(আল কুরআনের আলোকে তৈরী জাহান্নামের একটি কথাচিত্র)
কিয়ামত থেকে শুরু হওয়া বর্ণনার সিকুয়েল এটি । আগের দু’টি লেখা যারা পড়েননি, তারা পড়ে নিতে পারেন—
▓▒░ মহাপ্রলয় ! (দ্য আলটিমেইট বিগ ব্যাং) ░▒▓
▬▬▬▬▬▬ஜ স্বপ্নের শেষ ঠিকানা, জান্নাত ஜ▬▬▬▬▬▬
❑❑ ভূমিকা ❑❑
ভোগ-বিলাসিতা, সুখ, সম্ভোগ এবং চিত্তবিনোদন স্থান-কাল-পাত্রভেদে পরিবর্তনশীল । তাই আল কুরআনে জান্নাতের বর্ণনা বিশদ নয়, আভাসসমৃদ্ধ । কিন্তু জাহান্নামের বর্ণনা মোটামুটি স্বচ্ছ ও বিশদ ।
এর কারন হচ্ছে, শাস্তি ও যন্ত্রনা প্রদানের পদ্ধতিগুলির কার্যকারিতা প্রায় চিরন্তন । দৈহিক পীড়ন, অগ্নিদহন, ক্ষুধা ও তৃষ্ণার যাতনাকে মানুষ চিরকালই ভয় পেয়ে এসেছে । শাস্তির এইসব কৌশলের প্রতি মানুষের সেই ভয়ের তীব্রতা আজও একই রকম আছে । জাহান্নামে কষ্ট ও যন্ত্রনাপ্রদানের পদ্ধতিগুলি প্রায় দুনিয়ার মতোই থাকবে । শুধুমাত্র পরিমান ও মাত্রাগত পরিবর্তন ঘটবে ।
তবে দুনিয়াতে মানুষের সহ্যক্ষমতার একটা সীমা থাকে । সেই সীমা অতিক্রম করলে মানুষ প্রাণ হারায় । কিন্তু জাহান্নামে সহ্যের কোন সীমা নেই । কারন সেখানে মানুষের মৃত্যু নেই । ফলে প্রতিবার শীর্ষ যন্ত্রনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে সেখানে ।
জান্নাতের বিচিত্র, সীমাহীন ও অফুরান সুখের কল্পনা করা মানব মনের জন্য কঠিন হলেও জাহান্নামের ভয়ংকর শাস্তির যন্ত্রনার কথা কল্পনা করাটা কঠিন নয় মোটেও । কারন আগুন কেমন যন্ত্রনাদায়ক, কম-বেশী সবারই সে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা আছে । এ কারণেই জান্নাতের সুখকে কল্পনার অতীত বললেও জাহান্নামের শাস্তির ব্যাপারে তা বলেননি মহান আল্লাহ ।
সুখ ও সম্ভোগের আনন্দ একসময় পানসে, একঘেয়ে ও বিরক্তিকর হয়ে উঠতে পারে, কিন্তু শাস্তির কষ্ট ও যন্ত্রনা কখনোই ভোঁতা ও সহনীয় হয়ে উঠে না । তাইতো আগুন যতবার পোড়ায়, ততবারই মানুষ যন্ত্রনায় ছটফট করে । চাবুকের আঘাত যতবার পিঠে পড়ে, ততবারই তা রক্ত ঝরায়, ব্যথার অনুভূতি তৈরী করে দেহে ।
এজন্যই জাহান্নামের কষ্টের বর্ণনা জান্নাতের সুখের বর্ণনার চাইতে কম বৈচিত্রপূর্ণ । তবে ভয়াবহতায় তা বিশ্বাসীদের অন্তর কাঁপিয়ে দেয়ার মতো । জাহান্নামে কোন কাহিনী নেই, আছে শুধুই আগুনের শাস্তি, যন্ত্রনা আর আর্তচীৎকার । তাই জাহান্নামের কোন কাহিনীচিত্র রচনা করতে পারিনি, শুধুমাত্র কথাচিত্র তৈরী করেছি ।
▓▒░ যেমন কর্ম তেমন ফল ░▒▓
আল্লাহর আদালতে চূড়ান্ত বিচারের রায়ে দোষী প্রমানিত হওয়ার পর আমলনামা বাঁ হাতে পাবে কাফের এবং মুনাফিকরা । তাদের দন্ডাদেশ হবে অনন্ত কাল আগুনের কারাগারে বাস করা ।
দন্ডাদেশের পরপরই অপরাধীদের হাত, পা এবং গলায় ডান্ডাবেড়ি পরানো হবে । পরানো হবে আলকাতরার তৈরী ভীষন দাহ্য কারা পোশাক । যেন মুহূর্তেই তাদের শরীরকে দাউদাউ করে পুড়িয়ে দিতে পারে আগুন ।
নির্দয় ফেরেশতারা চরম অপমান ও লাঞ্ছনার সাথে গরু-ছাগলের পালের মতো খেদিয়ে খেদিয়ে তাদেরকে জাহান্নামের কাছে নিয়ে যাবে । বেঈমান, বেদ্বীনদেরকে দেখেই জাহান্নাম তার লেলিহান আগুনের লকলকে জিভ বের করে ক্ষুধার্ত কন্ঠে ডাকতে শুরু করবে,
--আয়, আয়, আমার উদরে আয় ।
দোযখের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা কারাপ্রধান এই অগুনিত কয়েদীদেরকে দেখে বলবে,
--কী ব্যাপার, কোন্ পাপে তোমরা এই জঘন্য দোযখের উত্তরাধিকারী হলে ? তোমাদের কাছে কি কোন নবী রাসুল যাননি ? তারা কি শুনাননি তোমাদের মালিকের সাবধানবাণী ? বলেননি ভয়ংকর এই কারাগারের শাস্তির কথা ?
