সারাবিশ্বে মৃত্যু এবং প্রতিবন্ধিতার অন্যতম কারণ স্ট্রোক ৷ স্ট্রোক হওয়া মানেই একটা পরিবারের অসহনীয় দুর্ভোগ। কিন্তু আমরা চাইলে সেটা কমানো সম্ভব৷ এর জন্য দরকার স্ট্রোক সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা এবং সবার মাঝে সচেতনতা তৈরি করা৷ তবে দুঃখের বিষয় স্ট্রোক সম্পর্কে চারদিকে শুধু কুসংস্কার আর ভুল বিশ্বাস৷ আজকে আমরাই সেইগুলোই জানব -
১। স্ট্রোক কি হার্টে হয় নাকি ব্রেইনে হয়?
অনেকে মনে করে হার্টে হলেও স্ট্রোক, ব্রেইনে হলেও স্ট্রোক। এটা সঠিক না, হার্টে রক্ত সরবরাহ বাধা গ্রস্ত হলে সেটা বলব হার্ট এটাক, ব্রেইনে রক্তসরবরাহ বিঘ্নিত হলে সেটাকে বলব ব্রেইন স্ট্রোক৷ অর্থাৎ স্ট্রোক হয় ব্রেইনে ।
২। স্ট্রোক জ্বিনের আছর বা আলগা কিছু!
গ্রাম অঞ্চলে এখনও এইসব কুসংস্কার প্রচলিত ৷ স্ট্রোক কোন অভিষাপ নয়, জ্বিন বা ভূতের আছরও নয়৷ এটা ব্রেইনের একটা রোগ৷ যাদের উচ্চরক্তচাপ, অতিরিক্ত ওজন, ডায়বেটিস থাকে এবং যারা শারিরীক প্ররিশ্রম করে না, তাদের স্ট্রোক হয়ে থাকে। অর্থাৎ কোন কারনে আমাদের ব্রেইনে রক্তনালী ব্লক হয়ে বা রক্তনালী ছিঁড়ে ব্রেইনের রক্ত সরবরাহ বিঘ্ন হয় এবং অক্সিজেনের অভাবে কিছু ব্রেইন টিস্যু মারা যায় সেটাই স্ট্রোক।
৩। স্ট্রোক খুব কম মানুষের হয়৷
এটাও একটা সম্পূর্ণ ভুল ধারনা৷ বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার মতে প্রতি ৬ জনে ১ জন স্ট্রোক। সারাবিশ্বে মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহৎ কারণ স্ট্রোক৷
৪। স্ট্রোকের চিকিৎসা নাই।
এটাও একটা সম্পূর্ণ ভুল ধারনা৷ স্ট্রোকের ইমার্জেন্সি চিকিৎসা প্রয়োজন৷ আপনি যদি FAST শব্দটি দ্বারা স্ট্রোক বুঝতে পারেন৷ তাহলে সাড়ে চার ঘন্টার মধ্যে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক একটা টিপিএ নামে ইনজেকশন দিবে, যেটা দিলে রক্তনালী ব্লক হয়ে থাকলে সেরে যাবে৷ এটা এফডিএ এপ্রোভ ড্রাগ৷ এটার মাধ্যমে ৩১% রোগী মৃত্যু বা প্রতিবন্ধিতার হাত থেকে রক্ষা পায়৷
স্ট্রোক সনাক্তকরণে FAST শব্দটি মনে রাখুন
F - Face dropped মুখ বেকে যায়,
A- Arm paralysis এক হাত পা প্যারালাইসিস হয়ে যায়,
S- Speech slurred কথা বলতে সমস্যা হয় ,
T- Time to call Ambulance.
৫. স্ট্রোক হওয়া মানে সারাজীবনের জন্য প্যারালাইসিস হয়ে যায়।
এটাও এটা মিথ্যা ধারনা৷ সঠিক রিহ্যাবিলিটেশন ( ফিজিওথেরাপি, অনুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ থেরাপি) সেবা গ্রহন করলে স্ট্রোক রোগী পুনরায় সুস্থ হয়ে আবার কর্মক্ষম হতে পারে৷
৬. স্ট্রোক শুধু বয়ষ্কদের হয়!
