স্ত্রীকে বলা হয় জীবন সঙ্গিনী, সুখ দুখের সাথী, ভালবাসার পরশ মনি, জীবনের পূর্ণতার প্রতীক ও স্বর্গীয় শান্তির পায়রা। একজন পুরুষের দিন শেষের শত ক্লান্তি স্ত্রীর মায়ার যাদুতে মুহূর্তে বিলীন হয়ে যায়। অথচ সেই স্ত্রীর সেবা করাটা বাঁকা চোখে দেখা হয়! নোংরা ব্যাপার! স্ত্রী যদি স্বামীর সংসারের সব কাজ করতে পারে তাহলে স্বামী স্ত্রীর কাজ করে দিলে সমস্যা কোথায়? স্বামীর পা ব্যথা করলে স্ত্রী যদি স্বামীর পা টিপে দিতে পারে, তাহলে স্ত্রীর পা ব্যথা করলে স্বামী পা টিপে দিলে সমস্যা কোথায়? স্ত্রী যদি স্বামীর সব বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে পারে, তাহলে স্ত্রীর সুখ-দুঃখের দিকে খেয়াল রাখলে সমস্যা কোথায়?
যেই স্ত্রী বিশ বছর বয়সে পিতা মাতাকে ছেড়ে এক সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে এসে তোমাকে আপন করে নিয়ে বেঁচে আছে। তোমার দুঃখে তার প্রাণ কেঁদে উঠে। তোমার সফলতায় তার প্রাণ ভরে যায়। যেই তোমাকে ভেবে ভেবে তার দিন রাত পার করে। তোমার একটু ক্লান্তিতে নিজের শক্তিটুকু দিয়ে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে। তোমার সামান্য অসুস্থে দিন রাত সেবা করে। তার অসুস্থের সময় তোমার সেবা করতে কুণ্ঠাবোধ কেন?
কেন স্ত্রীর কাপড় ধুয়ে দিতে, পা টিপে দিতে কেউ দেখলে তোমার অহমিকায় বাঁধে? কেন স্বামী তুমি মনে করে স্ত্রীর সেবা করলে তোমার জাত যাবে? কেন নিজেকে ছোট মনে কর? স্বামী তুমি যেন আহামরি কিছু, তোমার ক্রেডিট এবং বিরাট কর্ম করিয়াছে স্ত্রীর সেবা না করে! যেন রাজ্য জয় করিয়াছ!
সূরা বাকারায় আল্লাহ বলেন, ‘তারা(স্ত্রী) তোমাদের জন্য আবরণ এবং তোমরা(স্বামী) তাদের জন্য আবরণ।’ সুরা বাকারার অন্য এক জায়গায় স্বামী-স্ত্রীকে সমঝোতার মাধ্যমে সংসারের সকল সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে। কোরআনের কোথাও স্ত্রীদের সেবা করলে মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় এমন কথা বলা নেই। বরং কুরআনে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের আবরণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে সহযোগিতা করার, সেবা করার কথা বলা হয়েছে। একে অপরের প্রতি যত্নবান হওয়ার জন্য কুরআনে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। নারী একদিকে স্ত্রী, অন্যদিকে মমতাময়ী। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে স্ত্রীর একটু স্পর্শে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। এমন স্ত্রী অসুস্থ হলে তাকে সেবা করলে তোমার মানসিকতায় পচন ধরে কেন!
বিশুদ্ধ হাদিস সংকলন তিরমিজী বর্ণনায় মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের প্রতি কল্যাণকামী হও। তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম’। একজন পুরুষ সমাজে যতই ভাল হোক না কেন সেই যদি নিজ স্ত্রীর কাছে ভাল না হয় আল্লাহর কাছে সেই কখনো উত্তম হতে পারে। একজন স্বামীকে অবশ্যই তার স্ত্রীর চোখে ভালো হতে হবে। যে ব্যক্তি নিজের স্ত্রীর সেবা/সহযোগিতা করতে কোন্টাবোধ করে সেই কখনো উত্তম হতে পারেনা।
স্বামী স্ত্রী দু’জনে মিলেই সংসার। স্বামীর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন স্ত্রীর কর্তব। তেমনি স্ত্রীর প্রতি যত্নবান হওয়া একজন সত্যিকারের আদর্শ স্বামীর পরিচয়। স্ত্রীর সেবা করলে নিজের সম্মানহানি হয় এমন পুরুষ কখনো স্বামী হতে পারেনা। নিচু কুলাঙ্গার মন মানসিকতার চিন্তা পরিহার করে স্ত্রীর প্রতি যত্নবান হয়ে সুখ-শান্তির পথে হেঁটে চলা স্বামী প্রধান দায়িত্ব। এ দায়িত্বে অবহেলা করলে সংসারে অশান্তি নেমে আসে। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা, একে অপরের প্রতি সেবা করার মাধ্যমে সংসারে সুখের স্বর্গীয় তৃপ্তি আসে।
অনলাইন নিউজ পোর্টালের সম্পাদকীয় পাতায় দেখুন- স্ত্রীকে সেবা করার যৌক্তিকতা ( প্রাইম বিডি নিউজ)