সবাই মোটামুটি থেমে গেছে ব্যাপারটা নিয়ে। প্রথমদিন থেকে চুপ ছিলাম, আজ কিছু বলা উচিৎ।
দেখুন মানুষ হিসেবে সবার এক এক ধরনের পরিচয় আছে, সবার ভিন্ন ভিন্ন মতপার্থাক্য আছে। এদেশের কথা ধরুন, এখন ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে অধিষ্ঠিত হওয়ার পরেও মুসলিমরা চাচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ইসলামী শাসনব্যাবস্থা, সুশীলরা চাচ্ছে ধর্মের বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে এসে তাদের মত করে দেশের শাসনব্যাবস্থা, আর সংখ্যালঘুরা শুধু একটু শান্তিতে বাঁচতে চায়।
আমি ধর্মীয় প্রসঙ্গটা এজন্যেই টানছি যে আমি একজন মুসলিম। এটা আমার আইডেন্টিটি। আমি এটাকে পরিবর্তন করতে পারব না দুঃখিত। এক্ষেত্রে কেউ যদি আমায় জিজ্ঞেস করে যে ধর্ম আগে না দেশ আগে তার কানের নিচে ঠাডায়া দুইটা চড় দেয়া ছাড়া আমার আর কোন উপায় নেই। কারন দুইটাই আমার আইডেন্টিটি। যখন জাতীয়তা আর ধর্মে কোন বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দেয় তখন আমি ধর্মের মতটা মেনে নেই তা স্বীকার করতে আমার লজ্জা নেই। সুতরাং এক্ষেত্রে যদি কেউ বলেন যে আমি ধর্মের জন্যে দেশের কোন কালচার বা মতের বিরোধিতা করি তাহলে হ্যা সেটাই। কারন আমার কাছে দেশ এবং ধর্ম দুইটা এক জিনিস না। আপনাদের কাছে হয়ত হতে পারে। আমার কাছে ধর্ম হল আমার বিশ্বাস, আর দেশ জন্মভূমি, মার্তৃভূমি, অহংকার, ভালোবাসাসহ আরো অনেক কিছু। দুটাকে আমি অনেক কারনেই সমান প্রায়োরিটি দিতে পারিনা, এটা আমার ব্যার্থতা।
আপনি একজন মুক্ত চিন্তাবিদ, আপনার মুক্ত চিন্তা করাটা যেমন আপনার স্বাধীনতা, আমার ধর্মের নিয়মগুলো পালন করাটাও ঠিক তেমনই স্বাধীনতা। আপনার কাছে ধর্ম পালন করা যেমন মৌলবাদ, উগ্রপন্থী মনোভব। আমার কাছেও ঠিক তেমনি কোন ধর্মকে আক্রমন করে কটাক্ষ করাটাও উগ্রপন্থী, অমানুষিক মনোভব।
যাই হোক, শ্রীলংকার বোমা হামলার খবরটা শুনার পরই আমার বুকের ভেতরটা নাড়া দিয়ে উঠল। মিথ্যে কথা বলব না, যতটা ব্যাথীত হবার কথা ততটা হতে পারিনি, বরং প্রচণ্ড লজ্জিত হয়েছি। কারন খবরটা শোনা মাত্রই আমার মনে হয়েছিল এটা কোন মুসলিম নামধারী কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাজ। ক্রাইস্টচার্চের ঘটনার পর আইএসের মুখপাত্র আবু হাসান আল মুজাহির ৪৪ মিনিটের অডিও বার্তায় স্পষ্টভাবে বারবার করে বলেছিলেন তিনি এর প্রতিশোধ নিবেন। সেই দিন থেকে চরম শংকায় ছিলাম যে খুব শীঘ্রই কোন একটা অঘটন ঘটবে। ক্রাইস্টচার্চের ঘটনার পর পুরো দুনিয়াব্যাপী যে ভালোবাসা পেয়েছিল মুসলিমরা তা হয়ত আমার জীবদ্দশায় সবচেয়ে স্মরণীয় কোন ঘটনা। তবে এই ভালোবাসাটা যে খুব তারাতারি ঘৃণায় পরিনত হবে সেটিও বুঝতে পেরেছিলাম।
