কে বলেছে অনন্তকাল সময় বিষাদময় ? কে বলেছে সময়ের অবিরাম ছুটে চলা একগুয়েমীর সৃষ্ট অপচয় ? আমি ভালোবাসার পুজোয় যে প্রেমো আন্দোলন এনেছি, সময় শতকের পঞ্চ পাখালীতে চড়েও নতুনত্বের প্রতিকীতে বহমান । সদা শুভ্র অনুভবে জ্বল জ্বল ঝুলছে ভালোবাসা, অহর্নিশ বাতিঘরে । আমি অপেক্ষার শালতিতে হাটু গেড়ে বসে আছি একটি শ্রেয়সী তন্বীর জন্য, এই স্বর্গের বহমান স্রোতে ।
পাঁচ শতক বর্ষ পূর্ব এক অপরাহ্নের অন্ধ সময়ে পৃথিবী নামক সেই গ্রহ থেকে চির প্রস্থান করে আমার আত্মা। যাত্রী হয়েছিল অনিশ্চয়তার মহাজাগতিক পথরেখার । সে পথের শুভ সমাপ্তি হয়েছিল দ্রুতাবর্তে। আমি চলে এসেছি নির্জনা এক স্বর্গে । পরিস্ফুটিত হয়েছি পুনরায় সেই মানুষ্য সময়ের পরিচিত দেহ অবয়বে । সাথে পেয়েছি অতি ইন্দ্রিয়াণুর ক্ষমতাবৃত অনুভুতি ।
আমাকে উৎসর্গকৃত এই স্বর্গসাজ , অফুরন্ত চিত্তাকর্ষিত ভূমি । সম্পূর্ণতার এক জমাট সুন্দরোম বিষ্ফোরণ ঘটেছে এখানে ।
এখানে আমার বয়স বাড়েনা,বাড়ে ইচ্ছের বাস্তাবিত ঘূর্ণি । আমাকে ভাবতে হয়না , ভাবনা বস্তু শরীরে সামনে এসে দাঁড়ায় । আমি দু আঙ্গুলের যৌথ ইশারায় তৈরী করি বিস্তৃর্ণ ফুলেল প্রান্তর । তার আস্তরণ ছুঁয়ে ঝর্ণা জলের ঘূর্ণিপাক । সেই জল স্ফটিকে ভেলা ভাসাই গোলাপি হ্রদে । আলতো ছোঁয়ায় পদ্ম ফুটাই এ জলধির কার্ণিশে । কখনো বৃষ্টি নামাই । হাতে নিলে বৃষ্টির জল রুপান্তরিত শিশির কণা! আলতো জমা রাখি ঘাস পাতার চিবুকে ।
স্ব-স্নেহ মাধুরীর কোষে কোষে সজ্জিত করি একটি প্রেমোমহল। সেই শ্রেয়সীর আগমনীর অভিনন্দিত পর্দায় আচ্ছাদিত করে রাখি । সে আসবে , তার জন্য আমার এই অণু-তিল আয়োজন ।
কিছু সময় আগে সে ও আমার মতো প্রবেশ করেছে মৃত্যু পরবর্তিকার পথে । কয়েকশত বছর পরের প্রজন্ম এই নারীকে আমি আমন্ত্রণ জানিয়েছি আমার আগ্রহী ইন্দ্রিয়ের চালনায় । আমার সাজানো এই স্বর্গে নিমন্ত্রিত অতিথি সে ।
সে আসবে , তার জন্য ভালোবাসার অদৃশ্য বেহালা ধরবে সুর । সুর মন্ত্রকতায় ঘোরগ্রস্থ হবে এই প্রেমোস্বর্গ । তার জন্য নিঃশ্বাসে জমা রেখেছি সুরভীর মাতালতা ।কণ্ঠে মোহনীয় স্বরবৃত্তীয় ।
সে আসুক ,তার কাজল তুলে এনে সন্ধা আঁকবো । আবছা গোধুলীর স্নায়ু চিরে ঢোকা এক সন্ধ্যা । তার জন্য রাত্রি তৈরী করবো জোনাক আর চন্দ্র দ্রবণে । প্রভাতের সুকুমার লগ্ন তৈরী করবো । নব ঊষার আলোয় হাত ধরে দাঁড়াবো যুগল মূর্তি ,মহাবিশ্বের এই চূড়ায় ।
আমার নিমন্ত্রিত অতিথিকে স্বাগতম ভালোবাসার এই স্বর্গীয় সংস্করণে ।
ইতোমধ্যে তাকে পাওয়ার হৃদয় স্পর্শন আগ্রহে আমি দুহাত জোড় করে মিনতি করি সময়ের কাছে দ্রুত আবর্তনের । সম্পূর্ণতা পাচ্ছে ক্রমান্বয়ে অপেক্ষার ক্ষণ । সময়ের দ্বারে আমার স্মারকলিপি মঞ্জুর । এসেছে আমার নিমন্ত্রণা । শীতল উত্তেজনায় প্রকম্পিত সমস্ত স্বর্গ ।পুষ্প ধোয়াশা পাঁপড়ীর নৃত্য আর কি দারুণ ছোপ ছোপ আলোক বর্তিতার সেলিব্রেশন !