অপরাধীরা মাথা নীচু করে বলবে,
--হ্যাঁ স্যার, গিয়েছিল এবং বলেছিল । কিন্তু আমাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়েছিল কর্মদোষে । আমরা কান দিইনি তাদের সাবধানবাণীতে ।
▓▒░ জাহান্নামের জ্বালানি ░▒▓
তারা আসহাবুন নার । চুলের মুঠি ধরে, উপুড় করে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে । জাহান্নামের অতলে গিয়ে পড়বে তারা ।
জ্বলন্ত চুলার ভেতর শুকনো কাঠের জ্বালানি পড়লে যেমন শোঁ শোঁ গর্জন শুনা যায়, বেঈমান মানুষদেরকে পেয়ে জাহান্নামের আগ্রাসী অাগুন তেমনই গর্জন তুলে ভয়ংকরভাবে ফেটে পড়বে । জাহান্নামের প্রিয় জ্বালানি হচ্ছে বেঈমান মানুষ এবং জ্বীন ।
সবচেয়ে ছোট জান্নাতও যখন কয়েক পৃথিবী সমান বিশাল হবে, দোযখীদের জন্য বরাদ্ধ থাকবে মাত্র ৭০ হাত ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট একখন্ড বৃত্তাকার ও সংকীর্ণ স্থান । সত্তর হাত লম্বা শেকল পরিয়ে কুকুরের মতো খুঁটিতে বেঁধে ফেলা হবে তাদেরকে । ৭০ হাতের বেশী এক পা সামনে বাড়ারও সূযোগ থাকবে না সেদিন দোযখের কারাবন্দীদের । নিক কালো ধোঁয়ায় অন্ধকারাচ্ছন্ন হাবিয়ার গহ্বরে লেলিহান আগুনের শিখায় বারবার ঝলসাতে থাকবে তাদের হাড়-মাংশ-চামড়া-চুল ।
জাহান্নামের বিধ্বংশী আগুনের শিখাগুলি দাউদাউ করে জ্বলতে জ্বলতে আকাশছোঁয়া অট্টালিকার মতো বহু উঁচুতে গিয়ে ঠেকবে । লেলিহান অগ্নিশিখাগুলিকে নৃত্যরত হলুদ উটের মতো মনে হবে কখনো কখনো । সেই অগ্নিশিখার ছায়া ছড়িয়ে পড়বে তিন দিকে । কিন্তু আগুনের সেই ছায়া শীতল হবে না মোটেও ।
কোথাও পালাতে পারবে না জাহান্নামীরা । বিশাল অগ্নিকুন্ডের সংকীর্ণ এক গর্তের ভেতরেই অনন্তকাল ধরে পুড়ে একবার কয়লা হবে, আবার পরক্ষনেই নতুন মাংশ ও চামড়া গজাবে তাদের শরীরে । আবার সেই মাংশ-চামড়া-চর্বি চড়চড় করে পুড়তে পুড়তে ঝলসে গিয়ে হাড়ের সাথে লেগে গিয়ে কুৎসিৎ রূপ ধারন করবে, প্রচন্ড দুর্গন্ধ বের হবে । আবার নতুন করে শরীরে চামড়া গজাবে, আবার… । এভাবেই তারা জাহান্নামের আগুনে বারবিকিউ হতে থাকবে অনন্তকাল । প্রতিবার একইরকম অসহ্য যন্ত্রনায় ছটফট করবে তারা ।
দোযখের বাতাস ভারি হয়ে যাবে তাদের মর্মন্তুদ চীৎকারে । বুকফাটা আর্তনাদে বারবার মৃত্যু কামনা করবে তারা । কিন্তু আর তাদের মৃত্যু হবে না কোনদিন । কেউ তাদের আর্তনাদ ও যন্ত্রনা দেখে সহানুভূতি জানাতে আসবে না এখানে ।
▓▒░ কারাগারের রাতদিন ░▒▓
উনিশ জন ফেরেশতা কারারক্ষী থাকবে দোযখে । ভয়ংকর পাষন্ড ও অত্যাচারী তারা । কারাবন্দীদের লোহার ভারী মুগুর দিয়ে দুরমুশপেটা করবে তারা নিয়মিত ।
জাহান্নামিদের ক্ষুধা লাগবে, তৃষ্ণা পাবে । পৃথিবীর কয়েদখানার কয়েদিদের মতো সেখানেও তাদেরকে খেতে দেয়া হবে ।
