প্রথম তারাবীহ আদায় করতে গিয়ে একপ্রকার বিব্রত অবস্থায় পরে গেলাম। হাফেজ সাহেব মাত্র ২৬ মিনিটে ১০ রাকাত নামাজ সম্পন্ন করেছেন। এটা আমার কাছে সুপারসনিক স্পিডই মনে হয়েছে। আমি জানি হাফেজদের নিয়ে কথা বলা আমার কাছে ধৃষ্টতা দেখানোর মতই, কিন্তু তারপরেও না বলে পারছিনা। কাউকে না কাউকে মুখ খুলতেই হচ্ছে।
একসময় প্রচুর মানুষ তারাবীহ নামাজ পড়ত। এখনো পড়ছে তবে জনসংখ্যার হিসেব অনুযায়ী গড় হিসেব করলে অনেক মুসলমানই এই নামাজকে এড়িয়ে যাচ্ছেন। কারন অধিকাংশ তরুনরাই এখন এসব ধর্ম কর্মের ব্যাপারে ততটা ভাবেন না বা সিরিয়াস না। এটা একান্ত তাদের ব্যাক্তিগত ব্যাপার। আমি নিজেও ঠিকমত নামাজ পড়িনা, আমার পক্ষেও কথাগুলো বলা একপ্রকার হাস্যরসের খোরাক যোগাবার মতই।
এখন এই তারাবীহ নামাজ আদায় করা জনসংখ্যার জন্যে বেশ কিছু হাফেজ (সবাই নয়) অতি দ্রুতগতিতে নামাজ সম্পন্ন করেন যা দৃষ্টিকটু লাগে। এলাকার বয়স্ক মানুষরা আবার এই দ্রুত গতিতে সমর্থন করেন সময় বেচে যায় বলে। আমার কথা হচ্ছে আপনারা কুরআন থেকে তিলওয়াত করছেন যার একটা শব্দও স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছেনা। শুধু শোনা যাচ্ছে কিছু একটা আওড়াচ্ছেন সুপারসনিক স্পিডে। সুরা মুজাম্মিলের ৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহর নির্দেশ হচ্ছে- ‘ধীরস্থিরভাবে স্পষ্টরূপে কোরআন তেলাওয়াত কর।’ এখন কুরআন এমনভাবে তেলওয়াত করা হয় যে সামান্যতম স্পষ্টতা নেই তাতে। তাহলে এই রহমত, মাগফিরাত, নাজাতের মাসে কি কাজে লাগাতে পারলাম আমরা!
আসলে সমস্যাটা হাফেজদের নয়, সমস্যাটা আমাদের নিজেদেরই। আমরা যে মসজিদে নামাজ আদায় করি তার সাথে পাশ্ববর্তী মসজিদের সময়ের তুলনা করি। কে বেশি ফার্স্ট পড়াতে পারে এজন্যে আমরা হাফেজদের অনুরোধ করি যেন তারা দ্রুত নামাজ সম্পন্ন করতে পারে। আর এই চক্করে গিয়ে আমাদের সম্মুখীন হতে হয় সুপারসনিক স্পিডের।
বড় আফসোসের বিষয় যে আমরা ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানরা ইসলামকে নিজেদের ইচ্ছেমত বানিয়ে নিয়েছি। নিজেদের ইচ্ছেমতো নিয়ম পালন করছি, ইচ্ছেমতো নিয়ম পালন করছিনা আবার ইচ্ছেমতো নিয়ম বানাচ্ছিও বটে। দেখা যাচ্ছে আমরা শেকড় থেকে বহুদুরে পরে আছি।
আগামীর সময়টা মুসলমান হিসেবে থাকাটা একটা পরীক্ষা বটে। আমি সকল মুসল্লী এবং হাফেজদের অনুরোধ করছি যেন এই একটি মাস সহীহ এবং শুদ্ধভাবে মনমুগ্ধকর তেলওয়াতের মাধ্যমে রোজাদারদের আত্মার খোরাক জোগাবেন। দয়া করে দ্রুতগতিতে নামাজ পড়াবেন না বা পড়াতে অনুরোধ করবেন না
বিঃদ্রঃ যারা মনে করছেন আমি ফেতনা ছড়াচ্ছি তাদের জন্যে এই লেখাটি নয়, কারো ঈমানে আঘাত হানলে ক্ষমাপ্রার্থী। আমার কাছে মনে হয়েছে আলোচনার মাধ্যমে এই অবস্থার সমাধান করা উচিৎ, এর বাইরে আমার কোন অভিপ্রায় নেই।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৫:২৫