আমার আগের পোষ্টটি ছিল ওপেন একসেস জার্ণাল এর উপর প্রকাশনার ধান্দাবাজি, ধান্দাবাজির প্রকাশনা . . . এই শিরোনামে।
এরই ধারাবাহিকতায় আজকে কনফারেন্স নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। কারণ আজকে মাত্র একটা কনফারেন্স থেকে আসলাম [ ২ দিন ব্যাপি কনফারেন্সটি হয়েছে আমার নিজের বিশ্ববিদ্যালয়। এশিয়ান ল স্কুলদের এই কনফারেন্সে এশিয়ার ২৫টি দেশের স্কলাররা আসছিল, যেখানে আমিসহ বাংলাদেশের ৬জন ছিলাম। খুব ভালো অনুভুতি নিয়ে ফিরলাম।] তাই মনে করলাম তাজা তাজা বিষয়টা শেয়ার করি।
আজকাল দেশে বিদেশে বহু কনফারেন্স হচ্ছে। এমন কোন বিষয় বাদ নাই যা নিয়ে কনফারেন্স হচ্ছে না। বিষয়ভিত্তিক, দেশভিত্তিক গবেষণা সম্পর্কে জানার জন্য এইখানে যেতে পারেন। খুবই কাজের সাইট হলেও সব কনফারেন্সের খবর এখানে পাওয়া যায়না। আপনার আগ্রহ থাকলে অবসর সময়ে ব্রাউজ করলে, বা পরিচিত কারও মাধ্যমে কাঙ্খিত কনফারেন্স সম্পর্কে জানতে পারেন।
যাই হোক, বিজ্ঞানের ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য একাডেমিক কনফারেন্সে গবেষণাপত্র পাঠ করা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাধ্যতামুলক বলা যেতে পারে। এই সব দেশ গুলোতে গবেষণার প্রতিবেদন উপস্থাপনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড ও থাকে। আবার কোয়ালিটি ধরে রাখার জন্য IEEE listed Conference থাকে, যেখানে পিএইচিডি সুপারভাইসাররা তাদের ছাত্রছাত্রী নিয়ে আসেন। এই কনফারেন্সগুলো নাকি বেশ ভালো [আমি জানি না কারণ আমি বিজ্ঞানের ছাত্র না, আইনের ছাত্র হিসাবে বড় দাগে সমাজ বিজ্ঞানের অর্ন্তভুক্ত] । তাই আমি বলব কেবল সমাজ বিজ্ঞানের কনফারেন্স নিয়ে, কারণ এখানে IEEE Conference এর মতো কোন ব্যাপার নাই।
আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী আমি ও বেশ কিছু কনফারেন্সে গবেষণাপত্র পাঠ করতে গেছি। তাই মনে হলো আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করলে কারও কারও উপকার হলেও হতে পারে।
প্রথম কথা হলো কেন কনফারেন্সে যাবেন?
অনেকে অনেক কারণে যায়- যেমন: ভিসা পাইতে সুবিধা [বিশেষ করে আমাদের সরকারী কর্মচারী/ব্যবসায়ীরা], পাসপোর্টে নানান দেশের ভিসা লাগাইতে [বাংলাদেশের অনেকের এই প্রবণতা দেখছি, যত পারো খালি ভিসা লাগাও], পরিচিতদেরকে গর্ব করে বলতে [আমি উমুক কনফারেন্সে যাইতাছি ], ইত্যাদি।
যাই হোক, এটা স্বীকৃত যে, যদি সঠিক কনফারেন্স ঠিক করা যায়, আর সেখানে সময়টা কাজে লাগানো যায় তবে এর অসম্ভব কিছু ভালো উপকারিতা আছে- নতুন নতুন আইডিয়া পাওয়া যায়, নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া যায়, নিজের গবেষণা নিয়ে অন্যর সাথে আলোচনা করা যায়, আপনি কি নিয়ে কাজ করছেন তা অন্যরা জানতে পারে, সর্বোপরি বিশ্বকে বাংলাদেশ সম্পর্কে জানান দেয়া যায়, ইত্যাদি।
