গন্ডমূর্খ বিদ্যাপীঠের সম্মানিত সভাপতি আখলাক মিয়া দফতর থেকে বেরিয়ে তার আখলাক ঠিক করার উদ্দেশ্যে উত্তরপাড়ার বিনোদন কেন্দ্রে পবিত্র হতে গেলেন। বলাবাহুল্য জনাব আখলাক মিয়া টানা গত বিশ বছর ধরে অত্যন্ত সম্মানের সহিত বিদ্যাপীঠের সভাপতি হিসেবে মানুষের ভালবাসা পেয়ে নির্বাচিত হচ্ছেন। অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়মিত এই বিদ্যাপীঠে বিদ্যালাভ করেছেন। তাদের সবাইকে বিদ্যাদান করছেন এ,কে, মজিদ হোসেন এবং তরুন গুরু ইসমাইল ফরাজী।
আখলাক মিয়ার অনেক ভাল নামডাক আছে উত্তরপাড়াতে। টপ ক্লাস ছাড়া তিনি বিনোদিত হননা, কোনভাবে বিনোদিত হয়ে গেলে দুহাত ভরে অর্থ বিলিয়ে আসেন। এক্ষেত্রে কখনই তিনি কৃপণতা করেন না। দিল খুশ হলে পকেট বিলিয়ে দিতেও কোন সমস্যা নেই তার। তবে আজ তিনি বিনোদিত হবার উদ্দেশ্যে এখানে আসেননি। পাড়ার মাসীর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য জানতে এসেছেন। সরাসরি মাসীর কক্ষে প্রবেশ করেই জানতে চাইলেন।
- মাসী তোমার এখানে কি ফরাজী আইছিল?
- আরে আখলাক মিয়া, এই অবেলায় তুমি! আও বও।
- বইতে আসি নাই, আগে কও ফরাজী আইছিল?
- হ্যাঁগো, আমার এখানে কাষ্টমার আসতেই পারে, তোমার এত ফাইট্টা যাওয়ার কারন কি বাপু!
- মাথাডা টগবগ করতেছে মাসী, আমি তোমারে পরে সব বুঝাইয়া কমুনে।
- হ্যা, ছোট মাষ্টার আইছিলো।
আখলাক মিয়া আর কোন কথা না বাড়িয়ে সোজা বেরিয়ে আসলেন। পেছন থেকে অবশ্য মাসী অনেক চেঁচামেচি করে জানতে চেয়েছিল ঘটনা কি? আখলাক মিয়া এসব কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে লাফিয়ে লাফিয়ে পা বাড়ালেন গুরুত্বপূর্ণ কাজে।
মাসী ঘটনা ঠাহর করার জন্যে জলিলকে পাঠালেন বিদ্যাপীঠে। তার ধারণা আখলাক সাহেব কোন একটা কুরুক্ষেত্র বাধাবেন ফরাজীর সাথে। আখলাক মিয়ার সাথে ফরাজীর জমিজমা সংক্রান্ত কোন দ্বন্দ্ব নেই তবে অনেক বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে। তাদের দুজনের বনিবনা না হওয়ার বিষয় আর নতুন কিছুনা। জলিল তার লুঙ্গিটা উল্টো ভাজ করে উত্তরপাড়া থেকে বের হল। কানাইয়ের দোকান থেকে বাকিতে একটা বিড়ি নিয়ে ওটা মুখের কোনে দাত দিয়ে শক্ত করে চেপে মনের সুখে গন্ডমূর্খ বিদ্যাপীঠের উদ্দেশ্যে পা চালালো।
প্রথম বেলায় বিদ্যাপীঠে এসে কোন শিক্ষার্থীকে না দেখে একটু অবাকই হল জলিল। গুরুজনদের কক্ষে প্রবেশ করে শিক্ষক এ,কে মজিদ হোসেনকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করল,
- ছার, কি হয়েছে?
- জলিল, তুমি এখানে কেন, আর কি হওয়ার কথা বলছো?
- না ছার, আজকে কি ইশকুল বন্ধ নাকি? কোন ইশটুডেন্ট দেখতে পাচ্ছি না যে?
- হুশ জ্ঞান কি হারিয়ে ফেলছো নাকি? জানোনা আজ স্বরসতী!
- আমি জানবো কেমন করে, আমি কি হিন্দু নাকি? তাছাড়া কানাইকে দেখলাম বইসা আছে, পুজার তো কোন লক্ষণ দেখলাম না ওর মাঝে।
- কানাইকে দেখতে হবে কেন? তোমার মাসী কিছু আয়োজন করে নাই পুজা উপলক্ষে?