জাহান্নামের তলা থেকে জন্ম নেয়া বিষাক্ত যাক্কুম গাছের ডাল-পালা তাদের ক্ষুধা নিবারনের জন্য সকাল বিকাল সরবরাহ করবে দোযখের ফেরেশতারা । এ গাছের শাখা প্রশাখাগুলি শয়তানের মুন্ডুর মতো দেখতে । আরও পরিবেশন করা হবে কাঁটাযুক্ত এক ধরনের শুকনো ঘাস । যাতে না থাকবে কোন খাদ্যগুন, আর না তাতে মিটবে ক্ষুধা । সর্বগ্রাসী ক্ষুধার জ্বালায় জাহান্নামীরা এসব অখাদ্যই গোগ্রাসে গিলে উদর পূর্ণ করবে । কিন্তু পেটের ভেতরে গিয়ে এসব জঘন্য অখাদ্য তেলের কালো গাদের মতো টগবগ করে উথলাতে থাকবে । তীব্র পেট ব্যথা ও যন্ত্রনায় সারা শরীর মোচরাতে থাকবে তাদের ।
গরমের তীব্রতায় পিপাসায় বুকের ছাতি ফাটার দশা হবে তাদের । কিন্তু পান করার জন্য ঠান্ডা কোন সুপেয় তরল জুটবে না তাদের ভাগ্যে । তৃষ্ণা নিবারনের জন্য তাদেরকে দেয়া হবে টগবগ করে ফুটতে থাকা পানি এবং জঘন্য দুর্গন্ধযুক্ত পঁচা রক্ত ও পুঁজ । পিপাসায় বাধ্য হয়ে এইসব ফুটন্ত ও ঘৃন্য তরলই পান করবে তারা । আর পান করার সংগে সংগে পেটের ভেতরে তাদের নারী-ভূঁড়িগুলি সব গলে যেতে থাকবে । যন্ত্রনায় মাগো বাবাগো বলে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠবে তারা ।
জান্নাতে যেমন থাকবে ঝর্ণা, তেমনিভাবে দোযখেও থাকবে ঝর্ণা । তবে কিনা, সেই ঝর্নাতে বইবে ফুটন্ত পানি । প্রচন্ড উত্তাপে সেই ঝর্ণার পানি সারাক্ষন টগবগ করে উথলাতে থাকবে । এই পানিই দোযখের কারারক্ষীরা সরবরাহ করবে কয়েদিদেরকে ।
মাঝে মাঝে ঝাপটা দিয়ে বয়ে যাবে হাওয়া । তবে সে লু হাওয়া দোযখবাসিদের তপ্ত শরীর ঠান্ডায় জুড়িয়ে দেয়ার বদলে গায়ে দগদগে ফোস্কা ফেলে দিয়ে দিবে ।
এসব হবে দুনিয়ার জীবনে বিদ্রোহ করা অকৃতজ্ঞ ও অবাধ্য মানুষদের উচিৎ সাজা ।
▓▒░ ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে ░▒▓
জাহান্নাম আল্লাহর পেতে রাখা এক ভয়ংকর ফাঁদ । সেখানে গিয়ে পড়বে কাফের, মুনাফিক ও মুরতাদরা । আর উঠতে পারবে না । অনন্তকাল সেখানেই আটকা পড়ে থাকবে । দুনিয়ার জীবনে অর্থ, নারী, সন্তান আর সম্পদের লোভনীয় টোপ দেখে যেসব নির্বোধ ও অবাধ্য মানুষ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে প্রলুদ্ধ হয়েছিল, বিস্মৃত হয়েছিল আল্লাহর উপদেশ ও সাবধানবাণী, তারা গিয়ে পড়বে টোপের পেছনে পেতে রাখা জাহান্নামের চোরা ফাঁদে ।
বিভীষিকাময় সেই ফাঁদ । চারপাশে বিশাল বিশাল খুঁটির মাঝে ঢাকনাওয়ালা বদ্ধ এক দহনচুল্লী (ইনসিনেরেটর) । যার ভেতরে দাউদাউ করে জ্বলবে আগুন । সেই আগুনে পুড়তে পুড়তে অপরাধী মানুষদের চামড়া ও মাংশ কয়লা হয়ে যাবে বারবার । কিন্তু তবুও তারা বেঁচে থাকবে জীবন্মৃত হয়ে ।
দুনিয়ার জীবনে তাদের অবিশ্বাস, অসতর্কতা ও নির্বুদ্ধিতার এই হচ্ছে উপযুক্ত পরিণাম ।
