বেল`স পালসি ( মুখ বাঁকা )
হঠাৎ করে আয়নায় দেখলেন মুখে বেঁকে গেছে কিংবা পানি পান করতে গিয়ে দেখলেন মুখের এক পাশ দিয়ে পানি পরে যাচ্ছে । এক চোখ বন্ধ করতে পারছেন না । কিন্তু হাত পা ঠিক আছে! কোন ধরনের অবশ হয় নাই । এই রোগের নাম কি? আমরা অনেকেই হয়তো জানি না । তাই ভয় পেয়ে যাই, হায় হায় স্ট্রোক হল নাকি !
আসলে এটা স্ট্রোক না, এই রোগের নাম বেল'স পালসি বা ফেসিয়াল পালসি। স্ট্রোক হয় ব্রেইনের রক্ত সরবরাহ কোন কারণে বিঘ্ন হলে, কিছু ব্রেইন টিস্যু মারা যায় । স্ট্রোকের ফলে শরীরের যেকোন এক পাশের হাত এবং পা প্যারালাইসিস হয়ে যায় ।
অপরদিকে বেলসি পালসিতে ব্রেইনের কোন সমস্যা হয় না । তবে ব্রেইন থেকে উপত্তি হওয়া ৭ নং ক্রেনিয়াল নার্ভ ,যেটা কানের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মুখের এক পাশকে সক্রিয় রাখে । দুই কানের পাশের দিয়ে দুইটা ক্রেনিয়াল নার্ভ মুখের দুই পাশকে সক্রিয় রাখে । তাই কোন কারণে ৭ নং ক্রেনিয়াল নার্ভ স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ব্রেইন থেকে আসা সিগনাল মুখের মাসল পায় না , ফলে মুখের এক পাশের মাসল প্যারালাইসিস বা অকেজো হয়ে যায় ।
মুখের যেই পাশের নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, মুখের মাসলও সেই পাশে প্যারালাইসিস হয় । ব্রেলস পালসির কোন রোগি যখন হাসি দেয় তখন দেখা যায় মুখের এক পাশ বেঁকে গেছে, বেঁকে যাওয়া পাশ হল ভাল পাশ । কারণ ভাল অবস্থায় মুখের দুই পাশের মাসল সক্রিয় হয়ে থাকে । তাই ব্রেলসি পালসির পর মুখের ভাল অংশের মাসল মুখের প্যারালাইসিস অংশকে টেনে নিজের দিকে নিয়ে আসে । অনেকে এটা দেখে কনফিউজড হয়ে যায়, আসলে মুখের কোন পাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । তাই ভাল করে এসেস করে চিকিৎসা নেওয়া উচিত ।
এই রোগের সঠিক কারন এখনও অজানা, তবে ইনফেকশন, টিউমার, ট্রমা, সার্জারি জনিত কারনে অনেক সময় হয়ে থাকে, এছাড়া কানের অপারেশনের সময়ও নার্ভ কেটে গিয়ে এই সমস্যা হতে পারে! স্যার চার্লস বেল প্রথম এই সমস্যাটা বের করেন । উনার নাম অনুযায়ী বেলস পালসি নামকরন করা হয় ।
১.৫% মানুষ তাঁদের জীবনে কোন পর্যায়ে এই সমস্যায় আক্রান্ত হয় । ৮৫% বেলসি পালসির রোগী কর্টিকোস্টেরয়েড এবং ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে ভাল হয়ে যায় । বেলসি পালসির উন্নতি শুরু হতে ১৪ দিন সময় লাগে, পুরোপুরি ভাল হতে ৬ সপ্তাহের মত সময় লাগে । তবে সমস্যা বাকি ১৫% রোগীর ক্ষেত্রে অনেক সময় লাগতে পারে এবং বেলসি পালসি এক্সপার্ট ফিজিওথেরাপিস্ট লাগে । তাই অধৈর্য্য হওয়া যাবে না !
তবে আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখছি, অল্প বয়সের যত বেলস রোগী আসছে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে, তারা সবাই ১০০% ভাল হয়ে গেছে। বয়স্ক লোক এবং যাদের ডায়বেটিস আছে তাঁদের ক্ষেত্রে অধিক সময় লাগে । নিয়মিত ধৈর্য্য ধরে ফিজিওথেরাপি নিলে তারাও ৮০-১০০% উন্নতি হয়ে যায় !
তবে এই সমস্যার জন্য ফিজিশিয়ানরা এখন পর্যন্ত একমাত্র স্টেরয়েডই ( কর্টিসন) ব্যবহার করে থাকেন ! চোখে পানি পড়ার জন্য অনেক ফিজিশিয়ান এন্টিবায়োটিক ড্রপও দিয়ে থাকেন। বেলস পালসি হওয়ার সাথে সাথে ফিজিশিয়ানের কাছে যাওয়াই মুখ্য। তারপর অবশ্যই ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে যেতে হবে।
বেলসি পালসিতে ফিজিওথেরাপি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে বিশেষ করে নিউরোমাসকুলার রিট্রেনিং, ইলেকট্রিক্যাল স্টিমুলেশন, বায়ো ফিডব্যাক এবং প্রোফিওসেফটিভ নিউরোমাসকুলার ফ্যাসিলিটেশন ( পিএনএফ) ।
নতুন গবেষনায় দেখা গেছে ফেসিয়াল মাসুলে স্পিন্ডল নেই, তাই স্ট্রেচিং করে কোন লাভ হয় বলে মনে হয় না !
বেলস পালসি একাধিক বারও হতে পারে!! অতি সাম্প্রতিক রিপোর্টে ৫-৯% লোকের একের অধিকবার বার হয়ে থাকে।
ডায়বেটিস রোগীরা সাবধান থাকবেন,, বিশেষ করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখুন। ডায়বেটিস রোগীদের এই সমস্যা হওয়ার সম্ভবনা ৪ গুন বেশি।
ধন্যবাদ
ডাঃ সাইফুল ইসলাম (ফিজিওথেরাপিস্ট) প্রতিষ্ঠাতা ও কো-অর্ডিনেটর
ভিশন ফিজিওথেরাপি সেন্টার, উত্তরা, ঢাকা ।
আরও পরামর্শের জন্য কল করতে পারেন ০১৭৮৭-১৫২৮৭২
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:১৯