মাল্টিলেভেল - ডান হাত বাম হাত
ফজলুল মিরাজ
মাল্টি লেভেল মার্কেটিং এবং আমার অভিজ্ঞতা । বিশ্বজুড়ে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং অনুমোদিত। বিশ্বের বাঘা বাঘা ব্যাবসায়ীরা এ প্রকার মার্কেটিং নিয়ন্ত্রন করেন। কোটি কোটি লোক এ ব্যাবসার সাথে যুক্ত । তাই এ ব্যাবসার বৈধতা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই । কোন বুদ্ধিমান লোক এর বিপক্ষে যুক্তি সংগত লিখা লিখবে না। তবে যারা আমার মত বোকা তারা অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে কার্পন্য করবে না। আপনার লিখার সুবাধে কেউ যদি উপকৃত হয় সে হয়ত আপনাকে সন্মান করবে কিন্তু আপনার পিঠ বাঁচাতে আসবে না। তবে যে কোটি কোটি লোক এ ব্যাবসার সাথে জড়িত সবাই আপনাকে ঘৃনা করবে। এমন কি সুবিধামত ফেলে ---------। বুঝে নিন খালিস্থানটা । কিন্তু বোকারা যখন কলম হাতে নেয় তখন আরো বোকা হয়ে যায় । পেটের সব কথা হড় হড় করে লিখে ফেলে ।
তবে বোকারা সত্যটাই লিখে । তাই বোকাদের কথা আমলে নেয়ার কোন কারন নেই যতক্ষন আপনি নিজের উপর আস্থাশীল । নিজের বুদ্ধিমত্তাই আপনার চালিকা শক্তি , আপনি বুদ্ধিমান। আপনি ও যদি বোকা হন তবে অন্য বোকার লেখা আপনার ভাল লেগে ও যেতে পারে । আবার লিখা পড়ে আপনি ভাবলেন লেখক সঠিক, আপনি যুক্তি গুলো অনুসরন করলেন । কয়েক বছর পর আপনার মনে হল এ যুক্তি গুলো না ধরলে আমি যে কোন ভাবেই হোক অনেক ভাল অবস্থানে থাকতাম । মনে রাখবেন লেখক যত বোকাই হোন তিনি তার দায় নেবেন না। পৃথিবীটাই এমন ব্যার্থতার দায় আপনার আমার একান্তই নিজের। সফলতা সবার।
আমার বাবার একটি উপদেশ ছিল , হঠাৎ করে কোন কিছু পাওয়ার চেষ্টা করো না , আগে তা পাওয়ার জন্য যতেষ্ট যোগ্যতা অর্জন করো। আমি যে এ উপদেশটি সব সময় মানতে পারি নাই তা সত্য, তবে যখনই মানতে পারি নাই তখনি বিপদে পড়েছি । সে ভিন্ন ভিন্ন কাহিনী, সে ভিন্ন ভিন্ন কাহিনি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে পাঠকদের সামনে উপস্থিত হবার ইচ্ছা আছে । এ লিখাটির বিষয় ভিন্ন ।
আমি তখন অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র। ঐ সময়ের আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু , প্রিয় বন্ধু লুৎফর রহমান টিপু । (বর্তমানে লন্ডন প্রবাসী, এ ছেলেটার সরলতায় আন্তরিকতায় আমি তখন রীতিমত মুগ্ধ ) । আমি তখন লজিং থেকে ছাত্র পড়াই , টিউশানী করে নিজের পড়ার খরচ জোগাড় করতে হয়, আমার বাবা চাইলেন আমি যেন সংগ্রাম করে পরিশ্রম করে জীবনকে শিখি , টিপুর বাবা প্রয়াত, সে ও টিউশানী করে পড়ার খরচ জোগাড় করে। টিপু যতটা সরল আমি ততটাই চটপটে । এখন আমি যতটা বোকা তখন ততটাই চটপটে ছিলাম। সবাই আমাকে চৌকস ভাবত। টিপু একদিন বলল আমাদেরকে ও তো কিছু করতে হবে। এভাবে আর কত । টিউশানী করতে করতে ক্লান্ত। আমি বললাম তুই কি করতে চাস। সে আমাকে শিশুর মত বোঝাল মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কি। সে বলল ধর তোর ডান হাত বাম হাত দু,জন থাকবে। তাদের ডান হাত বাম হাত দু,জন করে চার জন। পিরামিড আকারে আট জন , ষোল জন , এভাবে সার্কেল পুর্ন হবে। নতুন সার্কেল শুরু হবে। কমিশন কিভাবে আসবে । কিভাবে দু,জন দক্ষ সেলস ম্যান নিয়োগের মাধ্যমে এবং তাদের সঠিক ভাবে পরিচালনার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা আয় করা যায়। বললাম বন্ধু তুমি তো জিনিয়াস এ বুদ্ধি কোথায় ফেলে। মার্কেটিং ই তো , কমিশনটা যথাযথ বন্টন সাথে বিরাট স্বপ্ন । কিন্তু মনে থাকে আগে কোটি টাকার যোগ্যতা অর্জন করো।
