সাধারন শিক্ষায় শিক্ষিত মুসলমানদের অধিকাংশই শৈশবে কুরআনের যেসব সুরা কিংবা আয়াত মুখস্থ করেন, বাকি জীবন সেসব সুরা কিংবা আয়াতগুলিই নামাজে পড়ে থাকেন । এদেশে নামাজের জন্য পপুলার সিলেকশন হচ্ছে আমপারার শেষের দিকের সুরাগুলি ।
অতীতে সাধারন মুসলমানদের মুখস্তকৃত সুরার স্টক অনেক বড় থাকলেও, দিন যত যাচ্ছে নতুন প্রজন্মের মুখস্থের স্টক ততই ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হচ্ছে । এর অন্যতম প্রধান কারন হচ্ছে এ দেশ থেকে মক্তব সংস্কৃতির প্রায়াবসান অবস্থা । একটা সময় ছিল যখন এ দেশে কি শহর কি গ্রাম সর্বত্রই, এবং কি ধনী কি গরীব সবার শিশু সন্তানই মক্তবে গিয়ে সহীহভাবে কুরআন তিলওয়াত এবং প্রয়োজনীয় সুরা ও দোয়াগুলি বাবা-মার অজান্তেই শিখে ফেলতো ।
শৈশবে মক্তবে সমবয়সী অনেকের সাথে কোরাস করে কুরআনের আয়াত কিংবা সুরা শিখাটা যত সহজ, বয়স বাড়লে একা একা সে কাজ করা ততই কঠিন কিংবা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠে । ব্যস্ততা আর ক্ষয়িষ্ণু স্মৃতিশক্তিই এর জন্য প্রধানত দায়ি ।
তবে কোন কাজই অসম্ভব নয়, যদি মানুষের আন্তরিকতা আর কঠোর পরিশ্রম জোট বাঁধে ।
নামাজে নিয়মিতভাবে অল্প ও কমন কিছু সুরা ও আয়াত পাঠ করলে, একসময় বৈচিত্রহীন একঘেয়েমি পেয়ে বসে । তৈরী হয় অন্যমনস্কতা । নামাজী ভুলে যায় রাকায়াতের সংখ্যা । নামাজ হয়ে পড়ে প্রাণহীন ও ক্লান্তিকর ।
যাদের মুখস্ত করা সুরা ও আয়াতের পুঁজি কেবলমাত্র আমাপারাতেই সীমাবদ্ধ, তারা কুরআনের বাকি ২৯ পারা থেকে পছন্দসই আয়াত বাছাই করে মুখস্থ শুরু করুন আজই । আপনার বয়স কোন বাধা হতে পারে না, যদি আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টা থাকে ।
মুখস্থ করার জন্য বয়স্কদের হয়তো শিশুদের চাইতে কয়েকগুন বেশী সময় লাগতে পারে, কিন্তু আল্লাহর নূরকে অন্তরে ধারন করার জন্য সময় ও শ্রম দেয়াতো অন্য যে কোন কাজের চাইতে অগ্রাধিকার এবং মনযোগ পাওয়ার যোগ্যতা রাখে । মনে রাখতে হবে, আল্লাহর কালাম হচ্ছে মানব ক্কালব বা অন্তরের অলংকার, শোভা ও অমূল্য সম্পদ । অন্তরকে শুভ্র, সুরভিত, আলোকিত ও সুন্দর করে তোলার জন্য আল্লাহর কালামের কোন বিকল্প নেই । তাই সময় নষ্ট না করে কুরআনের অজানা আয়াত কিংবা সুরা মুখস্থ করার সংগ্রামে আজই নেমে পড়ুন । সম্ভব হলে অর্থসহ । হয়ে উঠুন তিলোত্তমা অন্তরের অধিকারী ।
আপনাদের সুবিধার জন্য আল কুরআন থেকে একটা ছোট্ট কিন্তু পপুলার সিলেকশন দিচ্ছি । এসব আয়াতগুলি যাদের মুখস্থ নেই তারা মুখস্থ করে নিতে পারেন ।
আরেকটি কথা । কুরআনের সুরা মুখস্ত যদি করতেও পারেন, মনে রাখতে পারবেন না মোটেও, যদি না সেগুলি নিয়মিত তিলওয়াত করেন কিংবা নামাজে পাঠ করেন । দ্রুতগামি উটের চাইতেও দ্রুত স্মৃতি থেকে উবে যায় কুরআন । আল্লাহর রাসুল (সা) এভাবেই (সা) হুঁশিয়ার করেছেন ।
নির্বাচিত আয়াতের তালিকা ।
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
সুরা বাকারা, আয়াত ১- ১০, ১২৭-১২৯, ১৫২-১৫৭, ২৫৫, ২৮৫-২৮৬
সুরা আল ইমরান, আয়াত ২৬-২৭, ১৮৯-১৯৪
সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৭৭-৮২
সুরা ক্কাহাফ, আয়াত ১০৭-১১০
সুরা তোয়াহা, আয়াত ১-৬ ।
সুরা মুমিনুন, আয়াত ১-১১
সুরা লুকমান, আয়াত ১-৫
সুরা ইয়াসিন, আয়াত ৭৭-৮৩
সুরা যুমার, আয়াত ৭১-৭৫
সুরা হামিম আস সিজদা, আয়াত ৩০-৩৩
সুরা দুখান, আয়াত ১-৯
সুরা জাসিয়া, আয়াত ১-৫
সুরা আল ফাতাহ, আয়াত ২৭-২৯
সুরা আর রাহমান, আয়াত ১-২৩
সুরা হাদিদ, আয়াত ১-৬
সুরা হাশর, আয়াত ১৮-২৪
সুরা সফ, আয়াত ১-৪, ৭-১৩
সুরা জুমআ, আয়াত ১-৩, ৯-১১
সুরা তাগাবুন, আয়াত ১-৪
সুরা মূলক, আয়াত ১-৫
সুরা আল মুযযাম্মিল, আয়াত ১-৯
সুরা মুদ্দাসসির, আয়াত ১-৭
সুরা ইউনুস, আয়াত ১-৬ ।