বিচিত্র চিন্তা
[sb]প্রয়োজন অপ্রয়োজন সমীপেসু
ফজলুল মিরাজ
আমি অতি অল্প বুদ্ধির লোক । প্রত্যেক মানুষের অল্প বেশি বুদ্ধির জিলিক থাকে । আমার এ অল্প বুদ্ধির কিছু জিলিক দেখার জন্য আমি নিজেই উদগ্রীব থাকি। অল্প বুদ্ধির জিলিক অনেক বুদ্ধির মাঝে দেখা যায় না , তাই নিবৃতে আমার বসবাস। দু, চার লাইন কবিতা লিখে মুগ্ধতা নিয়ে পড়ি । জোরে বলিউমে গান ছেড়ে উদোম নৃত্য , মনে মনে বলি ভালই আছি। মাঝে মাঝে দেশ চিন্তা মাথায় আসে । তখন অল্প বুদ্ধির কলাম লিখি । প্রয়োজনে খোদ প্রধানমন্ত্রির কড়া সমালোচনা করে দিই। অল্প বুদ্ধির লোকের সমালোচনায় সরকার বা বিরোধীদলের কিছু আসে যায় না । কিছু অল্প বুদ্ধির মানুষের হয়ত ভাবের উদয় হয় , দেশপ্রেম জাগে । তাও বেশি দিন থাকে না , অভাব যখন দরজা দিয়ে প্রবেশ করে দেশপ্রেম তখন জানালা খোজে। আমি প্রবাসে বসে দেশের কথা যা ভাবি , দেশে গেলে আমার ভাবনা আমুল পরিবর্তন করতে হয় । এরই নাম বাস্তবতা।
তবে বুদ্ধিমানরা বুদ্ধির সংযত ব্যাবহার করেন । অথবা বলা যায় যিনি বুদ্ধির সংযত ব্যাবহার করেন তিনিই বুদ্ধিমান। বুদ্ধিমানরা কি কি করেন তার কিছু কিছু আমি আমার অল্প বুদ্ধি দিয়ে দেখতে পাই।
১। সংযত বুদ্ধির বক্তিতা দেন। তবে রাজপথে থাকেন না । যারা আহত বা নিহত হন তারা অল্প বুদ্ধির লোক । অল্প বুদ্ধির লোক থাকাতে আর না থাকাতে পার্থক্য কম।
২. বুদ্ধিমানদের পথ প্রদর্শকেরা বক্তিতা ও দেন না । স্ক্রিপ্ট লিখে দেন , যা জনতার উপর প্রয়োগ হয় । উনাদেরকে আমরা বুদ্ধিজীবি বলি।
এই জরাজীর্ন দেশটা তাহাদের বুদ্ধিতে আর আমাদের নেতা নেতৃদের ত্যাগেই টিকিয়া আছে ?!!? আমার কিছু বন্ধু বলেছিল দেশটা নাকি কেউ চালায় না , এমনিতেই চলে , আল্লাহর রহমতে টিকিয়া আছে। আমি তাদের কথা বুঝতে পারি নাই । আমি অল্পবুদ্ধির লোক তো তাই।
ইদানিং আমার বিপ্লব শব্দটার প্রতি ঘৃনা ধরে গেছে । বোধহয় অষ্টেলিয়ার আবহাওয়া বিপ্লবের জন্য সাস্থকর নয়। এ দেশে বিপ্লব নেই তা বলা যাবে না। তবে বিপ্লবে আহত বা নিহত হবার ঘটনা তুলনামুলক নেই। প্রতিবাদ হয় শান্তিপুর্ন । বাংলাদেশের আবহাওয়াটাই বিপ্লবের জন্য সুসাস্থকর। আমি যখন দেশে যাই তখন কিছু কিছু অনিয়ম দেখলে আমার নিজের মনই বিপ্লবি হয়ে উঠে । তাই সরকার বা বিরোধীদল বা আপামর জনতার দোষ দিয়ে লাভ নেই । বরং আবহাওয়াটাই বিপ্লবি । যারা এ পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরে আছেন তারা যে খুব ধৈর্যশীল তা বলা যাবে না , তাদের অনুভুতি ভোঁতা হয়ে গেছে বলা যায়।
