চিহ্নের প্রচ্ছদে ডানবাঁকানো হাসি কি বিস্মৃত হচ্ছে সব?
বিশাল ঢেউটা মাথা সমান উঁচু হয়ে এলো।
আমি টেবিল ছেড়ে উঠিনি। এই গল্পটাতো হারাবেই। অসমাপ্ত হারিয়ে যাবার যন্ত্রনা গভীর।
যে হারিয়ে যায়, তার।
যে হারিয়ে ফেলে, তারও।
আমি লিখি বরং।
“ ও খুব মনযোগ দিয়ে জানালা হয়ে আসা রোদমাখা চিকচিকে কণাগুলো দেখছিলো...”
কণাগুলো চোখ মেলে চাইলো। আমাকে বলে উঠলো-
“শোনো, ডুবে যাবে তো। চলো তোমাকে ঘুরাপথে বের করে নিয়ে যাই। চলো তো আমাদের সাথে”।
আমি বুঝিনা। তবু উঠে পড়ি। অবাক হই না।
একটা দরজা খুলে গেলো। পেছনে ঢেউ ধেয়ে আসছে। আমি ঢুকে পড়ি। বাঁয়ে ঘুরে সেই রোদ, সেই আলো! আলোর পরেই দুর্গের গায়ে বড় বড় খোপ।
নানা খোপে নানার রঙের মানুষ। একটা খোপে সব মানুষগুলোর পায়ে শেকল পরানো। ওরা কড়াইতে কালোমতো কি যেন ভাজছে, অনবরত। আমি দেখতে চাই, দিলো না। ভাজছে তো ভাজছেই।
যাকগে।
দেখি পরের খোপেই অন্য রকম মানুষ। খিলখিল হাসছে। এ হাসি যেন থামবার নয়।
-এই, তোমরা হাসছো কেন?
-হাসি পায়.. হো হো হো...
-আরে বাবা, হাসির তো কারণ থাকে। কেন হাসি পায়?
-হাসি পায় তাই.. হা হা হা..
কি জানি কিসব বলছে। কিচ্ছু বুঝিনা।
চিকচিকে কণাগুলো আমাকে পথ দেখাচ্ছে।
এতো এতো তরবারি ঝুলানো দেয়ালে! ছোট বড় অনেক! অন্নেক!
কাছেই কোথাও থেকে শব্দ পাই ‘মি আ মি আমিআ মিআমি আমিআ মিআমি......’
হ্যাঁ! আরেক রঙ্গের মানুষ। একে অপর হতে জ্যামিতিক গুনতি দুরত্বে দাঁড়িয়ে তারস্বরে চিৎকার করে চলেছে.. ‘মি আ মি আমিআ মিআমি আমিআ মিআমি......’
কাছে যেতে চাই, পারিনা। ওদের সামনে আয়না।
আর দুরত্ব। জ্যামিতিক।
কথা বলি, শোনেনা।
শব্দ শুধু শব্দ।
মি আ মি আমিআ মিআমি আমিআ মিআমি...
- হলো কি এদের?
- আশ্রয় ডাকছে।
- ও!!
সারিসারি কপাল কুঁচকে থাকা মানুষ। জমাট হয়ে।
ছড়ানো ছিটানো কপাল কুঁচকে থাকা মানুষ। জমাট হয়ে।
একগাদা শিউলি ফুলে দাউদাউ আগুন জ্বলছে।
আতরের শিশিগুলো সব পায়ের তলায় ভেঙ্গে চুরচুর।
-আচ্ছা আমাকে নিয়ে যাচ্ছো কোথায় বলো তো!
- তুমি পালাচ্ছো!
- আমি! আমি কেন পালাবো!
- ঐ যে ঢেউ আসছে!
- আসুক না! তাতে কি!
- ভয় পাও তাই পালাচ্ছো!
-ভয়! কিসে ভয় পাই? ঢেউ? জল? না তো! আমার তো ভয় হারিয়ে যাবার। নিজেকে হারিয়ে ফেলবার। পালাচ্ছিতো নিজেকে নিয়েই। ভয়তো যাচ্ছে সাথেই। কিভাবে পালাবো? তোমরা বরং যাও।
- বলছো কি! তুমি ডুবে যাবে তো! এসো! এসো বলছি!
- না, আমি যাব না। আমাকে এখানেই থাকতে দাও।
আমি ঘুমাব। ঘুম আমার বেঁচে থাকা। আমি ঘুমাই। ঘুমালে ভয় পাইনা।
ঘুমালেই বোধ করি নিরাপদে আছি।
ঘুমালেই কষ্ট রাখিনা। দুঃখ দেখে হাসি। বলি দুঃস্বপ্ন। সব মিথ্যে!
সুখ দেখে হাসি। হা হা- স্বপ্ন। সুখের পরেই দুঃখ আসার ভয় নেই।
ঘুমালেই সমাপ্তি।
অসমাপ্ত হারিয়ে যাবার যন্ত্রণা গভীর।
যে হারিয়ে যায়, তার।
যে হারিয়ে ফেলে, তারও।
আমি ঘুমাই বরং।
বিস্ময়ে আদরে সব চিকচিক আমার চোখে মুখে কপালে মাখামাখি হয়ে যায়। সেই ঢেউটা কপালে উঁকি দেয়।
হাসিহাসি-ঘুমঘুম-চিকচিকে মুখ দেখে ঢেউ ভাবে রাতের আকাশ।
ভুল হয়; ফিরে যায়।
আমি ঘুমিয়ে পড়ি। আমি ঘুমাই। সব ‘নেই’, কিছু ‘নেই’, ভয়হীন, আশাহীন সমাপ্তি ঘুমে ঘুমাই।