মানবতা যেখানে ভুলন্ঠিত
ফজলুল মিরাজ
"মুক্তির ও মন্দির সোপান তলে
কত প্রান হল বলিদান
লেখা আছে অশ্রু জলে।"
ইতিহাসের সাক্ষী বীরদের আত্নত্যাগ । বিজয়ীদের সবাই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে আর পরাজিতদের প্রতি থাকে ঘৃনা। বেশিরভাগই অধিকারের লড়াই । আরবরা যখন ভারতবর্ষ আক্রমন করে তখন যেমন লড়াই হয়েছিল তেমনি ফরাসীরা ইংরেজরা ভারতবর্ষে আরবদের হটিয়ে শাষন শোষন প্রতিষ্টা করে। যার ফলশ্রুতিতে ভারতবর্ষের প্রতিটি মানুষের মনে জায়গা করে নেয় মুক্তির চিন্তা । শুরু হয় বিদ্রোহ নামে এক ভয়াবহ মানসিক অসুস্থতা। বিদ্রোহ কে মানসিক অসুস্থতা বলা কিছুটা বেমানান । আপনার মনে যদি বিদ্রোহের বীজ বপন হয় আপনি কি সুস্থ ভাবে মুক্তচিন্তায় বেড়ে উঠতে পারেন? তাই যে সমাজে শোষনের নজির বেশি সে সমাজে গোঁয়ারের সংখ্যা বেশী ।
খন্ডচিত্র - ১
আপনি শান্ত সুবোধ ছেলে , পড়াশোনা আপনার মুল বিষয়। কলেজ করে বাড়ি ফেরেন । কেউ আপনাকে অযথা বিরক্ত করল ,আপনি তাকে বুদ্ধি দিয়ে এড়িয়ে গেলেন, আপনি বুদ্ধিমান । বিরক্ত করা আপনার কাছে অসহ্য মনে হল , আপনার মাথায় রক্ত ছাড়া দিয়ে উঠল , এ রক্ত ছাড়া দেয়া আপনার মনস্তত্তকে বদলে দিতে পারে, আর আপনি যদি প্রতিশোধের নেশায় পড়েন তো কথাই নেই । আপনার মাথায় নকশাল আন্দোলন বা ইসলামি আন্দোলনের বীজ ডুকিয়ে দিল। অসময়ে আপনার দেশপ্রেম জিহাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। এ অসহ্য সীমাহীন দেশপ্রেম , জিহাদ , অসময়ে মাথা চাড়া দেয়া আপনার মনস্তত্তকে সারা জীবনের জন্য বদলে দিতে পারে। আপনি যতই আপনার মুল কাজ পড়াশোনা থেকে দূরে যাচ্ছেন ততই আপনার দলীয় কর্মকান্ড বাড়ছে । আপনি শুধু একা বিপথগামী হচ্ছেন না , অন্যদের ও অনুপ্রানিত করছেন।
খন্ডচিত্র -২
রাষ্ট্র তার অবকাঠোমোতে চলে। যোগ্যতম ব্যক্তিরাই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে সেই রাষ্ট্রের উন্নতি নিশ্চিত । প্রতিটি মন্ত্রনালয় বিভাগ জরিপের ভিত্তিতে জনগনের উন্নয়নের খাত নিশ্চিত করেন। তাতে যেমন রাস্তার দাবী স্থান পায় তেমনি রাষ্ট্রিয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সূদৃড় রূপরেখা গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রাখে।
রাজপথের দাবী যখন দৃষ্টান্ত হয়ে পড়ে তখন তা রাষ্ট্রের জন্য কতটা বিপদ জনক তা স্বাভাবিক দৃষ্টি ভঙ্গিতে বোধগম্য নহে। প্রতিটি আন্দোলনে ভাংচুর অবধারিত। রাষ্ট্রিয় অবকাঠামো যখন দুর্বল হয়ে পড়ে তখন জনগনকে নিশ্চিত ভাবে রাজপথে আশ্রয় নিতে হয়। রাষ্ট্রের সুবৃহৎ অবকাঠামোর নেতৃত্বে থাকেন রাজনীতিবিদরা । যে রাষ্ট্রের অবকাঠামো যত শক্ত , রাজনীতিবিদরা যত বেশি দেশপ্রেমিক , বিচক্ষন , সে রাষ্ট্র তত বেশি উন্নত।