সে এসেছে ! নামছে আমার প্রেমোমহলের সিড়ি ডিঙিয়ে । প্রতিমা প্রেয়সী সুসজ্জিত দেহ পল্লরী এগিয়ে আসছে আমার দিকে ।আমি স্তম্ভিত! স্তম্ভিত আমার হৃৎপিন্ড!
সশরীরী দেবী আমার সামনে । মিষ্টি উচ্চারণ-
কেমন আছো যুবক । আমাকে আহ্বাণ জানিয়ে আমার অপেক্ষায় তুমি কি ক্লান্ত ? যুবক তুমি আমার অপেক্ষারত একবার জানলে তখনই নিজেকে ভস্ম করে চলে আসতাম সেই পৃথিবী ছেড়ে ।
কোথা থেকে এল এই নারীর অন্তহীন আকর্ষণ! কোথা থেকে বয়ে আনলো সে এ হৃদ্যতার কণা !
শুধু অনুভব করছি, আমাদের মিলন ক্ষণের অভিনন্দিত রেণু সময়ের স্বাক্ষী হয়ে ছুটে চলা নক্ষত্র ঝড়ের সাথী হলো ।
সে হাত বাড়ালো । এক ঝটকায় টেনে নিয়ে মিলিয়ে দিলাম বুকে। মুহুর্তেই কি সুখ অনুভূতি বিদ্যুৎ তাড়িত হয়ে পৌছে গেলো কোষে কোষে ! মনে হলো- মহাবিশ্বের শরীরে তলোয়ার চালিয়ে লিখে দিচ্ছি আগ্রাসী ভালোবাসার স্বগর্বিত সংকলণ ।
মনে হলো পৃথিবীর দিকে প্রদর্শন করলাম বিজয়ী নির্দেশিকা -----
দ্যাখো ৪৫০ কোটি বছরের পৌঢ় পৃথিবী ! তোমার দুই প্রজন্মের নর নারী কি করে এক সত্তায় মিলে গেল, শিরায় শিরায় নিলে এলো ভালোবাসার ঝড়ো প্রবাহ! যার এক ফোটা গড়িয়ে তোমার বুকে পড়লে, মুহুর্তেই মুছে যেত গলিত মেরুর ইতিহাস । সুনিপুণ কারিগরের হাতে জমা থাকতো ওজন স্তরের ভারসাম্য । জাপানের চেরি ব্লসম উৎসবের রং ছিটকে পড়তো সোমালিয়ার কিশোরীর ধূসর ঠোঁটে । ক্লাস্টার বোমায় জর্জরতি রুক্ষ মরুভূমিতে অমৃত সুখ যুদ্ধ লাগত।কেন তুমি অদৃশ্য নিয়ন্ত্রকের হাতে ভাগ্য তুলে দিলে ? তোমাকে তূমি ক্ষত বিক্ষত করে নিজেকেই অভিশাপ দিচ্ছ !পাঁচশত বছর পূর্বে তোমার এক সাম্প্রদায়িক আগ্রাসনে থেমে গিয়েছিল আমার ২৩ টি বছরের সীমাবদ্ধ জীবন তট , পাখির মত সেই যুববেলা । আজও তোমার সাম্রাজ্যবাদের তীর বিদ্ধ অগনিত লাশের মিছিলের একজন এই স্নিগ্ধ নারী ।
তুমি পরাজিত এক গ্রহ , মহাবিশ্বে ভেসে আছো বিষন্নের নীল রঙের নিশানা হয়ে ।