মৃত্যুর পর রক্ত-মাংশ, হাড়গোড় মাটিতে মিশে গেলেও আবার একদিন মানুষকে পুনর্জীবিত হয়ে শেষ বিচারের ময়দানে আল্লাহর মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে—এ সাবধানবাণীকে যারা স্রেফ পাগলের প্রলাপ বলে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল, যারা দুনিয়ার জীবনে খোদাদ্রোহীতা, অহংকার, অবাধ্যতা, জুলুম, অন্যায় আর লাগামহীন পাপাচারে চরমভাবে মেতে ছিল, তাদের শাস্তির জন্য আল্লাহ বহু আগেই প্রচন্ড দাহ্য ও অগ্নিবান্ধব আলকাতরার পোশাক তৈরী করে রেখেছিলেন । দুনিয়াতেই এই সীমালংঘনকারিদের গলায় জাহান্নামের অদৃশ্য ডান্ডাবেরী পেঁচিয়ে ধরেছিল । কিন্তু এই কপালপোড়া নির্বোধগুলি তা অনুভব করার কোনরকম চেষ্টা করেনি ।
‘দুনিয়াতে খুব মহামান্য আর ক্ষমতাধর ব্যক্তি হয়ে গিয়েছিলি তোরা, না ? আল্লাহর নাফরমানি করতে ভালো লাগতো তোদের । জাহান্নামের শাস্তির কথা শুনলেই চরম আমোদ পেয়ে অবিশ্বাসের অট্টহাসিতে ফেটে পড়তি ! আজ দ্যাখ্, ক্যামন মজা’--
এ কথা বলেই জাহান্নামের ফেরেশতারা দোযখবাসীদের মাথায় ঢালতে থাকবে টগবগ করে ফুটতে থাকা উত্তপ্ত পানি । সেই পানিতে অপরাধীদের গায়ের মাংশ-চামড়াই শুধু গলে গিয়ে খসে পড়বে না, নাড়িভূঁড়িও সেদ্ধ হয়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে । তীব্র যন্ত্রনায় চীৎকার করে এদিক ওদিক দৌড়ে পালাতে চাইবে তারা । কিন্তু নির্দয়ভাবে শিকল টেনে কুকুরের মতো আবার তাদেরকে কাছে আনা হবে । আবার শুরু হবে বর্বর নির্যাতন । এভাবেই চলতে থাকবে অনন্ত কাল ধরে ।
প্রচন্ড আগুনে পুড়তে পুড়তে দোযখীদের চোয়ালের হাড় বেরিয়ে পড়বে । চেহারা হয়ে যাবে কুৎসিৎ ও বীভৎস । সারা শরীর দেখতে হবে মাংশবিহীন পোড়া কংকালের মতো ।
এই গোনাহগার মানুষগুলি তাদের পৃথিবীর জীবনে আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করতো না, অভাবী মানুষদেরকে সাহায্য করতো না । সম্পদ জমিয়ে রেখে ডিমের মতো তা দিতো পরম যত্ন ও মায়ায় । বারবার হিসাব করে দেখতো কতটা বড় হলো তাদের সঞ্চয়ের ভান্ডার ।
তাদেরকে বারবার আল্লাহর নির্দেশিত পথে সম্পদ ব্যয়ের উপদেশ দেয়া হতো, বারবার দোযখের ভয়ংকর শাস্তির কথা শুনানো হতো । যেন তারা আগেভাগে সাবধান হয়ে যায় । যেন তারা পরে অনুযোগ করতে না পারে এই বলে যে তাদেরকে এ ব্যাপারে আগে কোনরকম সতর্ক করা হয়নি । কিন্তু চোরা না শুনে ধর্মের কথা । তারা আল্লাহর শাস্তির হুমকিকে আজগুবি ও গাঁজাখুরী বলে উড়িয়ে দিতো ।
▓▒░ দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা ░▒▓
জাহান্নামের জ্বালানি হয়ে পুড়তে পুড়তে দোযখের অধিবাসীদের চোখে পড়বে বহু উপরে জান্নাতের স্বপ্নের ভুবন । তারা দেখবে, সেই সুখের সাম্রাজ্যে সম্রাটের মতো ভোগ-বিলাসের জীবন যাপন করছে জান্নাতীরা । তারা খাচ্ছে, পান করছে, সবান্ধব আমোদ স্ফূর্তি করছে ।
