ফজলুল মিরাজ ।
কাদাঃ মৃত্তিকার সঙ্গে তরলের প্রেম মাখামাখির চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালে কখনো কালচে বা বাদামী আকার ধারন করে , এটা কখনো আঠালো আবার কখনো ছরাবরা (বিশৃঙ্খল) অবস্থায় উপনি্ত হয়, মৃত্তিকার এহেন কোমল রূপকে আমরা সাধারনত কাদা বলিয়া থাকি। ভদ্দর নোকেরা ( ভদ্র লোকেরা) সাধারনত রাস্তা গাঁটে এ কাদা এড়াইয়া চলেন, কারন ইহা একবার গায়ে লাগিলে বেরাচেরা ( বিশ্রী) অবস্থা ধারন করে। মৃত্তিকা শিল্পিরা উন্নত মানের কাদাকে কাই বলিয়া থাকে , তাহারা এই কাই দিয়া মানব সভ্যতার কল্যানে হাড়ি পাতিল বাসন মাটির খেলনা তৈরী করেন। কাদা থেকেই ইট , তা থেকে অট্রালিকা। বেশিরভাগ সৃষ্টির ক্ষেত্রেই মাটিকে প্রথমে কাদায় রুপান্তরিত করতে হয়।############
প্রকারভেদঃ এলেমাটি , বেলেমাটি , দোয়াস মাটি ,--- মাটির প্রকারভেদ অনুসারে কাদার গুনাগুন নির্ভরশীল, ইহা ছাড়া তরলের প্রকারভেদ অনুসারে ইহার বৈশিষ্ট উল্লেখ যোগ্য, যেমন কুকুর , শিয়াল , এবং মানুষের বর্জ তরল কাদার গুন বাড়িয়ে বা কমিয়ে দিতে পারে।###মৃত্তিকার সহিত আবর্জনা , গাছের পাতা, মানুষ্য এবং পশুর বর্জ মিশ্রিত হয়ে কাদাকে উন্নত মানের জৈব সারে পরিনত করতে পারে । তবে আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় কাদা ছোড়াছুড়ি , তাই ছোড়াছুড়ি করা কাদার প্রকার ভেদ খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা মাত্র। এ ক্ষেত্রে কাদার প্রকারভেদ থেকে গুরুত্বপুর্ন যিনি ছুড়বেন তার মেজাজ মর্জির , জ্ঞান এবং দক্ষতার উপর। তিনি কি আবর্জনা যুক্ত কাদা ধরতে অভ্যস্থ না কাই ধরতে অভ্যস্থ তার উপর।###########
#ছোড়াছুড়িঃ বঙ্গ দেশে কোথাও কোথাও ছেলেকে ছোড়া আর মেয়েকে ছুড়ি বলা হয়। ছোড়া এবং ছুড়ি যদিও ছোড়াছুড়ি থেকে সম্পুর্ন আলাদা শব্দ তবু ও ছোড়া এবং ছুড়ি যেমন প্রেমের বৈপরীত্যের সুমধুর সমার্থক, তেমনি কাদা ছোড়াছুড়িতে দুই পক্ষের সরব অংশগ্রহন আবশ্যক। কেউ কাদা ছুড়ল আর অন্য পক্ষ বসে থাকল তাহলে কিন্তু খেলা জমবে না । ছোড়া এবং ছুড়ি দুজনকেই প্রেমের খেলায় সমান উত্তেজনা প্রদর্শন করতে হয় , নয়ত ভালবাসা জমে না। কাদা ছোড়াছুড়ির জন্য আপনাকে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। এ অর্ধ তরল বস্তুটিকে হাতের মুঠোয় রাখা খুবই কষ্টের ,আকার পরিবর্তনশীল এই বস্তুটি হাতের আঙ্গুলির ফাঁক গলিয়ে বাহির হইয়া যাইতে চায়, তাই আঙ্গুলির চিপা চাপা বন্ধ করিয়া ইহাকে হাতে তুলিয়ে হয় এরপর হাত টান টান করিয়া চোখ মুখ বন্ধ করিয়া ইহাকে ছুড়তে হয়। ভুল করিলে আঙ্গুলির ফাঁক গলিয়া কাদা আপন চোখ এবং মুখের বারোটা বাজিয়ে দিতে সক্ষম। এর চেয়ে বড় কথা চক্ষু বন্ধ করিলে , চক্ষু লজ্জার বিষয়টি ধামা চাপা পড়িয়ে যায়। কথিত আছে কাকেরা নাকি চক্ষু বন্ধু করিয়া ( গু) করে , ভাবে নিজেরা দেখিতেছেনা তাই অন্যরা ও দেখিতেছেনা। ###########
