somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মলয়া সংগীতের জনক মহর্ষি মনমোহন দত্ত

২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মনমোহন দত্ত ছিলেন মলয়া সংগীতের জনক, মরমী সাধক, কবি, বাউল, সমাজ সংস্কারক ও অসংখ্য অসাধারণ গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক। মনমোহন দত্তের লেখা গানগুলো সুর দিয়েছেন ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ এর জৈষ্ঠ ভ্রাতা আফতাব উদ্দিন।

জন্ম ও বংশপরিচয়ঃ
মনমোহন দত্ত ব্রিটিশ ভারতের ব্রাক্ষণবাড়ীয়া জেলার নবীনগর উপজেলার অর্ন্তগত সাতমোড়া গ্রামে ১২৮৪ বঙ্গাব্দের ১০ই মাঘ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল পদ্মনাথ দত্ত ও মাতা্র নাম ছিল হর মৌহিনি। তাদের পারিবারিক পেশা ছিলো কবিরাজি। মনোমোহন দত্তের পূর্বপুরুষরা সোনার গাঁও ভট্টগ্রামের জমিদার ও এ অঞ্চলের প্রধান সাঁজওয়াল ছিলেন। সাঁজওয়াল বলতে সে সময় যারা বাদশাদের সৈন্য সামন্ত যোগান দিত তাদের বোঝায়। পরে ঐ বংশের একটা অংশ সাতমোড়া গ্রামে বসতি স্থাপন করে।

শিক্ষাজীবনঃ
মনোমোহন দত্তের শিক্ষা জীবন শুরু হয় গ্রামের রামজীবন চক্রবর্তী নামক এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণের পাঠশালায় এবং পরে গ্রামের স্কুল থেকে মাইনর(পঞ্চম শ্রেণী) পাস করেন। তিনি মোক্তারি পড়ালেখা শুরু করে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি।

পরিবারঃ
ছইফুল্লাকান্দি গ্রামের সাধ্বী সৌধামনি দত্তের সাথে ১৩০৮ সনের ২৮শে ভাদ্র সোমবার মনমোহন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের সংসারে একটি মাত্র সন্তান ছিল, নাম শ্রী সুধীরচন্দ্র দত্ত ।

কর্ম ও সাধনাঃ
মনোমোহন দত্ত এক জন সাধারন মানুষ ছিলেন। কিন্তু এক জন সাধারন মানুষও যে অসাধারনে রূপান্তরিত হতে পারেন, মহাঋষিতে পরিনত হতে পারেন-তার উজ্জল দৃষ্টান্ত মনোমোহন। এক জন মানুষ হৃদয়ে কেবল "গুরু সত্য" ও "জয় দয়াময়" অমঘ বানী হৃদয়ে ধারন করেব সাধন ভজনের মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে একটির পর একটি স্তর অতিক্রম করে এক জন মহা মানবে পরিণত হয়েছেন, ব্রহ্মজ্ঞানে জ্ঞান লাভ করেছেন, জ্যোতিষ্মান হয়েছেন।
তিনি বিশ্বাস করতেন যে, মানুষ যে যে ধর্মই পালন করে থাকুক তা একই স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। তাই তিনি ধর্ম বিভেদ ঘুচাতে সর্ব ধর্মকে সমন্বয় করে "জয় দয়াময়" জপ প্রচার করে গেছেন। মনোমোহন সাধুর জীবন ছিল বড়ই বৈচিত্র্যময়। পরিবার স্বচ্ছল ছিলনা। ফলে জীবিকা অর্জনের জন্য ছুটে বেরিয়েছেন ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রাম। কিন্তু কোথাও কিছু হয়নি।
কিন্তু তিনি যে "ধর্ম ধন" উপার্জন করেছেন, সে ধনের কাছে জগতের সকল ধন পরাস্ত হয়েছে। তার গুরু ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল নিবাসী আচার্য আনন্দ স্বামী। তার মধ্যে একটা সহজাত গুরু ভক্তি ছিল। তার বাড়িতে তিনি তার গুরুর নামে "আনন্দ আশ্রম" নামে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। তার সাধন ভজন প্রক্রিয়াছিল অনেক আধ্যাত্মিকতাপূর্ণ। তার আধ্যাত্মিকতার ব্যাপারে কিছু ঘটনা প্রচলিত আছে। এর মধ্যে একটি হল- তিনি তার মৃত্যুর পর তার প্রিয় শিষ্য যাদের সাথে মৃত্যুর আগে দেখা হয়নি তাদের সাথে দেখা করেছেন- এর মধ্যে এক জন হলেন গ্রামের এক মাঝি ও এক মুদি দোকানদার।