রাজপথে হোক আর টকশোতে হোক সরকারের গঠনমুলক সমালোচনায় আলোকপাত করা জরুরী। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক স্থানে সঠিক কথা বলা। পা ভাঙ্গার জন্য চোখের ঔষধ দিলে প্রতিকার হতে পারে কিন্তু পা ভালো হয় না। রাজপথে আন্দোলনে সামর্থবান লোকেরা যদি রাষ্ট্রের পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে যান, তখন তারা কতটা বিচক্ষন রাষ্ট্র পরিচালনায় তা রাষ্ট্রকেই টের পেতে হয়।
খন্ডচিত্র -৩
বুদ্ধিমান অবিবেচক
আমাদের দেশের মানুষ দেশপ্রেমিক বুদ্ধিমান । আমরা কখনো কখনো অবিবেচক। সম্প্রতি পহেলা বৈশাখে অনভিপ্রেত ঘটনা আমাদের অনুভুতিতে প্রচন্ড ধাক্কা দিয়ে গেল। প্রত্যেকে তাদের অভিব্যক্তির প্রকাশ ভিবিন্ন ভাবে করছেন। আমরা এহেন কর্মকে ঘৃনা করি । যে কোন ঘটনা ভিবিন্ন ভাবে দেখা যায়, উপস্থাপন করা যায়। আমি আমার চিন্তা , মেধা অনুসারে চিন্তা করি , প্রত্যেকেই তাই করে।
এ ঘটনায় আমরা যাদের দিকে অভিযোগের তীর দেখতে পেলাম
প্রক্টর - ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পুলিশ প্রশাষন, এবং যারা প্রকৃত আসামী। প্রকৃত আসামীদের কেউ বলছেন - ছাত্রলীগ , কেঊ বলছেন আনসার উল্লাহ বাংলা টিম। এক একটি ঘটনা পুর্ন তদন্ত ছাড়া কাউকে দোষারোপ করা কতটা যুক্তি সংগত । উক্ত ঘটনার অনেক কারন ও রুপরেখা থাকতে পারে।
এটা রাজনীতি হোক আর পরিকল্পিত হোক ,বাংলাদেশকে গোঁড়ামি/ভন্ডামীর মোড়কে রাখার অসুভ পরিকল্পনা বার বার পরাজিত, আবারো পরাজিত হবে ইনশা - আল্লাহ। আমাদের স্বরন রাখতে হবে আমরা একজন বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর , একজন পুলিশকে যথাযথ সন্মান দিয়ে কথা বলছি। আমরা যদি নিজেদের সম্নান দিয়ে কথা বলতে না পারি অন্যরা আমাদের কোন দিন সন্মান দিবে না। উক্ত ঘটনা আমাদের আবারো জাগ্রত করে যাক।
স্বাধিনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন।
সর্বশেষ
আমরা ইতিহাসের দাশত্ব করি । ইতিহাস বিজয়ীদের স্বরন করে। আমরাই এদেশে ভোট দিয়ে ৭১ এর পরাজিতদের মন্ত্রি বানিয়েছি। বুদ্ধিজীবি সহ সাধারন মানুষকে হত্যাকারীদের ক্ষমতায় বসিয়েছি ফুলের মালা দিয়ে। যুদ্ধে জয়লাভ করলে ও কুটনীতিতে আমরা পরাজিতই ছিলাম। বাঙ্গালীর জাগরন শুরু হয়ে গেছে । এ জাগরন রোখার সাধ্য কার। আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা ভাল কাজের প্রশংসা করছি। পার্বত্য শান্তি চুক্তির মত কাজকে বাহবা দিতে দলমত ভুলে যেতে হবে। বিরোধী দল যখন শান্তি পুর্ন আন্দোলন করে তাকে দল মত নির্বিশেষে বাহবা দিতে হবে। আন্দোলন ব্যর্থ বলে উসকে দেয়ার রাজনীতি আমাদের পরিহার করতে হবে। মানুষ মারার রাজনীতি আমাদের পরিহার করতে হবে। একবার ক্ষমতায় এসে কয়েকপুরুষের কামাই করার রাজনীতি বন্ধকরে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তেমনি সরকার ও সরকারি দল দু দুটি ভিন্ন সত্তা । মন্ত্রিপরিষদ রাষ্ট্রের বেতনভুক্ত কর্মচারী তারা সকল দলের লোকের মন্ত্রি তারা যেন অহেতুক মন্তব্য করে জাতিকে হাস্যরসে পরিনত না করেন। সরকারি দল বিরোধি দল মিলেই আমাদের সোনার বাংলাদেশ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৫ রাত ৮:৪২