[[[ সত্য ঘটনা অবলম্বনে ]]]
::::::::::::::::::::::::::::::
ব্যাপারটা যখন শুরু হল তখন আমি বাসা থেকে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে ।
সাধারণ ভাবে পাঁচ মিনিটকে অনেক অল্প সময় মনে হয় । কিন্তু আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি ঘটনা মোটেও সেরকম নয় । পাঁচ মিনিটে একটা গান শেষ হয়ে যায়, যেটা তৈরি করা মানে হল কম বেশি এক সপ্তাহের খাটুনি !অবশ্য সবাই তো আর এর সাথে পরিচিত না ! ঠিক আছে , আরেকটা উদাহরণ দেই । আপনাকে যদি মাটি থেকে তিন কিলোমিটার উপরে উঠিয়ে ছেড়ে দেই, তবে আপনার আছাড় খাবার সময়টা প্রায় পাঁচ মিনিট হবে । এই উদাহরণটাও বোধহয় ঠিক যুতসই হল না ।আছাড় মারার কথায় আবার রাগ করতে পারেন অনেকে । তাছাড়া সবাই তো আর “পদার্থ বিজ্ঞান সংক্রান্ত গাণিতিক সমস্যা” বিষয়ে অবগত না ।আর আমার মত মহা ফাকিবাজ ‘অপদার্থ’ পদার্থের ছাত্র হলে তো কথাই নেই । তাহলে বরং তৃতীয় আরেকটা উদাহরণ ট্রাই করা যাক । এর যদিও কোন স্বীকৃত পরিসংখ্যান নেই, তবু । পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে টিভি চ্যানেলে দুবার বিজ্ঞাপন বিরতি দেখা যায় । এবার আশা করি বুঝেছেন । আর না বুঝলেও কিছু করার নেই, ঝুলিতে উদাহরণ নেই আর । আপনি ‘পাঁচ মিনিট’ নিয়ে এই বকবকানিতে বিরক্ত হচ্ছেন নিশ্চিত । খেয়াল করুন, পড়া শুরু করেছেন তাতেও পাঁচ মিনিট হয়নি এখনো । এর মাঝেই ঝিমুনি চলে এল! আসল কথা হল পাঁচ মিনিট মোটেই কম সময় নয় । আর আমি যে ব্যাপারটা বলতে যাচ্ছি, সে অবস্থায় পাঁচ মিনিট মানে প্রায় অনন্তকালের কাছাকাছি ।
যা বলছিলাম, আমি একটা সিগন্যাল পেলাম । কিন্তু সিগন্যাল রেসপন্স করার জন্য আমাকে বাসায় ফিরতে হবে,তক্ষুনি । আর বাসাটা, হ্যা - পাঁচ মিনিটের দূরত্বে । বুঝতেই পারছেন, লম্বা সময় । হাতে এত সময় ছিলনা তখন । কাজেই সময় কমিয়ে আনার জন্য আমি দৌড় শুরু করলাম ।
মনে মনে গালি দিচ্ছি তখন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি আর আমার পোড়া ভাগ্য কে ! একবিংশ শতকের এক মেগামেট্রোপলিটান শহরে এখন আমাকে দৌড়াতে হচ্ছে! সব বিজ্ঞানী ব্যাটা খালি হাবিজাবি নিউক্লিয়ার -অলক্লিয়ার পৃথিবীর ‘খোমা’ চেঞ্জ করা বোমা তৈরিতে ব্যস্ত!! স্টার ট্রেক বিম জিনিসটা আবিষ্কারের সময়ই নেই!! অথচ এখন, এই মুহূর্তে কত কাজে লাগত জিনিসটা আমার! পাঁচমিনিটের দূরত্ব এক তুড়িতে - ফুড়ুৎ!! হঠাত সামনে একটা প্রায় সুপারসনিক গতির রিক্সা (ব্যাটা মনে হয় ফেরারির ড্রাইভার হতে গিয়ে ভুল করে রিক্সার ড্রাইভার হয়ে গেছে ) দেখতে পেয়ে সাই-ফাই দুনিয়া থেকে আলোর গতিতে ত্রিমাত্রিক বাস্তবতায় ফিরে এলাম । লাফ দিয়ে কোনমতে সরলাম রিক্সার সামনে থেকে । কিন্তু বিপদ আরেক দিক থেকে, পুরো মাসুদ রানার ‘চারিদিকে শত্রু’ টাইপ অবস্থা । বাঙ্গালী কবি সমাজের অতি আহ্লাদের নচ্ছাড় বৃষ্টি । আগের রাতের বৃষ্টিতে রাস্তা ভর্তি কাদা । সেই কাদা আমাকে বিনা আয়াসে প্রায় ইঞ্চি ছয়েক এগিয়ে দিল । শাপে বর নাকি ঠিক বুঝলাম না । এদিকে সিগন্যাল তখন আরো তীব্র ।
আবার দৌড় শুরু করলাম । কপাল আমার! বাপের সাথে বাইকে করে তখন এলাকায় ফিরছে আমার ‘জেনিফার লোপেজ’ । এখনও প্রোপোজ করিনি, দেখা হলে ভাব দেখিয়ে চলি । অথচ আজ... আমি...ভাব!!... দৌড় । কিছু করার নেই ।দৌড় দ্য রান কন্টিনিউজ । কিন্তু দিনটাই যে খারাপ!! রাস্তায় এক মামা ( বন্ধু বান্ধব মামা না, এলাকার মুরুব্বী ) ডাক দিলেন । বাধ্য হয়ে হার্ডব্রেক করলাম । মামা শুরু করলেন আয়েসী আলাপ - কেমন আছি, কোথায় যাচ্ছি, বাসার সবাই কেমন, হ্যান-ত্যান, ব্লা-ব্লা । সবশেষে আসল কথা, আব্বা যদি বাসায় থাকে তাহলে যেন একটু ডেকে দেই । মামার সেলফোন কোন ব্ল্যাক হোলে হাওয়া হল বুঝলাম না, বুঝার চেষ্টাও করলাম না । আচ্ছা বলেই আবার দৌড় ।
বাসার বর্ণনা দিয়ে সময় নষ্ট করব না । টিনশেড, শুধু এটুকু বুঝলেই চলবে এবং গেট বন্ধ । আমি তখন আক্ষরিক অর্থে “রানিং আউট অফ টাইম” ; তাই হয়ে গেলাম সুপার হিরো । ব্যাটম্যান না গ্রিন অ্যারো জানি না ।জাস্ট দেয়াল বেয়ে উঠে গেলাম, কারো গেট খুলে দেবার অপেক্ষায় থাকা সম্ভব না । লাফ দিয়ে নামলাম বাড়ির কম্পাউন্ডে । আমার অবস্থা ততক্ষনে ‘সিরাম’ বেগতিক । তবু সান্ত্বনা এই যে এখন আমি সিগন্যালটা রেসপন্স করতে পারব ।
আসলে, কিছু ডাক এমন যে সাড়া না দিয়ে উপায় নেই ।
সত্যি, বাড়ি থেকে পাঁচ মিনিটের দূরত্বে থাকা অবস্থায় প্রকৃতির সিগন্যাল পেলে বুঝবেন দৌড় দ্য রান কাকে বলে!!
>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>
প্রথম প্রকাশ নোট হিসেবে ফেসবুকে - October 27, 2013 at 9:51am