবরিকের ২০০১: এ স্পেস ওডিসির কথা, শুধু সাই ফাই জেনারই না, গোটা মোশান পিকচার হিস্টোরিতে এটি একটি ল্যান্ডমার্ক মুভি।এছাড়া স্টার ওয়ার্স কিংবা স্টার ট্রেকের নামতো আসবেই আসবে।
আপনাদের শুনতে বেশ অবাক লাগবে, এই সায়েন্স ফিকশান মুভির শুরুটা কিন্তু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় বহু বহু বছর আগে, সেই নির্বাক যুগে !!! ভাবা যায়????
কি ছিল সেই মুভি? একটু ভেবে দেখুনতো পারেন কিনা? যারা একটু মুভির খোঁজ খবর ভালোই রাখেন তাদের হয়তো মেট্রোপলিস এর নাম মাথায় আসতে পারে।আমার মাথাতেও তাই এসেছিলো।আসলে উত্তরটা সঠিক নয়।প্রথম সায়েন্স ফিকশান মুভির নাম ছিলো, A Trip to the Moon যা ১৯০২ সালের ৪ অক্টোবর বের হয়েছিলো।এটি একটি ফ্রেন্চ শর্ট ফিল্ম যার অরিজিনাল টাইটেল ছিলো "Le voyage dans la lune"। পুরা মুভিটির রানিংটাইম মাত্র ১৫ মিনিট। Jules Verne এর From the Earth to the Moon এবং H. G. Wells এর The First Men in the Moon এই দুইটি পপুলার নভেলকে ভিত্তি করে মুভিটি বানানো হয়েছিলো। মুভিটির স্ক্রিপ্ট আর পরিচালনা দুইটাই করেছিলান Georges Méliès, এই Georges Méliès সম্পর্কে একটা মজার তথ্য আপনাদের কাছে শেয়ার করি, ১৮৯৬ সাল থেকে শুরু করে ১৯১৩ সাল পর্যন্ত সর্বমোট ৫৫৫ টি শর্টফিল্ম বানিয়েছেন। চিন্তা করে দেখুন একবার !!!!!!
Georges Méliès:
A Trip to the Moon মুভিটির ফ্রেমরেট ছিলো ১৬ ফ্রেম পার সেকেন্ড। গোটা মুভিটিতে চমৎকার কিছু ইনোভেটিভ অ্যানিমেশান কিংবা স্পেশাল ইফেক্টস রয়েছে।হয়তো আজকের এই যুগে তা দেখতে হাস্যকর লাগতে পারে, কিন্তু যখন মনে হবে এটি ১০৯ বছর আগে বানানো, তখন অদ্ভুত এক শিহরন বয়ে যাবে শরীর বেয়ে।
মুভিটির প্লট খুবই সাদামাটা, কিছু জ্যোতির্বিদ ঠিক করে তারা চাঁদে যাবে, এবং চাঁদে যাওয়ার জন্য একটা স্পেসশিপও বানিয়ে ফেলে চটপট।তারপর চাঁদে গিয়ে অদ্ভুত এক এলিয়েন প্রজাতির দেখা পায়।এরপর সেই এলিয়েনরা সেই জ্যোতির্বিদদের তাড়া করে।তাদের তাড়া খেয়ে জ্যোতির্বিদরা সেই স্পেসশিপে করে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে, আসার সময় এক এলিয়েন সেই স্পেসশিপে আটকে যায়।তাকে সমেত্ই স্পেসশিপ সাগরের বুকে আছড়ে পড়ে।এরপর চন্দ্রাভিযান জয়ের একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই মুভিটি শেষ হয়ে যায়।
জ্যোতির্বিদরা চাঁদের মাটিতে:
মুভিটি যখন রিলিজ করা হয় তখন তা সাদা-কালো ও রঙ্গীন দুই ভার্সনেই রিলিজ করা হয় এবং পরে তা বিক্রি করা হয়েছিলো ।আর সেই কালার ভার্সনটি ছিলো হাতে রং করে বানানো। মুক্তির কিছু বছর পরে সেই রঙ্গীন ভার্সনটি হারিয়ে যায়।পরে ১৯৯৩ সালে Filmoteca de Catalunya নামক একটি স্প্যানিশ ফিল্ম আর্কাইভ এটিকে অলমোস্ট ডিকম্পোজড অবস্থায় উদ্ধার করে, উল্লেখ্য সেটি ছিলো মুভিটির একমাত্র হদিশ পাওয়া পূর্ণ কোনো কপি। তারপর ১৯৯৯ সাল থেকে এটিকে আবারো ঠিকঠাক করার জন্য পুনুরুদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু হয়, এবং প্রায় ১১ বছরের চেষ্টায় এটিকে পুরোপুরি রিস্টোর করা হয়।মুভিটির প্রায় ১৪০০০ ফ্রেমকে একটার পর একটা ডিজিটাইজ করে ২০১১ সালের Cannes Film Festival এ আবারো মুক্তি দেয়া হয়। মুভিটির অনেকগুলো ফ্রেমই সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো, পরে সেগুলোকে সেই সাদাকালো ভার্সন থেকে কেটে নিয়ে পরে তাকে আবার রং করে অরিজিনালটার সাথে জোড়া লাগানো হয়।সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে কিছুদিন আগে এটির ব্লুরে ভার্সন বের হয়েছে।আমি সেই ব্লু রে ভার্সনটিই দেখেছি।একবার চিন্তা করে দেখুন, ১০৯ বছরের আগের জিনিস ব্লুরে ভার্সনের দেখছি !!!!!