- আমাগো আবার আয়োজন ছার, কাষ্টমার আইলে পেট বাচে, না আইলে লাথি জুটে। এইসব আয়োজন-ফায়োজন কি আর আমাগো সয়?
- জলিল তুমি একজন সুস্থ তরুন যুবক হয়েও কিভাবে এই খারাপ কাজ করতে পারো? তুমি তো ভাল কোন কাজ করতে পারো, তোমার সেই সামর্থ আছে। এরপরেও কেন তুমি মাসীর সাথে থেকে তার খারাপ কাজগুলোকে রক্ষা করছো?
- ছার, আমিতো ওখানে চাকরী করি। আমার ডিউটি হইলো পুরো এলাকা নিরাপদ রাখা। আমি আমার ডিউটি পালন করি, এখানে আমার কি অপরাধ ছার?
কথাগুলো বলে জলিল তার লাল দাতগুলো বের করে অসম্ভব সুন্দর একটি হাসি হাসার চেষ্টা করল। মজিদ সাহেব দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বিরক্তিভাব আনলেন জলিলের দাতগুলো দেখে।
- বল, এখানে কেন এসেছো?
- আখলাক সাহেবকে খুজতে আইছিলাম।
- তো এখানে কি চাই? যাকে খুজতে আসছো তার বাড়িতে যাও।
- আমি ভাবছিলাম ইশকুলে আইছে, যেভাবে ছুটে যাচ্ছিল দেখে তাই মনে হল। আচ্ছা ফরাজী ছার কই?
- ইসমাইল শহরে গেছে বিএ পরীক্ষা দিচ্ছে।
- ছারে এখনো পড়াশুনা করে ভালই লাগে শুনলে। বড় বড় পাঁশ করতেছে।
মজিদ সাহেব এবার জলিলের কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে খাতা খুলে কিসব হিসাব-নিকাশ শুরু করে দিলেন। মুলত এটা জলিলকে বুঝানোর জন্যে যে তিনি অনেক ব্যস্ত। জলিল কিছুক্ষণ দাত বের করে থাকলেও আশানুরূপ কোন প্রতিক্রিয়া না পেয়ে দাত বন্ধ করে গুরুজনের কক্ষ থেকে বেরিয়ে আখলাক সাহেবের কক্ষের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।
এতবড় বাড়িতে আখলাম মিয়া একা থাকে দেখলে একদিকে ইর্ষাও হয় আবার আফসোসও হয়। বুড়ো হয়েছে এরপরেও বিয়ে-শাদীর নাম গন্ধ নাই, এসব লোকদের যে স্বভাব-চরিত্র খারাপ হয় তা জলিল বুঝে। দোতালা দালানের দিকে চোখ বুলিয়ে অদ্ভুত হাসি হাসে জলিল। দরজায় জোরে কয়েকবার ধাক্কা দিয়ে বলল,
- আখলাক সাহেব ঘরে আছেন?
বেশ কয়েকবার ধাক্কার পর আখলাক মিয়া দরজা খুললেন।
- কি খবর জলিল, তুমি আমার ঘরে কি করো?
- না আখলাক সাহেব, এমনি আপনার খোজ নিতে আইছিলাম।
- আমার আবার খোজ নেয়া শুরু করছো কবে থেকে?
- আপনে একলা মানুষ। বিপদ-আপদে কোন প্রয়োজন হইতে পারে। বিপদ-আপোদ তো আর সাইরেন দিয়া আসে না, এজন্যে খোজ নিতে আইলাম।
- জলিল লুঙ্গিটা খুইলা ঝাড়া দাও।
- লুঙ্গি ঝাড়া দিমু ক্যান?
- ত্যানা না প্যাচাইয়া আসল ঘটনা খুইলা কও, কি উদ্দ্যেশ্য?
- ওহ, সেই কথা! আসলে ঘটনা হইছে যে, আপনি কি সত্যিই আর বিয়াশাদী করবেন না!
জলিলের কথা শুনে আখলাক মিয়ার চোখ রক্তবর্ন ধারন করেছে, ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিলেন জলিলের মুখের সামনে। জলিল অদ্ভুত ভঙ্গিতে দাতগুলো বের করে আছে এখনো। আবারো জোরে দরজায় কড়া নাড়তে লাগল। ভেতর থেকে কোন সাড়া-শব্দ না আসায় আরো জোরে কড়া নাড়তে লাগলো। অতঃপর আখলাক মিয়া ভেতর থেকে একটি কুড়াল নিয়ে বের হলেন। দাতগুলো আপাতত বন্ধ করে লুঙ্গিটা হালকা উপরে তুলে এ যাত্রায় প্রান বাচানোর জন্যে দৌড় দিল জলিল।
চলবে....।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:২৬