কাল রাত থেকে দেখছি শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ। আসলে কি বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর এ! নাকি বাংলাদেশের জন্মদিন ২৬ মার্চ। শিক্ষিত মানুষেরাও এটা ভুল করছেন। কেন ভুল করবেন? আপনি তো পতাকা দিয়েছেন ফেসবুক প্রো পিক। আপনার তো দেশের প্রতি গভীর মায়া। সকাল বেলা উঠেই ইংলিশ এ স্ট্যটাস দিয়েছেন love u Bangladesh. দেশ সম্পর্কে না জানা হতে পারে রাষ্ট্রদ্রোহীতা। দেখে নিন কবে জন্ম হয়েছে বাংলাদেশের।
বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছেঃ
১[ বিসমিল্লাহির-রহমানির রহিম
(দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহের নামে)]
প্রস্তাবনা আমরা, বাংলাদেশের জনগণ, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করিয়া
২[ জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধের] মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি।
যে কোনো দেশের জন্মদিন বা অভ্যুদয় দিবস বলতে সাধারণত স্বাধীনতা দিবস বা জাতীয় দিবসকেই বুঝায়।
সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্মদিন ২৬ মার্চ। এ নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই।
২৬ মার্চকে বাংলাদেশের জন্মদিন হিসেবে অস্বীকার করা মানে সরাসরি সংবিধান লঙ্ঘন করা।
২৬ মার্চ যে দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং বিশ্ববাসীর জেনে যাওয়া বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্রের নাম, ১০ এপ্রিল যে দেশের সরকার গঠন, ১৭ এপ্রিল যে দেশের সরকারের শপথ গ্রহণ, ১৬ ডিসেম্বরের আগেই যে দেশের বৈদেশিক ভিসার কার্যক্রম শুরু (তারিখটা এই মুহূর্তে খেয়াল নেই) সেই দেশের জন্ম কি করে ১৬ ডিসেম্বর হয়? একটা দেশের জন্মের আগেই এত কিছু কিভাবে সম্ভব?
২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হওয়ার পরে আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোও ফলাও করে প্রচার করে,
“Sheikh Mujibur Rahman declares Independent Republic of Bangladesh”.
আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের স্বীকৃতিটাও কিন্তু ১৬ ডিসেম্বরের আগেই আসতে শুরু করে। মুজিবনগর সরকার ভারতীয় মিত্র বাহিনীকে এদেশে প্রবেশ করতে দেয়ও “বাংলাদেশ” রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার পর। স্বীকৃতি দেওয়ার আগে ভারতীয় সেনাদের প্রবেশ করতে না দেওয়ার কারণ হিসেবে জানা যায় মুজিবনগর সরকার অন্য দেশের সেনা দিয়ে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নের মুখে না ফেলা। মিত্রবাহিনীকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়ার শর্ত হিসেবে আরো বলা হয়েছে, “বিজয় অর্জনের সাথে সাথেই ভারতীয় সেনাদের নিজ দেশে ফিরত যেতে হবে। ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার কালক্ষেপণ করা যাবে না”।
২৬ মার্চই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায়।
তো যুদ্ধটা কেন? বীর মুক্তিযোদ্ধারা ৯ মাস যুদ্ধ করেছেন সদ্য ঘোষিত বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য, সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য, সার্বভৌমত্বের হুমকি পাক-হানাদারদের এ দেশের মাটি থেকে বিতাড়িত করার জন্য। ১৬ ডিসেম্বর দেশ শত্রুমুক্ত হল। স্বাধীনতার শত্রুদের বিপক্ষে আমরা বিজয় অর্জন করি। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণার উদাহরণটা এখানে টেনে আনতে পারি। আমেরিকা স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছিল ৪ জুন, ১৭৭৬। অথচ তাদের যুদ্ধ চলেছিল ১৭৮৩ সাল পর্যন্ত। অর্থাৎ, তারা শত্রুমুক্ত হয় ১১ এপ্রিল, ১৭৮৩ সালে। তাদের স্বাধীনতা দিবস কি ১১ এপ্রিল বলে? না, তাদের স্বাধীনতা দিবস বলা হয় ৪ জুন, ১৭৭৬ সালকে। এবং ৪ জুনকেই তারা তাদের রাষ্ট্রের জন্মদিন হিসেবে পালন করে। এমনকি যে হানাদারদের কাছ থেকে আমরা আমাদের সার্বভৌমত্ব ছিনিয়ে এনেছি সেই পাকিস্তান
ডিফেন্সের ওয়েবসাইটে গিয়েও দেখলাম ওরা ২৬ মার্চ-
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসকেই “Happy Birthday of Bangladesh লিখে রেখেছ
defence.pk/threads/independence-or-birthday-for-every-country.410735/#post-7931163
সুতরাং, বিজয় দিবসকে বাংলাদেশের জন্মদিন বলে বাংলাদেশের মর্যাদা নষ্ট করবেন না। নিজের দেশ সচেতনতা নিজের। শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে হলেও দেশ সমন্ধে জানুন। বিজয়ের শুভেচ্ছা!
[সংবিধানের লেখা টুকু ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা ] পোস্টটি ছড়িয়ে দিন। ভুল থেকে সবাইকে বের করে নিয়ে আসুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:১৮