এটাও ভুল ধারণা৷ স্ট্রোক বয়ষ্কদের বেশি হয় এটা সত্য৷ তবে স্ট্রোক যেকোন বয়সে হতে পারে৷ এমনকি বাচ্চাদের স্ট্রোক হয়৷
৭. স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যায় না।
এটা একটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারনা৷ মেডিকেল জার্নালের ১২ বছরের গবেষনায় তারা দেখছে ৯০% স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব৷ স্ট্রোকের চিকিৎসা অনেক কঠিন এবং ব্যয়সাধ্য বিষয়৷ স্ট্রোকের পরিপূর্ণ চিকিৎসার ব্যবস্থা আমাদের দেশে নেই৷ তাই স্ট্রোকের চিকিৎসাও এইখানে দুরূহ ব্যাপার৷ কারণ ট্রাফিক জ্যাম দূরুত্বের কারনে সাড়ে চার ঘন্টার মধ্যে হাসপাতালে রোগী আনা সম্ভব নয়৷ এছাড়া অনেকেই বুঝতে পারে না, তাদের রোগী স্ট্রোক করছে কিনা।
এমতাবস্থায় স্ট্রোক প্রতিরোধ ছাড়া এইদেশে স্ট্রোককে ঠেকানো অসাধ্য বিষয়৷
উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রন, নিয়মিত শারিরীক ব্যায়াম,ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রন, ওজন নিয়ন্ত্রন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস যেমন তেল চর্বি এবং গরুর মাংস পরিহারের মাধ্যমে স্ট্রোক প্রতিরোধ সম্ভব৷
ধন্যবাদ
ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ স্ট্রোক ফাউন্ডেশন।
শ্বে মৃত্যু এবং প্রতিবন্ধিতার অন্যতম কারণ স্ট্রোক ৷ স্ট্রোক হওয়া মানেই একটা পরিবারের অসহনীয় দুর্ভোগ। কিন্তু আমরা চাইলে সেটা কমানো সম্ভব৷ এর জন্য দরকার স্ট্রোক সম্পর্কে সঠিক জানা এবং সবার মাঝে সচেতনতা তৈরি করা৷ তবে দুঃখের বিষয় স্ট্রোক সম্পর্কে চারদিকে শুধু কুসংস্কার আর ভুল বিশ্বাস৷ আজকে আমরাই সেইগুলোই জানব -
১। স্ট্রোক কি হার্টে হয় নাকি ব্রেইনে হয়?
অনেকে মনে করে হার্টে হলেও স্ট্রোক, ব্রেইনে হলেও স্ট্রোক। এটা সঠিক না, হার্টে রক্ত সরবরাহ বাধা গ্রস্ত হলে সেটা বলব হার্ট এটাক, ব্রেইনে রক্তসরবরাহ বিঘ্নিত হলে সেটাকে বলব ব্রেইন স্ট্রোক৷ অর্থাৎ স্ট্রোক হয় ব্রেইনে ।
২। স্ট্রোক জ্বিনের আছর বা আলগা কিছু!
