বাঙালি যুবকের সঙ্গে মেলামেশার কারণেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্রী তিয়াশা চাকমাকে অপহরণ করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।
জানা যায়, কিছুদিন আগে রাঙামাটিতে তিশা চাকমা নামে একটি আদিবাসী মেয়েকে তার বাঙালি প্রেমিক হত্যা করে অভিযোগ ওঠে। এনিয়ে ফেসবুকে আদিবাসীদের বিভিন্ন গ্রুপে আলোচনার ঝড় ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পাহাড়িরা তিয়াশাকে অপহরণ করে বলে একটি সূত্র জানায়।
জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে রাঙামাটির কল্যাণপুর এলাকায় তিশা চাকমা নামে একটি আদিবাসী মেয়েকে বাঙালি প্রেমিক ঢাকায় হত্যা করে এমন অভিযোগ আদিবাসী তরুণদের। আর এ মেয়ের ছবি ছড়িয়ে পড়ে আদিবাসীদের বেশ কয়েকটি গ্রুপে।
এসময় বাঙালি তরুণদের সঙ্গে অন্য আদিবাসী মেয়েদের মেলামেশার ছবিও ছড়িয়ে পড়ে তাদের মধ্যে। এঘটনার পর পাহাড়ের আদিবাসী তরুণরা আদিবাসী মেয়েদের এই ধরনের কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করার আহ্বান জানায়।
এদিকে, বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা থেকে স্টার লাইনের যাত্রীবাহী বাসে করে এক বাঙালি তরুণের সঙ্গে পাশাপাশি বসে জাবি বাংলা বিভাগের শেষবর্ষের ছাত্রী তিয়াশা নিজবাড়ি খাগড়াছড়ি আসছিলেন।
আর এই তরুণের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক থাকতে পারে, এ ধারণা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পাহাড়ি তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে কয়েক পাহাড়ি তরুণ তিয়াশাকে (২৩) অপহরণ করে।
এবিষয়ে রাঙামাটির আদিবাসী তরুণ ফেসবুকে লিখেছেন, কোনো জুম্ম নারীকে বাঙালদের কোনো রেস্তোরাঁয় কাজ করতে দেখলে তাকে প্রতিরোধ করুন।
বাঙালি তরুণদের সঙ্গে আদিবাসী নারীদের প্রেম ও বিয়েকে পাহাড়ি আদিবাসী সমাজে ভালোভাবে গ্রহণ করা হয়না। বাঙালি তরুণের সঙ্গে মেলামেশার কারণে এই প্রথম পাহাড়িদের দিয়ে পাহাড়ি মেয়ে অপহরণের ঘটনা ঘটলেও আদিবাসীরা এ ঘটনাকে তাদের সম্প্রদায় ও জাতির অস্তিত্ব রক্ষার উদ্যোগ হিসেবেই দেখছেন।
বেক্সিমকো ফার্মায় কর্মরত আদিবাসীদের একটি গ্রুপের অজিত বরণ চাকমা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিয়াশার সঙ্গে যদি বাঙালি ছেলের সম্পর্ক থাকে, তাহলে অপহরণকারী জুম্মু ভাইদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
তার মতো পাহাড়িদের অনেকেই এ ঘটনার নায়কদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
এদিকে, এই ঘটনার পর অপহরণের সঙ্গে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) জড়িত বলে সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হলেও এ ঘটনার সঙ্গে তারা জড়িত নয় বলে জানায় ইউপিডিএফ।
এবিষয়ে ইউপিডিএফের প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরন চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, “আমাদের দায়ী করা হলেও আমরা কোনোভাবেই দায়ী নই। বরং আমরা মেয়েটিকে উদ্ধার করে মেয়েটির বাবার হাতে তুলে দিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “গাড়িতে ছেলেটির সঙ্গে মেয়েটির আচরণ ঠিক না থাকার কারণে তাকে কয়েক তরুণ অপহরণ করে বলে জানতে পেরেছি।”
তিয়াশার বাবা খাগড়াছড়ি ক্ষুদ্র নৃজনগোষ্ঠী ইনস্টিটিউটের পরিচালক সুসময় চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, “কারা, কী জন্য অপহরণ করেছে, কীভাবে বলবো?”
প্রসঙ্গত, খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গার হৃদয় মেম্বারপাড়া এলাকা থেকে অপহৃত তিয়াশাকে বুধবার বিকেল ৩টার দিকে ফিরিয়ে দেয় অপহরণকারীরা।
পরে গিরিফুল শিশুসদন এলাকা থেকে সুসময় চাকমা তার মেয়ে তিয়াশাকে নিয়ে আসেন। অপহরণের পর পরই তিয়াশাকে উদ্ধারে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালায়।