নাম তার রাজা হলেও অভাব তার নিত্য দিনের সঙ্গী। রাজা মিয়া নতুন বিয়ে করেছে। আগে মা-বাবার সাথে থাকলেও বিয়ের পর আলাদা হয়েছে কারন সব সময় মা, বোনদের সাথে ঝগড়াঝাটি। এই মনোমালিন্যরও মূল কারন অভাব। নদীতে মহাজনের জাল টেনে যে কয়টাকা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে না। বউয়ের অভিযোগ মা-বোনদের সবকিছু বিলিয়ে দেয় রাজা আর মা বোনদের অভিযোগ বিয়ের পর রাজা তাদের দেখাশুনাই করে না। বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধ হয়ে গেছে। মে-জুলাই এই তিন মাস কিভাবে সংসার চালাবে তা নিয়ে রাজার বড়ই দুশ্চিন্তা। বাকীতে কোন সওদা ও পাওয়া যাবে না বিয়ের সময় ৩০ হাজার টাকা যৌতুক নিলেও দোকানদার বেশকিছু টাকা পাওনা রয়েছে ঐ টাকা পরিশোধ করতে না পারলে বাকীতে আর কিছু পাওয়া যাবে না। শেষ পর্যন্ত কোন উপায়ন্তর না দেখে শেফালিকে (রাজার বউ)সমিতিতে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিলো । সমিতিতে ভর্তি হলে টাকা পাওয়া যায় এবং এই টাকা কিস্তিতে শোধ করার একটা সুবিধা রয়েছে। প্রথমে রাজা নিজেই সমিতি থেকে টাকা চেয়েছিল কিন্তু এনজিওগুলো নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করে তাই রাজা পুরুষ হিসেবে ঋনের টাকা পাওয়ার নিয়ম নাই। যাই হোক একসময় শেফালী মাটির ব্যাংক এনজিও থেকে ঋন নেয় এবং ২-৩ দিনের মধ্যে এই টাকা শেষ। পরের সপ্তাহে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হবে, রাজা মিয়ার দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়। এই কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে আর বেশ কয়েক জায়গায় ধারদেনা করে রাজা।
এক এনজিওর টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে শেফালি ঋন নেয় অন্য এনজিও থেকে। এভাবে শেফালি ট্র্যাক, হতাশা,আক্ষেপ -একাধিক এনজিও থেকে ঋন নিয়ে মহা বিপদে পড়ে যায়। পারিবারিক অশান্তি চরমে পৌছে। এক পর্যায়ে এই টাকা পরিশোধের কোন উপায় থাকে না রাজা আর শেফালির । এবার এনজিও কর্মকর্তা নিজেই হানা দিতে শুরু করে শেফালির বাসায়। এনজিও কর্মকর্তা আসছে শুনলেই বাসা থেকে পালিয়ে যায় রাজা। আর তাদের মুখোমুখি হতে হয় শেফালিকেই। আর এভাবে এক সময় এনজিও কর্মকর্তাদের সাথেই শেফালির ঘনিষ্টতা বাড়তে থাকে। এনজিও কর্মকর্তারা নিজেরাই পকেটের টাকা দিয়ে শেফালির ঋনের টাকা পরিশোধ করে দেয়। আর এভাবেই স্বাবলম্বী হয় শেফালি।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ১০:২২