এবার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো কনফারেন্স বাছাই করা। উপরের conferencealerts সাইটটি বা অন্য কোনভাবে কোন কনফারেন্সের খবর পেলে যা করবেন-
কনফারেন্সের আয়োজক কারা দেখুন।
কনফারেন্সের আয়োজকদেরকে বড় দাগে দুইভাগে ভাগ করা যেতে পারে। (১) ধান্দাবাজ আয়োজক; আর (২) প্রকৃত আয়োজক। ধান্দাবাজ আয়োজকদের কাছে কনফারেন্সটা মুলত অন্য ৮/১০টা ব্যবসার মতোই ব্যবসা। যাদের কোন অফিসের ঠিকঠিকানা নাই, ওয়েবসাইট নাই, কোন মতে একটা ওয়ার্ডপ্রেসে ওয়েবসাইট বানাইয়া রাখছে। আর কনফারেন্সে আপনি যেই পেপার সংক্ষেপ [Abstract] দিবেন, তাই কবুল [accepted]!!! ধরেন, কনফারেন্স হইল পরিবেশের উপর, আপনি দিলেন পেপার ধানের উপর আপনার পেপার কবুল হবে। কারণ তাদের মুল উদ্দেশ্য হইল টাকা, ধরেন - - - কনফারেন্সের ফি, হোটেল বাবদ কমিশন, যাতায়াতের কমিশন, খাওয়া দাওয়ার কমিশন, আরো নানান কমিশন। আমার শ্রীলংকার কনফারেন্সের পোষ্টে এই নিয়ে সামান্য একটু বলেছিলাম। টাকার জন্য এরা এমন এমন সিষ্টেম বাহির করছে যে বলার বাহিরে। ধরেণ- ধারণকৃত ভিডিও প্রেজেন্টেশন [মানে আপনার যাওয়ার দরকার নাই, ভিডিও রেকর্ড করে পাঠাবেন]; স্কাইপি প্রেজেন্টেশন [মানে আপনার যাওয়ার দরকার নাই, স্কাইপি, ইত্যাদির দ্বারা প্রেজেন্টেশন দিবেন]। তাই এইসব কনফারেন্স এড়ানোই উত্তম, যদিনা উপরে বর্ণিত "রথ দেখা আর কলা বেচা"র মতো অবস্থা হয়।
যারা প্রকৃত আয়োজক চেষ্টা করূণ তাদের কনফারেন্সে যেতে। কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা নামকরা গবেষণা প্রতিষ্টান, কোন দেশের সরকারী প্রতিষ্টান ইত্যাদি দ্বারা আয়োজিত কোন কনফারেন্সগুলো মুলত এই ভাগে পড়ে। তাই চেষ্টা করূণ এইসব কনফারেন্স বাছাই করতে। কারণ, এইসব কনফারেন্সের সাথে প্রকৃত এবং অপেক্ষাকৃত জ্ঞাণী লোকেরা জড়িত থাকেন। এরা বাহিরের স্পন্সর পায় বলে কনফারেন্স ফি থাকে তুলনামুলকভাবে কম। এদের বাছাইকৃত পেপারের মান অবশ্যই ভালো হয় বলে, যারা এই সব পেপার এর মালিক তাদের সাথে নেটওয়ার্কিংটা ভালো হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশের অনেকেই দেশ বিদেশে ঘুরতে যাচ্ছে, খুবই ভালো ব্যাপার এটা। কারণ আমি মনে করি, অন্য দেশ দেখলে, কয়েকদিন থাকলে, নিজের দেশের জন্য মায়া বাড়ে, নিজের জ্ঞাণ বাড়ে যা হয়ত ৫০টা বই পড়েও সম্ভব না। তবে আমার মতে যাদের পক্ষে সম্ভব [কারণ সবাই একাডেমিক বা গবেষক না], তারা যদি যেই দেশে ঘুরতে যাবে সেই দেশের কোন একটা কনফারেন্স টার্গেট করে যায়, আর সেখানে একটি পেপার পড়ে আসে তবে জিনিসটা হবে, "রথ দেখা আর কলা বেচা"র মতো। দেশটা ও দেখা হলো আর পেপার ও পড়া হলো।
কিসব হা্বিজাবি লিখলাম। সবার জন্য শুভকামনা ।