এছাড়া মুভিটির এন্ডিং সিকোয়েন্সটি ২০০২ সালের আগ পর্যন্ত হারানো অবস্থায় ছিলো।পরে ফ্রান্সে কাকতালীয়ভাবে এটি ওয়েল প্রিজার্ভড অবস্থায় খুঁজে পাওয়া যায়।পরে সেই এক্সটেন্ডেড ভার্সনটি Pordenone Silent Film Festival এ ২০০৩ সালে মুক্তি পায়।
এই মুভিটি দেখতে গিয়ে গোটা সময়টুকু আমার কাছে খুবই অবাক লেগেছে।কতো আগের একটা জিনিস, মুভিটি দেখতে গিয়ে ভাবছিলাম, যিনি এটিকে বানিয়েছেন কিংবা যারা এতে অভিনয় করেছেন তাদের সেইসময় অনুভূতি কেমন ছিলো, সায়েন্স ফিকশান কিংবা গোটা মোশান পিকচার নিয়ে তাদের চোখে কি স্বপ্ন ছিলো? তারা কি কখনো ভেবেছিলেন, মুভিতে তাদের সেই কল্পনার ৬৭ বছর পরে মানুষ আসলেই সত্যি সত্যি চাঁদে যাবে?এই মুভির ব্রিলিয়ান্স লেভেল কতোটা আমাকে মুগ্ধ করেছে বলে বুঝাতে পারবো না। মুভিটি দেখার সময় পরিচালকের কল্পনাশক্তি আমাকে ভীষন আবেগপ্রবন করে দিয়েছিলো, চাঁদের বুকে সেই তুষারপাত কিংবা যখন উল্কাটি চাঁদটিকে অতিক্রম করছিলো, কিংবা সাগরের বুকে সেই রকেটটির আছড়ে পড়া----কি অদ্ভূত রকমের সুন্দর। তবে একটু দৃশ্যের কথা আমি আলাদা করে বলতে চাই, আমার দেখা ওয়ান অফ দ্যা মোস্ট ব্রিলিয়ান্ট এন্ড আউটস্ট্যান্ডিং কনসেপ্ট, আর সেটি হলো রকেটটি গিয়ে যখন চাঁদের উপর ল্যান্ড করে---সেই মুহূর্তটুকুর কোনো তুলনা হয় না।সেটির কি অসাধারন দৃশ্যায়ন !!!! না দেখলে বোঝানো যাবে না !
চাঁদের বুকে আছড়ে পড়লো সেই রকেট:
চাঁদের বুকে ঘুমাচ্ছে জ্যোতির্বিদরা, মহাকাশের তারারাও দেখছে তাদের:
আমি জানি না, এই শর্টফিল্মটি আপনাদের কেমন লাগবে।হয়তো এটির মেকিং দেখে আপনাদের হাস্যকর কিংবা বিরক্তিকর লাগতে পারে। কিন্তু একবার জাস্ট ভেবে দেখুন,আজ থেকে ১০৯ বছর আগে মানুষজন কি চমৎকার জিনিসই না বানিয়েছিলো।এই মুভিটি নিঃসন্দেহে সায়ে্ন্স ফিকশান কিংবা স্পেশাল ইফেক্টসের জনক।এই মুভিটি নিঃসন্দেহে একটি ইম্মোরটাল ক্ল্যাসিক।আজ থেকে ১০৯ বছর পরেও সেসময়কার উত্তরাধুনিক মানুষগুলো এটিকে দেখে দাঁড়িয়ে স্যালুট দেবে----বাজী রেখে বলতে পারি।
পরিশেষে মুভিটি সম্পর্কে দারুন কিছু ইনফো শেয়ার করে পোস্টটি শেষ করতে চাই:
১।After finishing work on the film, Georges Méliès intended to release it in America and thereby make lots of money. Unfortunately, Thomas A. Edison's film technicians had already secretly made copies of the film, which was showed across the USA within weeks. Melies never made any money from the film's American showings, and went broke several years later (while Edison made a fortune on the film.)
২।One of the earliest known science fiction films. A segment near the end was animated, making this one of the first animated films, too.
মুভিটির আইএমডিবি রেটিং ৮.২/১০, আমার পার্সোনাল রেটিং ১০/১০।ভালো লাগুক কিংবা না লাগুক, শর্টফিল্মটি দেখে ফেলুন, ইতিহাসের প্রথম সায়েন্স ফিকশান মুভি দেখে ইতিহাসেরই সাক্ষী হোন।
ডাউনলোড লিংক:
কালার ভার্সন:
Click This Link
সাদাকালো ভার্সন: