পোখারা থেকে কাঠমান্ডু শহরে প্রবেশ করলাম বিকাল ৪ টায়। আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছি যে থামেলেই থাকবো।থামেল কাঠমান্ডুর পর্যটকদের প্রান কেন্দ্র। এখানে হোটেল থেকে শুরু করে রেস্তোরা,বার , কেনাকাটার দোকান সহ সব কিছুই আছে।যায়গাটি অনেক জমজমাট, রাতের বেলা হয়ে উঠে আর রঙিন।
রাতের থামেল
রাতের থামেলের ভিডিও
হারি, আমার দীর্ঘদিনের ফেসবুক বন্ধু।থামেলে তার হোটেল রয়েছে, তাই তার হোটেলেই উঠলাম। থামেলের প্রানকেন্দ্রে তার হোটেল।নেপালে বিদ্যুৎ বিরাট একট সমস্যা।দিনের বেশির ভাগ সময় কারেন্ট থাকে না। তাই জেনারেটর আছে কিনা দেখে তারপর হোটেলে উঠবেন।বন্ধুর হোটেলে জেনারেটর আর ওয়াইফাই পাওয়া গেছে। রাতে থামেলে হাটতে বের হলাম,রাস্তাগুলি তেমন বড় না, অনেকটা ঢাকার রাস্তার মত। বেশির ভাগ পর্যটক পশ্চিমা দেশের। তাদের জন্যই হয়ত জাপানি, ইতালিয়ান খাবারের অনেক রেস্তোরা চোখে পড়লো। এছাড়া ট্র্যাকিং করার জিনিস পত্রের প্রচুর দোকান রয়েছে।
থামেলের রঙিন সব মুখোশ
রাত বারার সাথে সাথে এখানে বারগুলি জমজমাট হয়ে উঠে। হঠাৎ দেখি এক রেস্তরায় বাংলায় লেখা হালাল খাবার, ডুকে পরলাম। খোঁজ খবর নিয়ে যানা গেল মালিক বাংলাদেশি, ঢাকা থেকে বাবুর্চি এনেছেন। দূর দেশে দেশি ভাই পেয়ে ভালই লাগলো, সেই সাথে খেয়ে নিলাম বিরিয়ানি!
পরেরদিন সকালে বের হলাম ঘুরতে, প্রথমেই গেলাম দরবার স্কয়ার। গতবছরের ভূমিকম্পে বেশ কিছু মন্দির ভেঙ্গে গেছে, তারপরেও অনেক মন্দির এর ইস্থাপনা এখনো বেঁচে আছে।
দরবার স্কয়ার
দরবার স্কয়ার
দরবার স্কয়ারের ভিডিও
নারায়ান্তি রয়াল প্যালেস। নেপালের রয়াল পরিবার এখানেই ২০০১ সালে রাজপুত্রের হাতে নিহত হন। এখন এটি যাদুঘর, সার্ক দেশের জন্য ২৫০ রুপী টিকিট।ভিতরে ছবি তুলা নিষেধ, তাই দূর থেকে একটাই ছবি তুলতে পেরেছিলাম।
নারায়ান্তি রয়াল প্যালেস
এরপর গেলাম সায়াম্ভাভুনাথ স্তূপা। পাহাড়ের উপর এই অসাধারণ মন্দিরটি অবস্থিত। কাঠমান্ডু গেলে এটা মিস করা বকামি হবে। এখানে একটি ছোট জলধারা আছে, অনেকেই বিশ্বাস করেন এখানে কিছু উইশ করে পয়সা ফেললে তার মনের আশা পূর্ণ হয়। তাইতো দেখলাম প্রচুর পয়সা ভাসছে সেখানে। এখনে পরিচয় হল ৩ জন ইন্দনেশিয়ান মেয়ের সাথে।আমি তাদের ছবি তুলে দেবার অনুরধ করেছিলাম, তারপর তারাই আমার সাথে খাতির করে ফেলল। কোথা থেকে আসছ ? বাংলাদেশ এখান থেকে কতদূর? আমার সাথে তারাও ছবি তুলল, তারপর বলে নিশ্চয়ই ফেসবুকে আছ, অ্যাড করে নাও! বাংলাদেশে গেলে তোমার সাথে যোগাযোগ করব। আমিও তাদের সাদরে বাংলাদেশ আসার দাওয়াত দিয়ে দিলাম।
সায়াম্ভাভুনাথ স্তূপা
তাদের সাথে আমার ছবি।
সায়াম্ভাভুনাথ স্তূপার ভিডিও
কপান আশ্রম। কাঠমান্ডু শহর থেকে বেশ দূরে, ট্যাক্সি করে গিয়েছিলাম। এখানে বুদ্ধ সন্ন্যাসীরা পরাশুনা করে। শহড়ের কোলাহল মুক্ত পাহাড়ের উপর নিরিবিলিতে থাকে এরা। চাইলে আপনিও তাদের সাথে থাকতে পারবেন। ১০০ $ এর বিনিময়ে ভিবিন্ন কোর্স আছে এখনে। মানুষিক শান্তির জন্য অনেকেই এখনে কিছুদিন কাটিয়ে যায়।
কপান আশ্রম
ফেরার পথে আমি ট্যাক্সি না নিয়ে লোকাল লেগুনায় বসে পড়লাম। ঠিক যেমন ঢাকায় চলে তেমনি দেখতে। পার্থক্য কিছু আছে, যেমন এখানে অনেক লেগুনার চালক মহিলা! হেল্পার নেই আর সবচেয়ে বিপদজনক ব্যাপার হচ্ছে ২ সারির মাঝখানে সামান্য যে যায়গা ফাকা থাকে, সেখানে ৩ জন কমর আর মাথা বেঁকিয়ে দাড়ায়!! এমনকি মহিলারাও।আর ঢাকার মত পিছনে ৩/৪ জন ঝুলে থাকে। যাইহোক আমি ভুল লেগুনায় উঠে পরছিলাম যা অনেক দূরে গিয়ে অনুধাবন করতে পারি। সঠিক লেগুনায় উঠার পর পরিচয় হয় শোভা নামের এক মহিলার সাথে, যিনি হিন্দি আর নেপালি ভাষায় কথা বলছিলেন আমার সাথে। যার অনেক কথাই আমি বুঝিনি, কিন্তু এটা বুঝলাম তিনি বাংলদেশে একবার এসেছিলেন এবং অনেক ভাল লেগেছিল।ঢাকার খাবারের খুব প্রশংসা করলেন, জানালেন আবারো যাবার ইচ্ছা আছে। তিনি জোর করে আমার ভাড়া নিজেই দিলেন। থামেল যেতে হলে আমাকে এবার রিক্সা নিতে হবে,এটার ভাড়াও উনি দিলেন, এত মানা করলাম কিছুতেই উনি তা শুনলেন না। নেপালের মানুষগুলি এমনি, সহজ সরল। এদের সমস্যা অনেক, অভাব অনেক কিন্তু মনটা অন্নপূর্ণার মত সাদা।
ভক্তপুর গেলাম তারপরের দিন। এটা নেপালের প্রাচীন রাজধানী। কাঠমান্ডু শহর থেকে বাসে ২৫ রুপী দিয়ে যাওয়া যায়। প্রেবেশ করেই বুঝা গেল আসলেই এই ভক্তপুর বেশ প্রাচীন। রাস্তা, বাসা সব আগেরদিনের মত, মনে হচ্ছিলো অতীতে ফিরে গিয়েছি। ভূমিকম্পে বেশ কিছু মন্দিরের ক্ষতি হলেও অনেক মন্দির এখনো মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে।
ভূমিকম্পে বিধস্ত স্থাপনা
ভক্তপুরের ভিডিও
সেই রাতে হারির সাথে ডিনার করলাম। একটা খারাপ খবর দিলে সে, কাল পরিবহণ ধর্মঘট! বলে কি !! আমার কাল ফ্লাইট, আমি এয়ারপোর্ট যাবো কি করে! থামেল থেকে এয়ারপোর্ট ৫/৬ কিমি দূরে। হারি আমাকে আশ্বস্ত করে বলল তোমাকে আমি আমার বেক্তিগত কারে এয়ারপোর্টে নামিয়ে দিব, চিন্তা কর না। হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।
পরের দিন হারি আমাকে এয়ারপোর্টে ড্রপ করে দিল। নেপালে আসার ৮ দিন হয়েগেছে আর মধ্যা। ঢাকায় এইবার ফিরতে হবে, প্লেনে বসে পড়লাম এইবার ডানদিকে। আসার সময় হিমালয় মিস করেছিলাম তাই এইবার শেষ চেষ্টা। প্লেন ছাড়ার ৩০ মিনিট পার হয়ে গেল দেখা দিচ্ছে না, আশা ছেড়ে দিয়েছি এমন সময় দূরে অনেক দূরে দেখতে পেলাম তাহাকে! মেঘের মধ্যা ডুবে থাকা দানবের মাথা বের হয়ে আছে। শেষ বিকালের আলোতে আকাশের অপরূপ দৃশ্য আর তাহার রুপ আমি উপভোগ করলাম। সবসময় ছবি তুলা গুরুত্বপূর্ণ নয়, কখনো কখনো তা উপভোগ করাই উত্তম।
-সমাপ্ত-
নেপাল ভ্রমন- যাত্রার শুরু ও অপূর্ব পোখারা
কাঠমান্ডুর সম্পূর্ণ ছবির অ্যালবাম
পোখারার সম্পূর্ণ ছবির অ্যালবাম
আমার ইউটিউব লিংক
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:৩৪