#কারনঃ কাদা ছোড়াছুড়ির ভিবিন্ন কারন থাকতে পারে যেমন অসম প্রতিযোগিতা, সামাজিক দ্বন্ধ , ব্যক্তি সার্থ, অযোগ্যতা,অথবা ভাইসাব ভাইসাব খেলা ইত্যাদি । আপনারা হয়তো জানতে চাইবেন ভাইসাব ভাইসাব খেলা কি? ( শালা , দুলাভাই একের উপর অন্যের অধিকারের বাড়াবাড়ি সব সময় থাকে, তাই তারা যখন ঝগড়া করে সমাজকে চুপ থাকতে হয় , তারা দিনে সমাজের সামনে ঝগড়া করে রাতে একসাথে ডিনার করে)#####
#লক্ষনঃ আপনি আপনার দল/ আপনার প্রতিপক্ষ কর্মে , সৃষ্টিতে অপ্রতিদ্বন্ধি। কোন ভাবেই ভাল কাজকে হেলা করা যাচ্ছে না , সর্বশেষ চিকিৎসা কাদা ছোড়াছুড়ি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, সামাজিক অনুষ্ঠানে ,সংসদে, মিডিয়ায় প্রকাশ হবে আপনি ২ বছর বয়সে নেংটা ছিলেন তারা দেখেছে তাই তারা আপনাকে এখন ও দেখলে নেংটো দেখতে পায়।আপনি ও তাতে মজা পেয়ে গেলেন এবং ভাবলেন সবাই যেহেতু নেংটো দেখতে পায় কাপড় পরে লাভ কি? আপনি তাদের কি কি গোপনাঙ্গ দেখেছেন তা বলতে মজা পাচ্ছেন , আপনার এবং প্রতিপক্ষের আশেপাশে উস্কানি দেয়ার লোক জুটে গেল ।বুঝবেন খেলা জমে গেছে######।
######প্রতিকারঃ prevention is better than cure বাক্যটি বোধহয় কাদা ছোড়াছুড়ির জন্য প্রযোজ্য।
######উপকারীতাঃ কাদা ছোড়াছড়ির উপকারীতাই বেশি , অপকারীতা খুবই সামান্য।###১। সমাজ জানতে পারে কার শক্তি কত, কে কোন প্রকার কাদা ছুড়তে পারদর্শি, কোন পদ্ধতিতে কাদা ছুড়লে বেশি কার্যকর।###২। কাদা গায়ে লাগলে গোসল অত্যাবশ্যক, তাতে চেহারার মে-কাপ ও ধুয়ে ফেলতে হয়, সমাজ বুঝতে পারে কার চেহারায় কত ফাউন্ডেশন দেয়া মে -কাপ ছিল। আসল চেহারা বের হয়ে আসে।###৩।যারা কাদা ছোড়াছুড়ি করেন, সমাজের নিরিহ লোকেরা তাদের ভয় পাওয়া শুরু করেন, আর বিজ্ঞরা তাদের এড়িয়ে চলেন, ফলে তাদের সমাজিক নেতৃত্ব অপ্রতিদ্বদ্ধি হয়ে উঠে। ###৪। মিডিয়া বা সামাজিক মাধ্যমে, সমাজে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা যায় ।######
#অপকারীতাঃ কাদা ছুড়লে এটা ফেরত আসে, ফলে আপনার চরিত্রের কদর্য সমাজে প্রকাশিত হয়ে পড়ে। ভাল মানুষের গায়ে কাদা ছুড়লে সমাজ আপনাকে বর্জন করতে পারে।####
##উপসংহারঃ সভ্যতার কল্যানে কাদা ছোড়াছুড়ি একটি অত্যাবশ্যক পক্রিয়া।ব্যক্তি থেকে সমাজ , সমাজ থেকে রাষ্ট্র , এ পক্রিয়া অনবদ্য চলছে চলবে। নিজে কাদা ছুড়ুন, অন্যকে কাদা ছুড়তে সাহায্য করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ৯:০২