পানির দেশে মাছের অভাব !
বাড়ি-ঘরের পেছনে ছোট্ট ডোবা শিং মাগুরের আস্তানা । নালা-নর্দমা, ক্ষেত-খামারে জমে থাকা পানিতে টাকি মাছের রাজত্ব । খেলার মাঠে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে দারকিনা মাছ ছুটোছুটি করে খেলায় মাতে । বর্ষার ঝুম বৃষ্টিতে কই মাছ নিজের ডোবা থেকে উঠে এসে, ক্রল করে করে নির্জন রাস্তা পার হয়ে খালার বাড়িতে বেড়াতে যায় ।
টুকটুকে লাল ছানাপোনার বিশাল পালের চারপাশে মা আর বাবা শোল মাছ রাখালের মতো ঘুরে ঘুরে পাহারা দেয় খালের নতুন অগভীর পানিতে । শেওলার নীচে আলগোছে হাত দিলেই হাতের তালুর ভেতরে ধরা পড়ে বোকা মেনি মাছ ।
স্বচ্ছ পানির স্রোতে বালির উপর স্থির শুয়ে থাকে বেলে মাছেরা । পুঁটি, টেংরা, বাইন মাছ ঘাটের কাছে এসে ঘুর ঘুর করে খাবারের আশায় । কচুরীপানার নীচে, তীরের কাছে ছোট ছোট গর্তের ছায়ায় ঝিম মেরে বসে থাকে চিংড়ি মাছেরা, পোকার মতো ।
তীরের কাছে নদীতে মাঝরাতে ঝপাৎ করে লাফিয়ে উঠে বিশাল বোয়াল মাছ, রুই মাছ ।
ঝাঁকে ঝাঁকে সাগর থেকে পর্যটনে আসে ইলিশরা—পদ্মা, মেঘনা, যমুনার বুকে হল্লা করে বেড়ায় । তারপর জেলেদের জালে ধরা পড়ে মাছবাজারে স্তুপ হয়ে পড়ে থাকে, অবহেলিত । সন্ধ্যা বেলায় গরীব মানুষরা সেই ইলিশ কিনে নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।
হ্যাঁ, এমনই ছিল পানির দেশ বাংলাদেশের চিত্র । আশির দশকেও ।
তারপর একদিন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আসে এ দেশে । নদীতে কারেন্ট জাল, ক্ষেত-খামারে রাসায়নিক সার আর কীটনাশকের প্রচলন করে, সংগে যোগ হয় মানুষের লোভ আর হঠকারিতা । জল ছেড়ে স্মৃতির পাতায় চলে যায় মাছেরা ।
পানির দেশে মাছের রাজত্ব এখন আর নেই ।