✿
কেন হামাস অগ্নিকুন্ডে ঝাঁপ দিয়েছে ? কেন হঠকারী বীরত্ব দেখাতে গিয়ে দীর্ঘস্থায়ী এক ধ্বংশ ও মৃত্যুর সুনামিকে টেনে এনেছে স্বজাতির নিরীহ মানুষের উপর ? কী লাভ হলো ফিলিস্তিনের এর ফলে ?
অতি বাস্তববাদী ও নিরাবেগ কিছু মানুষকে এভাবেই বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে আজ ।
এই মানুষগুলি আসলে মজলুম ফিলিস্তিনিদের দুঃসহ জীবন-যাপনের কোন খবরই বোধ হয় রাখেনি এতকাল । কী পৈশাচিক অত্যাচার, হিংস্রতা আর লাঞ্ছনার শিকার হয়ে বেঁচে আছে ফিলিস্তিনিরা ইসরাইল নামক পিশাচের দেশের মুঠোবন্দী হয়ে ! মৃত্যু, রক্তপাত, ক্ষুধা, দারিদ্র্য ফিলিস্তিনিদের প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা । তিল তিল করে তারা মরছে ইসরাইলিদের হাতে । অসহায়ভাবে । কিছুই বোধ হয় এই মানুষগুলির জানা নেই ।
কীটপতঙ্গের মতো আত্মমর্যাহীন হয়ে বেঁচে থাকাটাই যদি মানুষের জন্য আনন্দের হতো, তাহলে উপমহাদেশে কখনো সিপাহী বিপ্লব হতো না । বাহাদুর শাহ পার্কে ফাঁসির দড়িতে ঝুলে বাতাসে দোল খেতো না অসংখ্য প্রাণহীন সিপাহীর লাশ । তিতুমীর কখনোই বাঁশের কেল্লা তৈরি করতো না । ক্ষুদিরাম ফাঁসির দড়িতে ঝুলার বোকামি কস্মিনকালেও করতো না ।
দিনের পর দিন লাঞ্ছিত হয়ে বেঁচে থাকাটা লজ্জার । পায়ের নীচে নির্বাক ও সর্বংসহা পাথরের মতো পদদলিত হয়ে বহুকাল পড়ে থাকার চেয়ে আচানক গ্রেনেড হয়ে কোন একদিন ফেটে পড়ে, কিছু নিষ্ঠুর পা-কে রক্তাক্ত ও চির অকেজো করে, ধুলো হয়ে বাতাসে ছড়িয়ে পড়াটাই যে গৌরবের ।
অসংখ্য স্বজন হারানো ফিলিস্তিনিদের চোখে প্রতিশোধের স্বপ্ন ছাড়া আর কোন মানবীয় স্বপ্নের প্রবেশ নিষেধ । একটি ইহুদির মৃত্যুও ফিলিস্তিনিদের যন্ত্রনাময় জীবনে উৎসবের উল্লাস ছড়ায়, এক ফোঁটা সুস্বাদু জলের মতো প্রতিশোধের তৃষ্ণা মেটায় ।
জীবিত ফিলিস্তিনিরাতো মরে বেঁচে আছে । হামাসের জানবাজ যে গেরিলা যোদ্ধারা জেনে-বুঝে অগ্নিকুন্ডে আত্মাহুতি দিতে ঝাঁপ দিয়েছে, মৃত্যুর আগে তারা তাদের জাতির জন্য পেছনে রেখে গেছে শতশত ইহুদি পশুদের লাশ । লাশ নয়, দুঃখের মরুভূমিতে পথহারা তাদের স্বজাতির জন্যে ঐগুলি অসংখ্য আনন্দের টুকরো । এই আনন্দে অভিভূত ফিলিস্তিনীরা ইসরাইলী বোমার আঘাতেও হাসিমুখে মরতে পারবে আজ ।
ইসরাইলী সীমান্ত পার হয়ে হামাসের যোদ্ধারা স্বাধীনতা নয়, আনন্দের সাওদা করতে গিয়েছিল ।
✿✿
চিড়িয়াখানার খাঁচা ভেঙে কতগুলি বাঘ আচানক জনপদে ঢুকে গেলে যে আতংক ও ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়, ইসরাইলের ভেতরে তাই হয়েছে গত কয়েক দিনে ।
অবরুদ্ধ গাজা একটা দরজাবিহীন খাঁচা । সেই খাঁচা থেকে অবহেলিত প্রাণির মতো বেঁচে থাকা নিরীহ ফিলিস্তিনিদের পালিয়ে অন্য কোথাও আশ্রয় নেয়ার একটি পথও খোলা নেই ।
পিঁপড়ের মতো মরা কিংবা বাঘের মতো হামলা করে মারা—এ দু’টি মাত্র বিকল্পই তাদের সামনে সবসময় খোলা ।
✿✿✿
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় বিগত শতাব্দিতে কল্পনারও অতীত হিংস্র ও পৈশাচিক আচরণ করা হয়েছে ইহুদিদের সাথে । কিন্তু মুসলমানরা তা করেনি, করেছে নাৎসী জার্মানরা । জার্মানের সাধারণ নাগরিকদেরও সমর্থন ছিল এর প্রতি ।
ইউরোপেও ইহুদিরা বহুকাল ধরে ছিল ঘৃণা, উপেক্ষা ও করুণার পাত্র । যে ব্রিটেন ১৯১৭ সালে বেলফোর ঘোষনা দিয়ে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সূচনা করেছিল, সেই দেশের বিখ্যাত সাহিত্যিকদের রচনাতেও ইহুদিদেরকে ঘৃণিত চরিত্র হিসাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বহু পূর্ব থেকেই ।
উদাহরন হিসাবে দেখানো যায় উইলিয়াম শেকসপিয়রের শাইলক (মার্চেন্ট অব ভ্যানিস) । চার্লস ডিকেন্সের ফ্যাগিন্স (ওলিভার টুইস্ট) । এরা ঘৃণ্য ইহুদি খলনায়ক । এমন উদাহরণ আরও রয়েছে ।
কিন্তু ইহুদিরা তাদের ঐতিহাসিক ক্ষোভ আজ জার্মান কিংবা ইউরোপীয়ানদের উপর নয়, ঝাড়ছে ফিলিস্তিনের নিরীহ মুসলমানদের উপর, যাদের দেশ অবৈধভাবে দখল করে তারা মাতৃভূমি বানিয়েছে প্রাচীন ইতিহাসের গল্প ফেঁদে ।