গ্রাম অঞ্চলে এখনও এইসব কুসংস্কার প্রচলিত ৷ স্ট্রোক কোন অভিষাপ নয়, জ্বিন বা ভূতের আছরও নয়৷ এটা ব্রেইনের একটা রোগ৷ যাদের উচ্চরক্তচাপ, অতিরিক্ত ওজন, ডায়বেটিস থাকে এবং যারা শারিরীক প্ররিশ্রম করে না, তাদের স্ট্রোক হয়ে থাকে। অর্থাৎ কোন কারনে আমাদের ব্রেইনে রক্তনালী ব্লক হয়ে বা রক্তনালী ছিঁড়ে ব্রেইনের রক্ত সরবরাহ বিঘ্ন হয় এবং অক্সিজেনের অভাবে কিছু ব্রেইন টিস্যু মারা যায় সেটাই স্ট্রোক।
৩। স্ট্রোক খুব কম মানুষের হয়৷
এটাও একটা সম্পূর্ণ ভুল ধারনা৷ বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার মতে প্রতি ৬ জনে ১ জন স্ট্রোক। সারাবিশ্বে মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহৎ কারণ স্ট্রোক৷
৪। স্ট্রোকের চিকিৎসা নাই।
এটাও একটা সম্পূর্ণ ভুল ধারনা৷ স্ট্রোকের ইমার্জেন্সি চিকিৎসা প্রয়োজন৷ আপনি যদি FAST শব্দটি দ্বারা স্ট্রোক বুঝতে পারেন৷ তাহলে সাড়ে চার ঘন্টার মধ্যে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক একটা টিপিএ নামে ইনজেকশন দিবে, যেটা দিলে রক্তনালী ব্লক হয়ে থাকলে সেরে যাবে৷ এটা এফডিএ এপ্রোভ ড্রাগ৷ এটার মাধ্যমে ৩১% রোগী মৃত্যু বা প্রতিবন্ধিতার হাত থেকে রক্ষা পায়৷
স্ট্রোক সনাক্তকরণে FAST শব্দটি মনে রাখুন
F - Face dropped মুখ বেকে যায়,
A- Arm paralysis এক হাত পা প্যারালাইসিস হয়ে যায়,
S- Speech slurred কথা বলতে সমস্যা হয় ,
T- Time to call Ambulance.
৫. স্ট্রোক হওয়া মানে সারাজীবনের জন্য প্যারালাইসিস হয়ে যায়।
এটাও এটা মিথ্যা ধারনা৷ সঠিক রিহ্যাবিলিটেশন ( ফিজিওথেরাপি, অনুপেশনাল থেরাপি, স্পিচ থেরাপি) সেবা গ্রহন করলে স্ট্রোক রোগী পুনরায় সুস্থ হয়ে আবার কর্মক্ষম হতে পারে৷
৬. স্ট্রোক শুধু বয়ষ্কদের হয়!
এটাও ভুল ধারণা৷ স্ট্রোক বয়ষ্কদের বেশি হয় এটা সত্য৷ তবে স্ট্রোক যেকোন বয়সে হতে পারে৷ এমনকি বাচ্চাদের স্ট্রোক হয়৷
৭. স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যায় না।
এটা একটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারনা৷ মেডিকেল জার্নালের ১২ বছরের গবেষনায় তারা দেখছে ৯০% স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব৷ স্ট্রোকের চিকিৎসা অনেক কঠিন এবং ব্যয়সাধ্য বিষয়৷ স্ট্রোকের পরিপূর্ণ চিকিৎসার ব্যবস্থা আমাদের দেশে নেই৷ তাই স্ট্রোকের চিকিৎসাও এইখানে দুরূহ ব্যাপার৷ কারণ ট্রাফিক জ্যাম দূরুত্বের কারনে সাড়ে চার ঘন্টার মধ্যে হাসপাতালে রোগী আনা সম্ভব নয়৷ এছাড়া অনেকেই বুঝতে পারে না, তাদের রোগী স্ট্রোক করছে কিনা।
এমতাবস্থায় স্ট্রোক প্রতিরোধ ছাড়া এইদেশে স্ট্রোককে ঠেকানো অসাধ্য বিষয়৷
উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রন, নিয়মিত শারিরীক ব্যায়াম,ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রন, ওজন নিয়ন্ত্রন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস যেমন তেল চর্বি এবং গরুর মাংস পরিহারের মাধ্যমে স্ট্রোক প্রতিরোধ সম্ভব৷
ধন্যবাদ
ডাঃ সাইফুল ইসলাম, পিটি
প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ স্ট্রোক ফাউন্ডেশন।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:৪৫