ছেলেটার নাম রাফি। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বা অটিজমে আক্রান্ত। আমার প্রতিবেশি বাসার ছেলে। ছোটবেলা থেকে ওর বেড়ে ওঠা দেখেছি। ৩-৪ বছর পর্যন্ত মুখ থেকে কোন কথা বের হতে দেখিনি। হঠাৎ কোন একদিন জানতে পেলাম রাফি দু-একটা কথা বলতে পারে। এটুকুই...
আমার বড় ভাই আর বাবার সাথে মিশত খুব। আমি পড়াশোনার জন্যে ঢাকা থাকায় তেমন একটা দেখা হয়নি ছেলেটাকে। আমাদের বাসায় কাজ চলাকালীন অবস্থায় নিয়মিত মিস্ত্রীদের সাথে বসে থাকত। একদিন ভাইয়াকে দেখলাম ছাদে পানি দিচ্ছিল পানির পাইপ দিয়ে। ভাইয়া বলল রাফি দূরে সরে দাড়া, পানি লাগবে শরীরে। রাফি সরল না বরং বেশ শক্ত পোক্তভাবেই দাঁড়িয়ে রইল। ভাইয়ার মেজাজ চেতে গেলেও সরল না রাফি। আব্বু বলল ওর উপর চিৎকার চেচামেচি করে লাভ নেই ওর ব্রেইন সেল ওভাবেই কাজ করে। যদি কিছু করতে বলা হয় তবে সেটা করবেনা, যদি কিছু করতে নিষেধ করা হয় তবে সেটা করবেই। এই কথা শুনে ভাইয়া রাফিকে বলল রাফি ছাদ থেকে লাফ দিস না। রাফি অবাক চোখে তাকিয়ে রইল ভাইয়ার দিকে। ভাইয়া বলল, হ এইডা তুমি ঠিকই বুঝো, এই কাজ তুমি ঠিকই করবানা।
রাফিকে যদি কেউ মারে তবে ও কাদে না। জানিনা সত্য মিথ্যে কতটুকু তবে শুনেছি রাফির অনুভূতি শক্তি ধীরে কাজ করে। কেউ যদি এখন ওকে একটা চড় মারে তবে সেটা বেশ কিছুক্ষণ পর অনুভব করে।
ছেলেটার অনেকগুলো দিকের মধ্যে একটা দিক হচ্ছে যে কার কাছ থেকে যেন গালি শিখেছে, যেটা নিয়মিত আওড়াতে থাকে। এটাও একটা অটিজমের লক্ষন। যেমন একদিন ওদের বাসার সামনে থেকে কিছু হাঁস যাচ্ছিল প্যাকপ্যাক শব্দ করে। ওর ব্রেইন এই শব্দটাকে এমনভাবে ক্যাচ করেছিল যে ও এখন প্রায় প্রায়ই প্যাকপ্যাক করে শব্দ করে।
মাঝে মাঝে ছেলেটার চাউনি দেখে মায়া লাগে। চোখ দুটো বড় বড় এবং কৌতুহলী। হয়ত ওর চোখে পৃথিবীটা আমাদের মত না। একেবারেই ভিন্ন। সেই ভিন্ন পৃথিবীতে ওর মত কিছু স্পেশাল শিশুরা তাদের স্বপ্নের বাড়ি বুনছে আপন মনে।
দেশ ডিজিটাল হচ্ছে, এগিয়ে যাচ্ছে অনেক। এগুতে পারছেনা রাফিরা। তারাও এগুচ্ছেনা বললে ভুল হবে। এগুচ্ছে তবে অনেক ধীরগতিতে। সেদিন একটা কনফারেন্সে দেখলাম 'বলতে চাই' নামক একটা এপ্লিকেশন স্পেশাল চাইল্ডদের জন্যে তৈরি হয়েছে যার মাধ্যমে তারা নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারে অল্প কিছুদিনের ট্রেইনিং এর পরই। এটা অনেক ভাল একটা পদক্ষেপ। কিন্তু রাফিরা এর থেকেও আরো বেশি কিছু ডিজার্ভ করে। তাদের জন্যে আরো বেশি রিসার্চ হওয়া দরকার। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে রাফিদের জীবন ব্যবস্থা সহজলভ্য করা প্রয়োজন। যেন তারা সারাজীবন স্পেশাল চাইল্ড নামক ট্যাগ নিয়ে নয়, সাধারণ মানুষের মত করে পৃথিবীকে দেখতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৯ বিকাল ৪:০৯