একবার এক বন্ধু ফোন করলো। সে ইতালী থেকে ফোন দিলো! ফোন দিয়ে বলছে, সে এক্সিডেন্ট করেছে। কিন্তু ডাক্তার তাকে ব্যথার কোন ওষুধ দিচ্ছেনা। অনেক জায়গায় কেটে গেছে তাও শুকাচ্ছেনা। আমি বললাম, ডাক্তারকে বলিসনি? বললো, বলেছি কিন্তু প্যারাসিটামল ছাড়া ব্যাথার কোন ওষুধ দেয় না। আর প্যারাসিটামল দিয়ে তো আমার কাজ হচ্ছেনা।
সেদিন দেখি মুদির দোকানে এজিথ্রোমাইসিন বিক্রি হচ্ছে। আগে প্যারাসিটামল, রেনিটিডিন বিক্রি হতো আর এখন এন্টিবায়োটিক বিক্রি হচ্ছে এবং সাজেশন দাতা দোকানদার নিজেই।
জ্বর, ঠান্ডা, মাথা ব্যাথা, লুজ মোশন এই গুলার চিকিৎসা দোকানার নিজেই দেয়।
আমরা প্রথমে জানি এন্টিবায়োটিক কি :
সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ বা ইনফেকশন জাতীয় রোগে এন্টিবায়োটিক সেবন করা হয়। ‘এন্টিবায়োটিক’ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে গ্রিক শব্দ ‘এন্টি’ ও ‘বায়োস’ থেকে। এন্টি অর্থ বিপরীত ও বায়োস অর্থ প্রাণ। মূলত এন্টিবায়োটিক জীবিত ব্যাকটেরিয়া তথা অণুজীবের বিপরীত কাজ করে। ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের কারণে যেসব রোগ হয়, সেগুলো নিরাময়ের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। এজন্য ভাইরাসজনিত রোগের বিপরীতে এন্টিবায়োটিক কার্যকরী নয়। এক জীবাণুর বিরুদ্ধে যেমন সব এন্টিবায়োটিক কাজ করে না, তেমনি সব জীবানুর বিরুদ্ধে একই এন্টিবায়োটিক কাজ করে না। এন্টিবায়োটিক দেহে প্রবেশ করলে বিভিন্ন জীবাণু এটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। জীবাণুগুলো সাময়িকভাবে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এর ফলে আমাদের দেহ সুস্থ হতে শুরু করে।
মনে আছে পেনিসিলিনের কথা! জ্বি পেনিসিলিন হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম এন্টিবায়োটিক যা কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ এক সময় এই পেনিসিলিন দিয়েই কত রোগের চিকিৎসা করা হয়েছে। এন্টিবায়োটিকের আবিষ্কারক আলেকজান্ডার ফ্লেমিং নিজেই এ ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন। ১৯২৮ সালে এন্টিবায়োটিক পেনিসিলিন আবিষ্কারের জন্য ১৯৪৫ সালে যখন তাঁকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয় তখন ফ্লেমিং বলেছিলেন,
“The thoughtless person playing with penicillin treatment is morally responsible for the death of the man who succumbs to infection with the penicillin-resistant organism.”
এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স কী?
এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বলতে বোঝায় এন্টিবায়োটিকের কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়া। কোনো বিশেষ জীবাণুর জন্য যেসব গুণাবলী ওষুধে থাকার কথা তা ঠিক রয়েছে এবং তা সঠিকভাবে সংরক্ষণও করা হয়েছে কিন্তু সবকিছুর পরও ওই জীবাণুর বিপক্ষে এটি আর কাজ করতে পারছে না। সাধারণত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীরা এন্টিবায়োটিক সেবন করে। তবে অনেক সময় দেখা যায় যে, রোগীরা একটু জ্বর কিংবা ঠান্ডা-কাশি হলে না বুঝেই এন্টিবায়োটিক খেয়ে ফেলে। আবার অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এটি সেবন করা শুরু করলেও মাঝপথে গিয়ে খাওয়া বন্ধ করে দেয় বা কোর্স পূর্ণ করে না। আর এভাবেই এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়ে পড়ে বা তার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। তাই এন্টিবায়োটিক যখন তখন সেবন করা যাবে না।
যদি এন্টিবায়োটিক অপব্যবহার করা হয় তবে এক সময় দেখা যাবে সামান্য জ্বরে মানুষ মারা যাচ্ছে। দেহের কোন ক্ষত সারছেনা। চোখের সামনে মানুষ মারা যাবে কিন্তু ডাক্তার কিছুই করতে পারবেনা। কারণ রোগীর শরীরে কোন ওষুধ কাজ করবেনা। তাই ওষুধ খাওয়ার আগে ভেবে নিন 'বিষ খাচ্ছেন না তো '
বাংলাদেশের মত অন্য কোন দেশে মুদির দোকানে ওষুধ বিক্রি হয়না। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ দেয়ার নিয়ম যত দ্রুত সম্ভব বন্ধ করা উচিৎ। তা না হলে ওষুধই করবে বিষের কাজ। বেঁচে থাকার অস্ত্র হয়ে যাবে মরণাস্ত্র।
তথ্য:
link
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৩৪