এই নারীর চোখে সুখাশ্রু । চিবুক ছুঁয়ে নামতে উদ্দ্যত অভিকর্ষীয় ধারায় । এ জল এ স্বর্গে পড়লে বিস্তর্ণ ফুলকলি হয়তো আরো নব আনন্দে ফুটবে । আমি বরং আঙ্গুলের ডগায় তুলে চুষে নিই এ জল, আপ্লিত হই, ধমনীতে মিশিয়ে দেই নোনতা সুখ । সুখ কম্পনে হৃৎপিন্ড কাঁপুক ; কাঁপুক কামুকতার বিদ্রোহ; লুটেপুটে নেওয়ার বেলা ; খুনসটি সময় ।
আঁধার নামাই । যুক্ত হই দুজন লুকোচুরি আনন্দে, অন্ধকারের মিহি দানায় । তার ভরাট চোখের পুঞ্জাক্ষিতে মিশ্রিত কামনার প্রতিচ্ছবি ।
সে বলে- প্রেমো তুমি কোথায় ?
- আমি তো জোনাক হয়ে জলছি তোমার খোঁপায় , তুলে নাও ফুলের মতো ।
সে তুলে নেয় সযত্ন ।আমাকে উড়িয়ে নেয় ।আমরা সগর্ব উল্লাসে ডানা ঝাপটিয়ে উড়ি-ঘুড়ি এ প্রেমোণুভূবন ।
টুপ করে শিশিরের ন্যায় জোৎস্না ঝরলে যুগল স্নানে নেমে পড়ি জোৎস্না-বন্দি গোলাপী হ্রদে । জলকেলি নৃত্য করি । কাছে আনি । স্পর্শে স্পর্শে দ্রবীভূত করি ভালোবাসা । আরো কাছে আনি, আরো কাছে......
নিঃশ্বাসের গভীরে লুটিয়ে পড়ে নিঃশ্বাস , হৃৎপিন্ডের প্রকোষ্টে হৃৎপিন্ড ।ঊষ্ণতার দ্বিবিয়োজন ।
সে বলে- আরো কাছে প্রিয় ।
বুকের পৃষ্ঠতলে আটকে আছে বুক । আরো কাছে কি আসা যায় ?
অতঃপর তাকে ত্রিমাত্রিকতায় রেখে আমি হয়ে যাই অন্য মাত্রিক । ঢুকে পড়ি তার ভিতর । বস্তুত এখন তার-আমার দ্বৈত সহ অবস্থান ।
সে ঘুমিয়ে পড়ে পদ্ম পাতার ভেলায় । আমি তুলে এনে পদ্ম-পাঁপড়ি রেখে দিই শয়ানের পার্শ্বে । চোখ খুললে দেখবে কোন সঞ্চয়িত কারু-প্রেম জমা রেখেছি পাঁপড়িতে । আমার সৃষ্টির নিয়ন বিন্যাস খুলে খুলে দেখুক; ভাসিয়ে দিক ; জলে ভাসুক দেবী ছোঁয়া ক্ষয়িষ্ণু ফুল ।
এত রঙিন সুখ! এত প্রেম মাতালতা ! ভালোবাসতে ক্লান্ত হইনা, প্রাপ্ত ভালোবাসায় হাঁপিয়ে উঠি হয়ত।আমাদের মিলন মহাকাল সময়ের শরীরে রঙ দিয়ে এগিয়ে চলে অবিরত ।এগিয়ে চলে নাগ-নাগিনীর যুগল নৃত্য ।শুধু কখনো ইচ্ছে হয় সময়ের উল্টো ফানেলে ঢুকে পড়ি । মসৃণ বাঁক ঘুরে ঘুরে পৌছে যাই সেই গ্রহে । খুলে দেই সেই পৃথিবীর প্রথমা সূর্যের শার্শি । সে, আমি রোদ্র রং গায়ে মেখে নতুন জীবনের শস্য-দানার সহযাত্রী হই ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৫ সকাল ১১:৫১