প্রুডেনশিয়াল বিশ্বকাপ (১৯৭৫)
ফাইনাল
লর্ডস, লন্ডন, ২১ জুন
অস্ট্রেলিয়া বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ
টস: অস্ট্রেলিয়া
ফলাফল: ১৭ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয়ী
ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ: ক্লাইভ লয়েড
২১ জুন। বছরের দীর্ঘতম দিন। ২১ জুন ’৭৫। ক্রিকেট ইতিহাসের দীর্ঘতম দিন। লয়েডের দিন, নাটকীয়তার দিন। রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনায় ১ম বিশ্বকাপের ফাইনাল ছিল ‘টুকরো টুকরো নাটক, মেলোড্রামা, ট্রাজেডী, কৌতুক আর সাফল্য-ব্যর্থতার এক কোলাজ’।
পুরো টুর্নামেন্টেই ক্যারিবিয়রা ছিল শিরোপা প্রত্যাশী। অসি অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেল টসে জিতে ক্যারিবিয়দের ব্যাটিং-এ পাঠান। দুর্ভাগ্য তার। স্পিন বা বৈচিত্রহীন বোলিং লাইন পীচ থেকে কিছু না পেলেও, ক্যারিবীয় ব্যাটিং লাইন ‘পাওনা’-র উপরি আদায় করে নেয়।
শুরুটাই নাটকীয়, লিলির বলে হুক করতে গিয়ে বাঁ-হাতি ওপেনার ফ্রেডেরিক্স হিট উইকেট, যদিও বল ততক্ষণে বাউন্ডারির ওপর দিয়ে চলে গেছে।
গ্রীনিজ ও কালীচরণও দ্রুত ফিরে যান। ‘সুপার ক্যাট’ লয়েড ৫০/৩ এ বর্ষীয়ান কানহাই-এর সাথে দলের হাল ধরেন। ক্রীজে এসেই লয়েড আবিষ্কার করেন দিনটি তার।
আর পেছন ফিরে তাকাননি। ৪র্থ উইকেটে দু’জন ১৪৯ রান যোগ করেন ৩৬ ওভারে। অভিজ্ঞ কানহাইকে দুর্গ সামলানোর দায়িত্ব দিয়ে আক্রমণে নামেন লয়েড। ২৬,০০০ দর্শককে মন্ত্র-মুগ্ধ করে রাখেন তার ১০৮ মিনিটের ইনিংসে। ২৬ রানের মাথায় লয়েডের ক্যাচটা ফেলে দেবার দুঃখ বোধ হয় এডওয়ার্ডস আজও ভোলেননি। কানহাইও দু’বার জীবন পান। ২টি ছক্কা আর ১২টি ৪ এর সাহায্যে ১০২ রানের অবিস্মরণীয় ইনিংস উপহার দিয়ে লয়েড নিশ্চিন্তে প্যাভিলিয়নে ফেরেন।
লয়েড-কানহাই বিদায় নিলে অবস্থা ২০৬/৫। রিচার্ডস এলেন আর গেলেন। ২০৯/৬। টেইলএন্ডার- বয়েস, জুলিয়েন, মারে কিন্তু হাল ছাড়েননি। ফলে ৬০ ওভারে ২৯১/৮ রানের বিশাল পাহাড় গড়ে ওঠে।
২৯২ এর টার্গেট, তখনকার সময়ে চেজ করার জন্য প্রায় অসম্ভব। তবুও টার্নার-চ্যাপেল ২য় উইকেটে আশার সঞ্চার করেন। এরপর ব্যাটিং-এ ব্যর্থ, প্রাণ-চঞ্চল, যৌবনদীপ্ত রিচার্ডস দুটো সরাসরি থ্রো-তে টার্নার ও গ্রেগ চ্যাপেলকে রান আউট করেন।
এখানেই শেষ নয়। ইয়ান চ্যাপেলের আউটটাও রিচার্ডসের থ্রো থেকেই।
মিডল অর্ডারে ওয়াল্টার্স, মার্শ, এডওয়ার্ড ও গিলমোর রান ১৬২/৪ থেকে ২৩০/৮ এ নিয়ে যান। বয়েস ৪ উইকেট নিয়ে এদের এগোতে দেননি। কিন্তু এরপর আরো ২ জন সেই রান আউটের দুর্ভাগ্যে জড়িয়ে পড়েন। মূলত লয়েডের মনোহর ইনিংস আর ৫টা রান আউট অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নের সমাধি রচনা করে।
শেষ ৪৩ বলে ৫৯ রান দরকার। বাকী শুধু লিলি-থমসন। ৩টা রান আউটের ফাঁদ থেকে মুক্তি পেয়ে এরা চমৎকার ফাইট ব্যাক দেন। ২৬৪ রানে একবার রান আউট মনে করে ক্যালিপসো সমর্থকরা মাঠে ঢুকে পড়ে। আবার হোল্ডারের নো বলে থমসন ক্যাচ তুললে দর্শকরা মাঠে ঢুকে পড়ে।
লর্ডসে ম্রিয়মান আলোর নিচে, ৪র্থ বার আর থমসন রান আউটের ফাঁদ থেকে বাঁচলেন না। ২৭৪ রানে ৮ বল বাকি থাকতে অসিরা বুকড্।
লয়েড ম্যান অফ দ্যা ম্যাচের সাথে ৬৬,০০০ পাউন্ডের দলীয় পুরস্কারটিও পকেটে পুড়লেন।
পুরো ম্যাচে ক্যারিবীয় সমর্থকদের উন্মাদনা ছিল দর্শনীয়। তবে দিনটি ছিল শুধুই লয়েডের। জন উডককের ভাষায়, ‘সবার উর্ধ্বে সেদিন লয়েড, He was larger than life.’ পীচ, বাউন্ডারি, মাঠ সবই লয়েডের কাছে সেদিন ছোট হয়ে গিয়েছিল।
ইউটিউব ভিডিওঃ
সৌজন্যেঃ খেলার ভুবন
পরের পোস্টঃ
২য় বিশ্বকাপ ক্রিকেট (১৯৭৯): ফাইনাল ম্যাচ Review...
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১২:৩৭