আমার বন্ধু আমাকে বলল সে যথারীতি ৭০০ টাকা দিয়ে মেম্বার হয়েছে। তার বাম হাত ও ঠিক। ডান হাত দরকার । প্রথমে তোমাকে মেম্বার হতে হবে , পরে ১৫০০ টাকা দিয়ে বস্তু সামগ্রী কিনতে হবে। পয়েন্ট সিস্টেম , কিভাবে গোল্ড , ডায়মন্ড হয়। বড় বড় কোম্পানিরা মার্কেটিং এ অনেক টাকা খরচ করে এ কোম্পানি অভ্যন্তরিন মার্কেটিং এ সেই টাকা বাঁচিয়ে ফেলে, সেই টাকাই কমিশন হিসাবে সেলস এজেন্টদের মাঝে বিতরন করা হয় ।
এরপর আমাকে যথারীতি পন্যের তালিকা দেয়া হল । আমি বুজলাম এত কমিশন কোথা থেকে আসে। প্রতিটি পন্যের দাম বাজার দাম থেকে বেশি কোয়ালিটি খারাপ । আমি আমার বন্ধুকে বললাম যে প্রলোভন দেখিয়ে আমি আমার নিকট জনদের প্রিয় জনদের কাছে ৪০০ টাকার জিনিস ৬০০ টাকা বিক্রি করতে পারব না। আমার বন্ধু ব্যার্থ মনোরথে মনে রাগ নিয়ে চলে গেল। কিছুদিন পর দেখা সে বলল তার বাম হাত ১০০০ টাকার যে ফ্যান ১৫০০ টাকায় কিনেছে তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে । সে বলল তার টাকাটা উঠাতে পারলে সে আর এ কোম্পানিতে নেই। আমি প্রথমে বন্ধুর কথা বিবেচনা করে বললাম তাই করো । পরে আমরা হিসাব করলাম তার সেই টাকা উঠাতে আরো কতজনকে মেম্বার করতে হবে। পরে আমি আর আমার বন্ধু সিদ্ধান্ত নিলাম যা গেছে গেছে , নতুন কেউ যেন এ ভুল না করে। আমাদের বন্ধুত্ব আরো দৃড় হল। একটা সময় এল অনেক লোকই সদস্য হল ,যারা আমার মত বোকা তারা লোভ করল না। নতুন সদস্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ল । অনেক কে পয়েন্টের আশায় অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে দেখা গেল। যারা প্রথম শুরু করল তারা বেশ কিছু কমিশন পেল, নতুন রা আর পারছিল না। অনেক কেই ৭০০ টাকা করে জমা দিয়ে আর লোভ করতে দেখা গেল না। সবাই বুঝল যে পন্যের দাম বাজার দরের চেয়ে বেশি তার কোয়ালিটি ও যদি খারাপ হয় তা মার্কেটিং কঠিন ।
এরপর ঢাকায় আমার এক রুমমেটকে দেখা গেল আমাকে প্রানপন বোঝাচ্ছে। তারপর এলাম সিডনীতে তাও আমার প্রিয় বন্ধু আমাকে একদম কনফারেন্সে নিয়ে গেল । দেখলাম সে তার হাতদের নিয়ে সপিং করছে । সব পয়েন্টের খেলা । আমার এ বন্ধুটি টিপুর মত সহজ সরল নয় , ডমিনেটিং, তার কাছে আমি বোকা প্রকৃতির। সে হয়ত আমার যুক্তিকে পৃথিবীর যুক্তিহীন বাক্য মনে করে । তাই তাকে বোঝাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম । কিন্তু ভেবে পেলাম না সে কেন ৩০ কি মি ড্রাইভ করে গিয়ে বেশি দাম দিয়ে জিনিস কিনছে। আমি জিজ্ঞেস করতে বলল এগুলোর কোয়ালিটি ভাল। মেনে নিলাম আমিই বোকা।
এই মেনে নেবার মাঝে একটা কষ্ট থাকে । সমাজের উচ্চ শিক্ষিত লোকদের এহেন হেয়ালীপনা। একবার মেম্বার হবার পর অনেকে অনেকটা বাধ্য হয়ে পড়ে নিজের টাকাটা উঠানোর । বড় বড় ডিগ্রিধারীরা এবং পদস্থ লোক এর কর্নধার । নতুনরা যারা ছেড়ে চলে যায় তাদের টাকা বিদেশে প্রাচার করা । একটি শ্রেনীতো সফল । যারা সফল তাদেরকেই তো আমরা বাঘা বাঘা ব্যাবসায়ী বলি।