মাছ ধরতে পছন্দ করেন না এমন লোক হাতে গোনা। তবে বরসিতে মাছ না ধরলে ধৈর্য ধরে বসে থাকার লোক হাতে গোনা। ছোটবেলায় আমি ও মাঝে মাঝে বরসিতে মাছ ধরতাম। বরসির মাছ ধরার নিয়ম আগের রাতে নিদিষ্ট স্থানে মাছের জন্য সুগন্ধি খাবার দিয়ে মাছকে ডাকা হয় যাকে গ্রাম্য ভাষায় বলা হয় চারা দেয়া। পরের দিন মাছ আপনার চারায় ভাল খাবারের লোভে আসে । আপনি বরসি পেলেন মাছ আপনার বুদ্ধিতে পরাজিত হয়। আপনার চারার আশেপাশে মাছের বুদবুদ বা লাফালাফি দেখলে আপনি বুঝতে পারেন আপনার কতবেশি মাছ পাবার সম্ভাবনা আছে।আবার আপনার চারা শক্তি শালী না হলে মাছ কম আসবে। আপনি প্রথমে বরসিতে আটা দিলেন মাছ পেলেন না । তারপর দিলেন কেঁচো তাও মাছ পেলেন না । তারপর দিলেন পিপড়ার ডিম মাছ পাচ্ছেন দু , একটা । একবন্ধু এসে বলল , এক কাজ কর হাত বরসী নাও এখন বর্ষাকাল গভীর জলে মাছ কম থাকে শুধু বড় বড় মাছ গভীর জলে থাকে। আপনি হাত বরসী নিলেন , এখন অনেক অনেক মাছ পাচ্ছেন। আমার এক বন্ধু ছিল পাগলাটে সে যদি মাছ না পেত সে পুকুরের পানিতে লাঠি দিয়ে পিটা শুরু করত।
প্রিয় পাঠক আমার মাছ ধরার গল্প রাজনৈতিক দলের লোক সমাগম করার পদ্ধতি আর পেট্রোল বোমা পদ্ধতির সাথে মিলে যায় তবে দুঃখিত।
তবে আপামর জনগন যে অল্প পানির মাছ এটা আমি নির্শ্চিত। তা না হলে নিজের দেশের সম্পদ ভাংচুর করা এবং নিজের সমাজকে, জীবনকে বিপদের মুখে ঠেলে দেয়া অসম্ভব।
ইদানিং মাঠ দখলের রাজনীতি আমার সেই বরসি প্রতিযোগিতার কথা মনে পড়ে। দুই দলই চারা দিচ্ছেন , চারায় মাছ আসছে । বুদ্ধিজীবিরা বুদ্ধি দিচ্ছেন । মাছ ধরা পড়ছে। চারায় মাছ না আসলে পেট্রোল বোমা ছুড়ছেন মাছ ধরা পড়তেই হবে।
বুদ্ধিজীবি হতে হলে আপনাকে লবি করতে হয়। লবি না করলে আপনি যে বুদ্ধিজীবি সে পরিচয় হারিয়ে যায়। টিকিয়া থাকাই চরম সার্থকতা । আপনি যদি নিজের বুদ্ধি দিয়ে নিজেই টিকতে না পারেন আপনার বুদ্ধিতে দেশ টিকবে কিভাবে ( যুক্তিপুর্ন )।
এমন যুক্তির বিপক্ষে গিয়ে ও আমি খোদার কাছে প্রার্থনা করি তাহাদের যেন শুভ বুদ্ধির উদয় হয় । মুক্ত চিন্তাশীল বুদ্ধিজীবী জন্ম নিক । যাহারা সরকার বিরোধিদলকে দেশের স্বার্থ চিন্তা করে বুদ্ধি দেবেন । আমরা সাধারন জনতা অল্পবুদ্ধি নিয়ে আপনাদের সাথে একাত্ব। আমাদের এই বাংলা দেশে কোন বিভেদ নেই । আমরা ভাই ভাই। বিংশ শতাব্দীর গনতন্ত্র প্রতিষ্টা করে যান। আপনাদের আলোয় যেন যুব সমাজ আগামীর স্বপ্ন দেখতে পায়।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:০১