somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাপেক্সকে বাদ দিয়ে রাশিয়ান গ্যাজপ্রমের সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ সেই চুক্তি এ মাসেই! !!!!!!!!!!!!!

২২ শে এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ১২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাইকো ট্র্যাজেডির ক্ষত না শুকাতেই এবার রাশিয়ার প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমের সঙ্গে বাংলাদেশ গ্যাস উন্নয়ন ও অনুসন্ধানের চুক্তি করতে যাচ্ছে। কোনো রকম টেন্ডার ছাড়াই বিশেষ বিধানের আওতায় গ্যাজপ্রমকে দশটি কূপ দেওয়া হচ্ছে এবং তাতে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। কারণ চুক্তিতে ক্ষতিপূরণের বিষয়টিই নেই। জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী ২১ এপ্রিল গ্যাজপ্রমের একটি অগ্রবর্তী দল আসবে বাংলাদেশে। আর চূড়ান্ত চুক্তি হতে পারে ২৬ এপ্রিল।
জানা যায়, ক্ষমতাসীন সরকার রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ও উত্তোলন প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমের কাছে বাংলাদেশের গ্যাস উন্নয়ন ও অনুসন্ধানের প্রস্তাব দেয়। এরপর গত বছর গ্যাজপ্রম বাংলাদেশের ১০টি গ্যাসকূপ খনন করার জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠায়। গ্যাজপ্রমের দেওয়া প্রস্তাব একনেকের বৈঠকে পাস হয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অনুমোদন দিয়েছেন।
জানা যায়, রাশিয়ান কম্পানি গ্যাজপ্রম যে ১০টি কূপ পেতে যাচ্ছে এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হলো তিতাসের চারটি কূপ। কারণ এ গ্যাসক্ষেত্রের অনেক স্থানে কূপ ছিদ্র হয়ে গ্যাস উদ্গিরণজনিত সমস্যা রয়েছে। গত দশ বছর ধরে ক্ষেত্রটিতে এই সমস্যা চলছিল। তাই শুরু থেকে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দাবি ছিল, তিতাসে কূপ খনন করতে হলে সম্ভাব্য ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে স্পষ্ট বক্তব্য থাকতে হবে। তাতে রাজি হয়নি গ্যাজপ্রম।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গ্যাজপ্রম গ্যাসকূপ খননে ব্যবহৃত রিগসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতির জন্য এক কোটি ইউএস ডলারের বীমা করেছে। তবে কূপে যদি কোনো বিস্ফোরণ হয় তাহলে কী ধরনের ক্ষতিপূরণ পাবে বাংলাদেশ, সে বিষয়েও চুক্তিতে কিছু উল্লেখ নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর কালের কণ্ঠকে গত বুধবার বলেন, 'বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করেই চুক্তি করা হচ্ছে।' যদি কোনো বিস্ফোরণ ঘটে তাহলে বাংলাদেশ ক্ষতিপূরণ কত পাবে- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. হোসেন মনসুর বলেন, 'যদি কোনো বিস্ফোরণ হয় তাহলে ওই কূপের খনন ব্যয়ের ৫ শতাংশ অর্থ পাবে বাংলাদেশ।'
ড. হোসেন মনসুরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, কূপের গড় ব্যয় প্রায় দুই কোটি ডলার। যদি কোনো কূপে বিস্ফোরণ ঘটে তাহলে বাংলাদেশ পাবে মাত্র ১০ লাখ ডলার।
এ বিষয়ে বাপেক্সের সদ্য অবসরে যাওয়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোর্তুজা আবদুল্লাহ ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রাশিয়ার সঙ্গে যে চুক্তি হতে যাচ্ছে সেখানে বিস্ফোরণজনিত কারণে যদি বাংলাদেশের ওই গ্যাসকূপের কোনো ক্ষতি হয় তাহলে সেই ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কোন কিছু উল্লেখ নেই।'
অভিযোগ রয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর একাই নেতৃত্ব দিয়েছেন, পেট্রোবাংলার অন্য কোনো পরিচালককে রাশিয়ার সঙ্গে দেনদরবারে রাখা হয়নি।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, '১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের যে বীমা করা হয়েছে সে বীমা মূলত যন্ত্রপাতির ওপর। যদি কোনো বিস্ফোরণ ঘটে তাহলে রাশিয়া কোনো ক্ষতিপূরণ দেবে না।' তিনি আরো বলেন, 'দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বড় তিতাস গ্যাসক্ষেত্রে যদি কোনো ব্লোআউট (বিস্ফোরণ) হয় তাহলে পুরো তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের গ্যাসের আধার ধ্বংস হতে পারে। এ ব্যাপারে আরো নিখুঁত পরিকল্পনা থাকা উচিত ছিল।'
মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার অভিযোগ, জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর, প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব এন আই খান, সম্প্রতি অবসরে যাওয়া বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুর্তজা আহমেদ ফারুকী এবং গ্যাজপ্রমের স্থানীয় এজেন্ট কম্পানির অংশীদার এ কে এম রহমতউল্লাহর বিশেষ আগ্রহে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে চুক্তি হতে যাচ্ছে।
জানা গেছে, গত মার্চে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার (অব.) মোহাম্মদ এনামুল হক গ্যাজপ্রম ক্ষতিপূরণের বিষয়ে যেভাবে সুরাহা করার প্রস্তাব দিয়েছে সে বিষয়ে অপত্তি তোলেন এবং বিষয়টি আরো পরিষ্কার করার জন্য পেট্রোবাংলাকে নির্দেশনা দেন। কিন্তু প্রতিমন্ত্রীর এই নির্দেশনা আমলে নেয়নি পেট্রোবাংলা। বিষয়টির সুরাহা না হওয়ায় গ্যাজপ্রমের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য একনেকে পাঠানো হলেও বৈঠকে উত্থাপন করা হয়নি। পরে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রভাবশালী কয়েক কর্মকর্তাকে দিয়ে অনেকটা জোর করেই গত ২০ মার্চ একনেকের অনুমোদন করিয়ে নেন বলে জানা গেছে। এই অনুমোদনে টাকার অঙ্কও বেড়েছে বলে জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাটির তলায় কী পরিমাণ সম্পদ আছে তা চুলচেরা নির্ণয় করা কঠিন। এ কারণে এসব বিষয়ে ইনস্যুরেন্স হয় না। এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম তামিম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মাটির নিচের সম্পদ পৃথিবীতে কোথাও ইনস্যুরেন্স হয়েছে কি না আমার জানা নেই। তবে কোনো দুর্ঘটনা হলে উভয় পক্ষ ক্ষতি নিরূপণ করে পরিমাণ ঠিক করতে পারে।'
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'পুরো চুক্তিটিই অযৌক্তিক। বলা হচ্ছে- বাপেক্সের দক্ষতা নেই, এ কারণে বিদেশি কম্পানিকে দেওয়া হচ্ছে। অথচ শেভরনসহ বিদেশি কম্পানিগুলো বাপেক্সে সাবকনট্রাক্টে কাজ করাতে চাইছে। বাপেক্স গ্যাজপ্রমের চেয়ে অনেক কম খরচে কূপ খনন করে থাকে। তাই তাদের অধীনের কূপগুলো বিদেশিদের হাতে দিয়ে দেওয়া দুঃখজনক।' তিনি আরো বলেন, 'এই চুক্তি আমাদের ক্ষতিই করবে। কারণ ক্ষতির বিষয়ে চুক্তিতে যদি কিছু না থাকে তাহলে কোনো ক্ষতি হলে আমরা আমাদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ পাব না।' খনিজ খাতের চলমান লুটপাটের নজির এ ধরনের চুক্তি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
অভিযোগ রয়েছে, গ্যাজপ্রমকে যে দরে ১০টি কূপ দেওয়া হচ্ছে তা অন্য কম্পানির তুলনায় অনেক বেশি। প্রতিটি কূপের জন্য তারা গড়ে খনন ব্যয় ধরে ১৯.০২ মিলিয়ন ডলার। অথচ পোল্যান্ডের কম্পানি ক্রাকোর দেওয়া দর ছিল কূপপ্রতি গড়ে ১৪.৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রতিষ্ঠানটি তিতাসের লিকজনিত কারণে পরে কাজ করতে আগ্রহী হয়নি।
জানা যায়, ২০১০ সালের ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর রাশিয়া সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে বাংলাদেশের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ও উন্নয়নে রাশিয়ার সহযোগিতা চান। সেই সূত্র ধরে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাজপ্রমের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু হয়। গ্যাজপ্রম গত বছরের ৮ আগস্ট গ্যাস উত্তোলনের জন্য একটি কারিগরি প্রস্তাব দেয় পেট্রোবাংলার কাছে।
১৯৯৭ সালে মাগুরছড়ার গ্যাসকূপ বিস্ফোরণে উত্তোলনযোগ্য ২৪৫ দশমিক ৮৬ বিসিএফ গ্যাস বিনষ্ট হয়। সব মিলিয়ে মাগুরছড়া বিস্ফোরণে মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। তবে কোনো ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারেনি সরকার। এই দুর্ঘটনার পর টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে কূপ খননের দায়িত্ব দেওয়া হয় কানাডিয়ান কম্পানি নাইকো রিসোর্সকে। ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি নাইকো এই গ্যাসকূপে আগুন ধরিয়ে দিলে বিস্ফোরণে বিপুল পরিমাণ গ্যাস নষ্ট হয়। কানাডার একটি আদালতে সে দেশের কম্পানি নাইকো রিসোর্স লিমিটেডের স্বীকারোক্তিতে বলা হয়, বিএনপির সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেনসহ তিনজনকে তারা তিন কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছে। এরপর আদালত নাইকোকে ৯৫ লাখ ডলার জরিমানা করেন। তবে বাংলাদেশের পক্ষে নাইকোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে কোনো অগ্রগতি নেই।


Click This Link
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×