শ্রীলংকায় তিন শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে অথচ দুঃখ প্রকাশ করতে পারছিনা। কারন দুঃখ প্রকাশের ভাষাটা আমার জানা নেই। মাত্র কয়েকটা মানুষের সুচারু পরিকল্পনার কারনে আজ কোটি মুসলিম প্রশ্নবিদ্ধ! আমি কখনো চাইনা কয়েকটা মানুষের কারনে আমার ধর্মটা তুচ্ছ হোক, ছোট হোক, প্রশ্নবিদ্ধ হোক। তৌহিদ আল জামাত বা যে সংস্থাই জড়িত থাকুক বা না থাকুক সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। তার পরিচয় সন্ত্রাসী ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং অনুরোধ করছি যে কোন ব্যক্তির কাজের কারনে পুরো গোষ্ঠীকে নিয়ে নোংরা খেলায় মাতবেন না। এরপরেও যদি মাততে ইচ্ছে করে তবে দয়া করে পুরো পৃথিবীর সমগ্র মুসলিমদের হত্যা করে ফেলুন, কারন আপনাদের ভাবার্থে স্পষ্টত একটিই ধর্ম মৌলবাদ, উগ্রতা, ধর্মান্ধতা এবং জঙ্গী বানানোর কারিগর। সুতরাং হিটলারের মত একটি যুগোপযুগী একটি পরিকল্পনা নিয়ে সব মুসলিমদের হত্যা করে ফেলুন। এতে করে পুরো পৃথিবীতে হয়ত আপনাদের মত করে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। কি হবে জানা নেই তবে ভবিষ্যৎ মুসলিমদের জীবন যে কতটা চ্যালেঞ্জিং হবে তা অনুধাবন করার চেষ্টা করছি।
আর সোশ্যাল মিডিয়ার কিছু অসাধারণ ভাইদের ফতওয়া শুনলে মনে হয় আসলেই আমাদের সবাইকে হত্যা করা উচিৎ। আপনাদের দেখলে মনে হয়না আপনারা আসলে ইসলাম ধর্ম চর্চা করছেন, আপনাকে দেখলে মনে হয়না আপনি আপনার নবীর আদর্শ অনুসরণ করছেন। একটু কষ্ট করে জেনে নিন আপনার নবী অন্য ধর্মের মানুষদের সাথে কেমন আচরন করতেন, তাদেরকে কি সুযোগ-সুবিধা দিতেন এবং তাদের সম্পর্কে আপনাকে কি ওসীহত করে গেছেন। দয়াকরে গোঁড়ামি ছড়াবেন না। মনুষ্যত্ববিহীন কোন মানুষ কোন ধর্মেরই আওতাভুক্ত হতে পারেনা। অন্য ধর্মের মানুষ হয়েও ক্রাইস্টচার্চের সময় ওরা কিভাবে আমাদের পাশে দাড়িয়েছিল ভুলে গেছেন ইতিমধ্যেই? আপনি কি করে মুসলিম হন? আপনার ধর্মের শিক্ষাটা ওরা পালন করে গেল আর আপনি পালন করে গেলেন আপনার গোঁড়ামিটা। আর আপনার মত কিছু পচা আলুর জন্যেই পুরো মুসলিম সমাজের দিকে আঙ্গুল তুলার ধৃষ্টতা দেখায়। সহমর্মীতা প্রকাশ করতে পারবেন না চুপ করে থাকবেন, এর মাঝে ধর্মকে টেনে এনে আপনার নিজের কাজে ব্যবহার করবেন না দয়াকরে। এই অধিকার আপনাকে কেউ দেয়নি।
সবশেষে আমি আশা করছি শ্রীলংকান সরকার এই অপরাধীদের ধরে দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করবে এবং শ্রীলংকা খুব শীগ্রই তাদের এই হৃদয় বিদরক অবস্থা থেকে কাটিয়ে উঠতে পারবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৫:২২