মনোমোহন দত্তের সমাধী মন্দির

মলয়া সঙ্গিতঃ
গাউছুল আজম হযরত শাহ্‌ সূফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ্‌ (রঃ) এর সাথে সাক্ষাতের পর মনোমোহন দত্তের জীবন ও জগত সমন্দে দৃষ্টি ভঙ্গীর ব্যাপক পরিবর্তন আসে। সেখানে কিছু দিন থেকে তিনি সঙ্গীতের তালিম নেন এবং গান রচনার পুলকিত প্রেরনা লাভ করেন। মনোমোহন দত্ত "মলয়া" সঙ্গীতের স্রষ্টা। মলয়া বলতে বুঝায় মলয় পর্বত হতে আগত দখিনা বায়ু। কিন্তু লোক মুখে মলয়া বলতে যা যানা যায় তা হল তিন জনের নামের অদ্যাক্ষর দিয়ে মলয়ার সৃষ্টি (গানের রচয়িতা মনোমোহন, গানের সংরক্ষক তাঁর প্রিয় শিষ্য লবচন্দ্র ও গানের সুরকার আপ্তাব উদ্দিন খাঁ। আপ্তাব উদ্দিন খাঁ ছিলেন সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর বড় ভাই)। মনোমোহন প্রায় ৮৫০ টি গান রচনা করেন এবং এর মধ্যে প্রায় ২৮৭ টি গান মলয়া এক ও মলয়া দুই বইয়ে সন্নিবেশিত হয়েছে। তার অসংখ্য গান এরিমধ্যে হারিয়ে গেছে। এছাড়াও তিনি প্রায় ১৮ টি বই রচনাকরেন। এর মধ্যে লীলারহস্য, উপবন, তপোবন, মলয়া এক, মলয়া দুই উল্লেখযোগ্য। প্রতি বৎসর ১০ ই মাঘ সাতমোড়া গ্রামের আনন্দ আশ্রমে মনোমোহন স্মরণ উৎসব পালিত হয় ।

মহর্ষি মনোমোহন পুত্র শ্রীমৎ স্বামী সুধীর চন্দ্র দত্ত

তিনি এক মাত্র পুত্র শ্রী সুধীরচন্দ্র দত্তকে রেখে বাঙলা ১৩১৬ সনের ২০শে আশ্বিন মাত্র ৩১ বছর ৯ মাস বয়সে দেহত্যাগ করেন।

তথ্য প্রাপ্তিঃ
লীলারহস্য, মনোমোহন দত্ত, আনন্দ আশ্রম, সাতমোড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
শ্রী বিল্বভূষণ দত্ত, অধ্যক্ষ, আনন্দ আশ্রম, সাতমোড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। (সাধক মনোমোহন দত্তের নাতি)

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এতো কাঁদাও কেনো=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৬




আয়না হতে চেয়েছিলে আমার। মেনে নিয়ে কথা, তোমায় আয়না ভেবে বসি, দেখতে চাই তোমাতে আমি আর আমার সুখ দু:খ আনন্দ বেদনা। রোদ্দুরের আলোয় কিংবা রাতের আঁধারে আলোয় আলোকিত মনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অচেনা মানুষ আপনাদের দীপাবলীর শুভেচ্ছা

লিখেছেন আজব লিংকন, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:২১



আমারই বুকে না হয় শিবেরই বুকে
নাচো গো... ও নাচো গো...
পবন দা'র গলায় ভবা পাগলার গানটা কারা জানি ফুল ভলিউমে বাজিয়ে গেল। আহ.. সে সুরের টানে বুকের মাঝে সুখের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×