শত্রুর সংখ্যা ও শক্তি-সামর্থ্য যত প্রবলই হোক না কেন মুসলমানরা তরবারির মোকাবেলা তরবারি দিয়েই করেছে অতীতে । ধৈর্য্য, সহ্যক্ষমতা, প্রতিপক্ষের হিদায়াত কিংবা ধ্বংশের জন্য শুধু সামষ্টিক বা ব্যক্তিগত দোয়ার মাধ্যমে সংঘবদ্ধ শত্রুর আক্রমনোদ্যত তরবারির মোকাবেলা করার কোন উদাহরণ কখনও স্থাপন করে যাননি আল্লাহর রাসুল (সা) কিংবা তার সাহাবিরা ।
কিন্তু তরবারির মোকাবেলা তরবারি দিয়ে করার দিন গত হয়েছে বহু পূর্বেই ।
মুসলমানের শত্রুরা নিজেদের জ্ঞান, বুদ্ধি এবং গবেষনার মাধ্যমে আসমান-জমিনের বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে মহা বিজ্ঞানময় আল্লাহতায়ালা যে বিস্ময়কর শক্তি ও ক্ষমতাকে লুকিয়ে রেখেছেন সেসব আবিষ্কার এবং ব্যবহার করে বস্তুসভ্যতার চরম শিখরে পৌঁছে গেছে । তারা ভয়াবহ, নিখুঁত ও বিধ্বংশী মারণাস্ত্র উদ্ভাবন করে অপ্রতিরোধ্য সামরিক শক্তির অধিকারী হয়েছে । বিস্ময়কর অস্ত্রবলে বলীয়ান হয়ে পদানত করেছে বিশ্বকে, বিশ্বের দুর্বল, অনগ্রসর ও ‘শান্তিপ্রিয়’ মুসলমানদেরকে ।
অন্যদিকে, একদা সভ্যতার শীর্ষস্থানে থাকে মুসলমানরা অসীম অজ্ঞতা, গোঁড়ামি, দলাদলি এবং স্বেচ্ছারোপিত বৈরাগ্যবাদের কারণে জ্ঞান-বিজ্ঞানে দিন দিন পিছিয়ে পড়েছে, বেঁচে থাকার অত্যাবশ্যকীয় উপাদানের জন্য ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে তাদের ঘৃনার পাত্র কাফেরদের উপর । যে কাফিরদেরকে মুসলমানরা করুণা করে ধর্মীয় কারণে সেই কাফিরদের করুণার উপর ভর করেই মুসলমানদেরকে জীবন-যাপনের প্রয়োজন মেটাতে হয় বহুলাংশে ।
আধুনিক সমরবিদ্যা, সমরাস্ত্র, জ্ঞান ও প্রযুক্তির একটু-আধটু শত্রুদেরকে কাছ থেকে ক্রয় করে মুসলমানরা নিজেরা যে সামরিক শক্তির মালিক হয়েছে তা দিয়ে সেই শত্রুদের সাথেই লড়াই করতে যাওয়াটি ধনী মহাজনের সাথে হতদরিদ্র খাতকের লড়াইয়ের সমতুল্য হয়ে গেছে ।
মুসলমানদের ঈমানি তেজ, শক্তি ও ক্ষমতা আজ জিহাদের ময়দানে নয়, তাদের দেহের শিরা-উপশিরা, মস্তিস্ক এবং বাকযন্ত্রেই উপায়হীন আস্ফালনে ব্যস্ত আজ । তাদের জিহাদের ময়দান আজ ওয়াজ মাহফিলের মঞ্চ ও প্যান্ডেলের ছায়া, মসজিদ প্রাঙ্গন কিংবা বড় জোর ঝুঁকিমুক্ত রাজপথেই সীমাবদ্ধ ।
বিশ্বব্যাপী মুসলমানদেরক কাতর প্রার্থনা শুনে রক্তাক্ত ফিলিস্তিনের মুসলমানদেরকে ইহুদি বর্বরতার কবল থেকে উদ্ধার করতে আল্লাহতায়ালা আসমান থেকে ফেরেশতার বাহিনী পাঠাবেন না । অনগ্রসর সামরিক শক্তি এবং অনৈক্যের কারণে বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মুসলমানরাও পশ্চিমা খ্রীষ্টানদের পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত নগণ্যসংখ্যক ইহুদিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার চরম আত্মঘাতি সাহস দেখাবে না ।
তাহলে উপায় ?
কোন উপায় নেই ফিলিস্তিনের অসহায় মুসলমানদের দুর্দশা এবং করুণ মৃত্যু চেয়ে চেয়ে দেখে যাওয়া, দীর্ঘশ্বাস ফেলা, ক্রুদ্ধ হওয়া এবং আল্লাহর কাছে তাদের উদ্ধারের জন্য অশ্রুসজল প্রার্থনা করা ছাড়া ।
বহু যুগ ধরে জমতে থাকা মুসলমানদের নির্বোধ দায়িত্বহীনতা, ঔদাসিন্য, অশিক্ষা, গোঁড়ামি, অন্তর্কোন্দল, ঈমানী চেতনার চরম অবক্ষয়, সংকীর্ণতা ইত্যাদি পাপের বেশ খানিকটা মাশুল ফিলিস্তিনের নিরীহ ও নিরপরাধ মুসলমানদেরকে দিয়ে যেতে হচ্ছে বহুকাল ধরেই ।
আমি ফিলিস্তিনের মুসলমানদের জন্য আল্লাহর কাছে তার গায়েবী সাহায্যের জন্যই শুধু প্রার্থনা করি না; আমি আল্লাহর কাছে সকাতর প্রার্থনা করি মুসলমানদের মস্তিস্কে আল্লাহ যেন সহসাই এমন কোন অব্যর্থ ও অপ্রতিরোধ্য একটি মারণাস্ত্র তৈরির জ্ঞান দান করেন যার শ্রেষ্ঠত্বের সামনে কাফেরদের সকল সামরিক শক্তি দুর্বল ও অকার্যকর হয়ে পরাভব মানে । কাফেররা যেন মুসলমানদের ক্রোধকে সমীহ করে, মুসলমানদের ভয়ে তটস্থ থাকে, মুসলমানদের গায়ে টোকা দেয়ার আগে দশবার ভাবনা-চিন্তা করে ।
আমীন ।