কোনো ভূমিকায় যাবো না।প্রথমেই Cinema Paradiso (1988) মুভিটির পুরষ্কারের তালিকাটা একনজর দেখে নেই:
১।ইতালির এই মুভিটি Best Foreign Language Film ক্যাটাগরীতে ১৯৯০ সালে অস্কার জিতেছিলো।
২।BAFTA Awards এ সর্বমোট ১১ টি বিভাগে নমিনেশন পেয়ে Best Actor, Best Screenplay এবং Best Film not in the English Language সহ পাঁচটি ক্যাটাগরীতে পুরষ্কার জিতেছিলো।
৩।কান চলচ্চিত্র উৎসবে Palme d'Or বিভাগে নমিনেশন পেলেও জিতে নিয়েছিলো Grand Prize of the Jury পুরষ্কারটি।
৪।Golden Globes অ্যাওয়ার্ডস অনুষ্ঠানে জিতেছিলো Best Foreign Language Film এর পুরষ্কারটি।
৫।এছাড়া Argentinean Film Critics, Awards of the Japanese Academy,Cleveland International Film Festival, ফ্রান্সের বিখ্যাত César Awards, Directors Guild of America, European Film Awards,London Critics Circle Film Awards সহ বিভিন্ন নামিদামি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের বিভিন্ন ক্যাটাগরীতে এটি নমিনী এবং পুরষ্কৃত হয়।
এই যখন তার ক্রিটিক্যালি অ্যাক্লেমেশানের লিস্টি, মুভিটা কেমন হবে তা নিশ্চয়ই আর বলে দেয়া লাগবে না।এককথায় বলতে গেলে বলতে হয়, আমার দেখা সেরা মুভিগুলোর তালিকার খুব উপরের আসনে এই মুভিটা আজীবন থাকবে।এতোটা জীবনধর্মী আর অনবদ্য মুভি আমি খুব কমই দেখেছি।মুভিটির আইএমডিবি রেটিং ৮.৫, আর টপ ২৫০ তালিকায় ৭৩ নাম্বারে রয়েছে।
মুভিটি ইতালিয়ান ভাষায় নির্মিত।তবে আমার ব্যাক্তিগত ধারণা, এটি যদি হলিউডে নির্মিত হতো তাহলে মুভিটার সেই মর্মস্পর্শী আবেগ বা জাদুটা অবশ্যই ফিকে আর পানশে লাগতো।ইউরোপিয়ান মুভিগুলোর সেই স্টাইল এই মুভিটিতে টোটালি একটা আলাদা মা্ত্রা যোগ করেছে।
মুভিটির রানিংটাইম প্রায় ১৫৫ মিনিটের মতো,মানে প্রায় আড়াই ঘন্টার কাছাকাছি।অথচ অসাধারন স্টোরিটেলিংয়ের কারণে গোটা সময়টা মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখেছি।একজন ফিল্মমেকারের ছোটোবেলার কাহিনী থেকে
মুভিটির যাত্রা শুরু।সেই ফিল্মমেকারের নাম Salvatore Di Vita,ডাকনাম টোটো।ছোটোবেলায় তার সময় কাটতো গির্জার ফাদারকে সঙ্গ দিয়ে,টোটোর বাবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শহীদ হন।ছোটো একটি মেয়েকে নিয়ে টোটোর মা খুব কষ্ট করে দিন কাটাচ্ছিলো। ছোটোবেলা থেকেই সিনেমাজগত নিয়ে ছিলো টোটোর সীমাহীন আগ্রহ।আর সিনেমাহলের প্রজেকশনিস্ট আলফ্রেডোর সাথে ছিলো দারুন ভাব।সময় পেলেই সেখানে ছুটে যেতো আর নানানরকম দুষ্টামি করতো আলফ্রেডোর সাথে।আলফ্রেডো ও তাকে খুবই স্নেহ করতো।মূলত ফিল্মমেকার হওয়ার পিছনের মূলবীজটি কিন্তু এই আলফ্রেডোই বপন করে দেয় সেই ছোট্ট টোটোর মনে।আলফ্রেডোর কাছ থেকে মুভি প্রজেকশানের প্রসেসটাও টোটো শিখে নেয়।হঠাৎ একদিন একটি দূর্ঘটনায় আগুন লেগে সেই হলটি পুড়ে যায়, এবং মারাত্মক আহত হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারায় আলফ্রেডো।এরপর স্থানীয় এক ধনী ব্যাক্তি সেই হলটি কিনে নেন এবং নতুন করে সবকিছু শুরু করেন।আলফ্রেডো আর টোটো ছাড়া মুভি প্রজেকশান আর কেউ জানতো না।কিন্তু আলফ্রেডো তো অন্ধ, তাই ছোট্টো টোটোর কাঁধেই ভার পড়ে মুভি প্রজেকশানের।সিনেমাহলের নতুন নামকরণ হয় "সিনেমা প্যারাডিসো"।আর সেই সিনেমাহলটি হয়ে পড়ে স্থানীয় অধিবাসীদের সবচেয়ে মজাদার বিনোদনের মাধ্যম।মাঝে মাঝে আলফ্রেডো এসে টোটোর সাথে সময় কাটাতো।আস্তে আস্তে টোটো বড়ো হতে থাকে।টোটোর জীবনে প্রেম আসে।কিন্তু পছন্দের মেয়েকে কিভাবে তার অনুভূতির কথাগুলো বলবে? আলফ্রেডোর কাছে সাহায্য চায় সে।ক্রমান্বয়ে তার প্রেমে সাড়া দেয় মেয়েটি।এমনিভাবেই দিন কেটে যেতে থাকে।একসময় টোটো আর্মিতে যোগদান করে,কারণ সেদেশের নিয়ম ছিলো, যুবক বয়সে প্রত্যেককেই আর্মিতে কিছু নির্দিষ্ট সময় ব্যয় করতে হবে।কিন্তু ফিরে এসে সবকিছু কেমন যেনো পালটে যায় টোটোর।এভাবেই গড়াতে থাকে সিনেমার কাহিনী।
গোটা মুভিটিতে দুইটি পৃথক সময়ের কাহিনী প্যারালালি চলতে থাকে।একটি হচ্ছে বর্তমান সময়কাল যেখানে সালভাটর আলফ্রেডোর মৃত্যুসংবাদ তার মায়ের কাছ থেকে শুনবে এবং স্থির করে তার শেষকৃত্যে অংশগ্রহন করবে সেইটির চলমান কাহিনী, আর আরেকটি হলো ছোট্ট টোটোর বড়ো হয়ে উঠার কাহিনী,যেটা মুলত ফ্ল্যাশব্যাক স্টোরি হিসেবে দেখানো হয়েছে,এবং সেই ফ্ল্যাশব্যাক স্টোরিটি গোটা সিনেমার ৯০ ভাগ জুড়ে থাকবে।
মুভিটির স্টোরি খুবই সিম্পল, এবং স্টোরিটির ধারাবাহিকতাও খুবই দক্ষতার সাথে দেখানো হয়েছে।দুটি অসম বয়য়ের দারুন বন্ধুত্বের একটি চমৎকার চিত্রায়ন দেখতে পাবো এই সিনেমাটিতে।তবে মুভিটির আসল মজা তার শেষ দৃশ্যে।চোখের পানি আটকে রাখা বেশ কঠিন।অসাধারন একটি এন্ডিং।
মুভিটির কাস্টিং অসাধারন।আলফ্রেডোর চরিত্রে অভিনয় করা Philippe Noiret অসাধারন পারফরমেন্স দেখিয়েছেন।তাছাড়া টোটোর চরি্ত্রে অভিনয় করা ছোটো সেই ছেলেটির কথা আলাদা করে না বললেই নয়।
মুভিটির গোটা সময়টাতে কখনো আপনি খিলখিল করে হেসে উঠবেন,কখনোবা কোনো দৃশ্য দেখে আপনার মনটা ভারী হয়ে আসবে।মুভিটির স্টোরিলাইনে কোনো বাঁক নেই,ক্লাইম্যাক্স নেই, নেই কোনো সুপারস্টার ,নেই কোনো স্পেশাল ইফেক্টের কারসাজি।শুধুমাত্র শুদ্ধ ইমোশান আর ফিলিংসকে পুঁজি করে অসাধারন একটা সিনেমাটিক জার্নি।সেই জার্নি শেষ করে আপনি একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলবেন, হা আলফ্রেডো !!!! হা টোটো !!!!
মুভিটিতে কি নেই? আছে ভালোবাসা,আছে ভয়, আছে লোভ, আছে হতাশা, আছে ছোটোবেলার স্মৃতি রোমন্থন,আছে একজনের সাথে আরেকজনের নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব যেগুলো আর কখনোই ফিরে আসবে না।জীবনের সুখস্মৃতি হয়ে বেঁচে থাকা ছাড়াও জীবনের পরিপূর্ণতা আনার জন্য সেগুলোর কতো বড়োই না ভূমিকা।তাইতো সেই ছোট্টো আজ আজকের সালভাটর ডি ভিটা, আজকের সেই বিখ্যাত ফিল্মমেকার।
আরেকটা জিনিসের প্রশংসা না করলেই নয়, তাহলো পরিচালকের মুন্সীয়ানা।সিম্পলি অসাধারন।একটা সিম্পল কাহিনীকে সিম্পলি টেনে নিয়ে যাওয়াটা এবং সবশেষে সেই সাধারন মুভিটা যখন টোটালি ব্রিলিয়ান্ট একটা কিছুতে রূপ নেয় ----তা করে দেখানোটা চাট্টিখানি কথা নয়।আর পরিচালক এখানেই সফল।কোনো এক্সপেরিমেন্ট নেই,কোনো অসাধারন সিকুয়েন্স নেই,স্পেশাল ইফেক্টসের বালাই নেই, অথচ কি অনবদ্য একটা সিনেমা।
প্রত্যেকে ফিল্মমেকারের আদর্শ হও্য়া উচিত এই মুভিটি।পরিশেষে বলবো, হিউম্যান লাইফ, ট্র্যাজেডি আর উথ্থানের অসাধারন একটি সংমিশ্রণ এই সিনেমা প্যারাডিসো মুভিটি।
আমার পার্সোনাল রেটিং ১০/১০। সবার জন্য হাইলি রেকমেন্ড করলাম।
মুভিটির ডাউনলোড লিংক:
১।http://www.megaupload.com/?d=0XZ2W77D&Cinema.Paradiso.1988.BRRip.x264.part1.rar
২।http://www.megaupload.com/?d=OX0QSCBU&Cinema.Paradiso.1988.BRRip.x264.part2.rar
৩।http://www.megaupload.com/?d=WRR5Q85I&Cinema.Paradiso.1988.BRRip.x264.part3.rar
৪।http://www.megaupload.com/?d=CMS9LE09&Cinema.Paradiso.1988.BRRip.x264.part4.rar
৫।http://www.megaupload.com/?d=TUNLT4BE&Cinema.Paradiso.1988.BRRip.x264.part5.rar