জীবনে কখনো মুভি রিভিউ লিখব ভাবিনি। কিন্তু পেশাগত জীবনে আমার সাথে মিলে যায় বলে নামটা দেখে খুব আগ্রহ হলো, তাই সেদিন হঠাৎ ই এই মুভিটা দেখে ফেললাম।
বলিউডের চিকিৎসাজনিত অবহেলা [medical negligence] বিষয়ক প্রথম মুভি এটা।
ঘটনাটা সাধারণ তবে মানবিক। ছোট একটা ছেলে অংকুর অরোরা [১২/১৩ বছর বয়স] নাম, যার বাবা তার মাকে ছেড়ে চলে গেছে। ছেলেটি স্বপ্ন দেখে বড় হয়ে মাকে অনেক সুখী করবে, অনেক টাকা আয় করে মায়ের সব ইচ্ছা পূরণ করবে। সেই বাচ্চাটি সামান্য এপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা নিয়ে খুব নামকরা হাসপাতালে ভর্তি হয়, যেখানে সাজার্রী করেন বিখ্যাত ডাক্তার ডঃ আস্থানা [কে.কে.মেনন]। ডঃ আস্থানার অসম্ভব হাতজশ থাকার কারণে মানুষ হিসাবে তিনি কিছুটা বদরাগী এবং অধীনস্তদেরকে হেনস্তা করতে পছন্দ করেন, নিজেকে নিজে ভগবান মনে করেন। এর পেছনে তিনি একটি মজার যুক্তি দেখিয়েছেন যে, ভগবান যাদেরকে অসুস্থ্য থেকে সুস্থ্য করতে পারেন না, তাদেরকে তিনি তা করেন।
যাই হোক, নিয়ম অনুযায়ী এপেন্ডিসাইটিসের অপারেশনের আগে খালি পেটে থাকতে হয়, বাচ্চাটি ক্ষুধার কারণে নিষেধ সত্ত্বেও সবার অগোচরে কয়েকটি বিস্কুট খেয়ে ফেলে, যদিও অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার আগে সে নার্সকে বিষয়টি জানিয়েছিল। নার্সও ডঃ আস্থানাকে জানায়। ডঃ আস্থানার উচিত ছিল বাচ্চাটির পেট খালি করানো, বা খালি না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা। কিন্তু যেহেতু হাসপাতালের ব্যবসায়িক স্বার্থ জড়িত তাই ডঃ আস্থানার পক্ষে অপেক্ষা করা সম্ভব হয়না। ফলাফল খারাপ। বাচ্চাটি মারা যায়। এরপরই নাটকীয়তা শুরূ হয়।
নিচের কয়েকটি ম্যাসেজের কারণে আমার মুভিটা ভালো লেগেছে-
১. চিকিৎসা কেবল সেবা-ই নয়, ব্যবসা ও, যার কারণে বিনা দরকারে রোগীকে বেশী দিন হাসপাতালে রেখে বেশি বিল করা যায়।
২. আমাদের মধ্যে যখন কেউ অসুস্থ্য হয় এবং তার জন্য সম্মতি পত্রে স্বাক্ষর করতে হয়, আমরা তা না পড়েই স্বাক্ষর করে ফেলি। ফলে পরবর্তীতে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে আমাদের তেমন কিছু করা থাকে না- এই যুক্তিতে যে আমরা জেনেশুনে স্বাক্ষর করেছি।
৩. মানুষ হিসাবে আমরা কেউই ভুলের উর্দ্ধে নই। ভুল স্বীকার করে নেয়াই উচিত এবং মানবিক। কেবল ব্যবসায়িক স্বার্থের কারণে কোন দুর্ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা কখনও ভালো ফল বয়ে আনে না।
ইউটিউবে মুভিটি আছে, ভিন্নধর্মী মুভি দেখায় আপনার আগ্রহ থাকলে দেখতে পারেন, খারাপ লাগবে না আশা করি।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:৪৬