দেখে ভিক্ষুকের মতো কাতর কন্ঠে জাহান্নামের ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত অধিবাসীরা বলবে,
--হে জান্নাতের সুখি ও সফল মানুষেরা, আল্লাহর ওয়াস্তে আমাদেরকে সামান্য পানি আর খাবার দাও । দোহাই লাগে তোমাদের ।
জান্নাতের অধিবাসীরা বলবে,
--না না, তোমাদের জন্য জান্নাতি খাদ্য ও পানীয় আমাদের মালিক নিষিদ্ধ করে রেখেছেন । আমরা তোমাদেরকে কখনোই তা দিবো না । কোন লাভ নেই এদিকে চাতকের মতো তাকিয়ে থেকে । পাপের প্রতিফল ভোগ করতে থাকো তোমরা ।
আল্লাহ এই কথোপকথনের দৃশ্য দেখে জাহান্নামীদের উদ্দেশ্যে বলবেন,
--এই যে আসহাবুন নার, তোমরাতো দুনিয়ার ভোগ-বিলাসে খুব মত্ত হয়ে গিয়েছিলে । আমার দেয়া জীবনবিধানকে তোমরা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করেছো । আমার সাবধানবানীকে ভূয়া ও ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছো । কখনোই বিশ্বাস করতে চাওনি যে একদিন আমার মুখোমুখি হতে হবে তোমাদেরকে ।
একদিন যেভাবে তোমরা আখিরাতকে ভুলে থাকতে দুনিয়ার ক্ষনকালের সুখে মজে গিয়ে, আজ আমিও সেভাবেই তোমাদেরকে ভুলে থাকবো । যাও পুড়তে থাকো অনন্তকাল । জান্নাতি খাদ্য ও পানীয়ের কথা ভুলে যাও । আর, মৃত্যুকে ডেকেও লাভ নেই তোমাদের । আজ এক নয়, বহু মৃত্যুকে ডেকেও কোন ফায়দা হবে না তোমাদের ।
এভাবেই আল্লাহকে ভুলে গিয়ে, পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী জীবনের মরিচীকা সুখ ও ক্ষমতার পিছনে ছুটে চলা পথভ্রষ্ট মানুষগুলি শেষ বিচারের রায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে, জাহান্নামের ভয়ংকর আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে পুড়ে দগ্ধ হতে থাকবে । জাহান্নামের জঘন্য কারাগার হবে অমরত্ব পাওয়া অপরাধীদের চিরস্থায়ী আবাসস্থল ।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে আসহাবুন্ নার হওয়ার দুর্ভাগ্য থেকে রক্ষা করুন । আমীন ।
❑❑ উপসংহার ❑❑
এসব কথা শুনে অবাক হচ্ছো ! তোমরা হাসছো? অথচ কাঁদছো না !
–সুরা আন নাজম, আয়াত ৫৯-৬০ ।
≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡
সুরা নাবা (আয়াত ২১-২৮), গাশিয়া (৪-৭), হুমাযা (৪-৯), মূলক (৬-৮), হাককাহ(৩১-৩৭), মাআরিজ (১৫-১৮), আল মুদ্দাসসির (২৬-৩১), নিসা (৫৬), মুরসালাত (২৮-৩৬), ওয়াকিয়া (৪১-৪৮), আল আরাফ (৫০-৫১), ইব্রাহিম (৪৯-৫১), হজ্জ্ব (১৯-২২), মুমিনুন (১০৩-১০৪), ফুরকান (১১-১৪), সাফফাত (৬২-৭০), যুমার (৭১-৭২), দুখান (৪৩-৫০), হাদিদ (২০), মুহাম্মদ (১৫) অবলম্বনে ।
≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡≡