ছোটবেলায় আমি পোকা খুব ভয় পেতাম। গুটি গুটি পোকা, লাফিয়ে গায়ে উঠে পড়ত। আম্মুর কাছে সবগুলো পোকারই একটা না একটা নাম ছিলো। গরুপোকা, গান্ধিপোকা, উষ্টিপোকা এইসব... ওদের আসল নাম জানতাম না তেমন। ভয় লাগতো সবচেয়ে বেশি তেলাপোকা! বৃষ্টির দিনগুলোতেই তো পোকার আনাগোণা শুরু হত। টিউব লাইট যেটাকে আমরা তখন রড লাইট বলতাম, তার পাশ ঘেষে সার সার পোকা। সন্ধ্যা রাতে আলো জালতেই একটু একটু করে জড়ো হতো। রাত বাড়লে ওরাও বাড়তো। দরজা লাগিয়ে রেখে জানালার পর্দা টেনে দিয়েও লাভ হতো না, ঠিকই পর্দার ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়ত। জালানা বন্ধ করে দিলে তো বাতাস নেই, গরম! পড়ালেখা অনেক থাকলে বা টিভিতে কোন প্রিয় শো থাকলে আমি মাঝে মাঝে ছাতা ফুটিয়ে বসে থাকতাম যাতে পোকার দল গায়ে এসে না পড়তে পারে। খাওয়াদাওয়া করাও ভীষণ একটা ঝামেলা হয়ে যেত পোকাদের জ্বালায়। মাঝে মাঝে নিরুপায় হয়ে "পোকা ট্রান্সফার" করতাম আমি আর আম্মু। সেটা কীরকম? বেডরুমের লাইট নিভিয়ে দিয়ে লিভিং বা ডাইনিং এর বাতি জ্বালিয়ে দিতাম। তারপর আধাঘন্টা খানেক বসে থাকতে হতো। তারপর বাতি জ্বাললে আর দরজা বন্ধ করে দিলে দু একটা পোকা ফেরত আসতে পারতো, বাকীরা বাইরেই আটকা পড়ত। আর কারেন্ট চলে গেলে শুরু হতো বিভীষিকা! চার্জার লাইটের চারপাশ ঘিরে শুধু পোকা আর পোকা। পড়ালেখা শিকেয় উঠত। বাইরে ঝিঝিপোকা, পুকুরপারে জলের শব্দ আর লাইট নিভিয়ে দিয়ে ঘুটঘুটি অন্ধকারে পোকা থেকে নিস্তার পেতে চাওয়া এসবের মধ্যে দিয়েই বর্ষার বেশ কিছু রাত কেটে যেত। এসব খুনসুটির কারণে বর্ষা আমার খুব প্রিয় একটা ঋতু।
এখন তো মনে হয় এরকম পোকার উৎপাত হয়না। Kill Pest এর আল্ট্রাভায়োলেট আলোর মাঝে আটকে থাকে পরাভুত শৈশব। জানালার থাই গ্লাসে জমে অবুঝ বৃষ্টির অভিমান।
বর্ষা এখন শুধুই নাগরিক টানপোড়েন, অস্বস্তির গান।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:৫৩