বিদেশি কুকুরের পদলেহনের প্রথম অধ্যায় ।
৯০ এর গণ আন্দোলণ উত্তরকালে বিএনপি-আওয়ামীলীগ সরকারদ্বয় নিজদেরর মধ্যে এক রকম প্রতিয়োগিতা করে বাংলাদেশের অতি সম্ভাবণাময় ১২ টি গ্যাস ব্লক (গ্যাসাঞ্চল) এর ভাগ্য আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানীর (IOC ) হাতে সমার্পণ করে দেয়। সে সময় দুই দলের তরফ থেকে উচ্চ কন্ঠে বলা হয়েছিল যে , আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানীগুলো (IOC )-র আর্থিক বিনিয়োগ ক্ষমতা - কারিগরী দক্ষতা আর ব্যাবস্থাপনার উৎকর্ষতার গুণে বাংলাদেশ শুধু অচিরে জ্বালানী স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জণই করবে না বরং উদ্বৃত গ্যাস রফতানি করে দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। সরকারদ্বয় শুধু আইওসি নিকট প্রধান প্রধান ব্লক বা গ্যাসাঞ্চলেরক্ষেত্রগুলো হস্তান্তর করেই ক্ষান্ত হয়নি, তাঁদের বিদেশি প্রভুদের কর্মকান্ড কে বিকল্পহীন-প্রশ্নাতীত করা প্রয়াস হিসাবে রাষ্ট্রায়াত্ত তেল/ গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্স কে কর্র্মহীন করে দৈর্ঘ এক দশক ফেলে রাখা হয়েছে।
আইওসি গুলোর নিকট ব্লক হস্তান্তরের দেড় যুগের বেশি সময় পরে যদি তাদের অর্জণগুলো খোজ নেওয়া যায় তবে একে একে যে চিত্র ফুঠে উঠে :
এক) ইজারাকৃত ১২ টি ব্লকের মাঝে ৭ টিতে আজ পর্যন্ত আইওসি গুলোর তৎপরতা শূন্য। যার অধিকাংশের (৬টি ব্লক) দায় ছেড়ে IOC গুলো পালিয়েছে।
দুই ) যে ৫ টি ব্লকে IOC তৎপরতা দেখিয়েছে তাও প্রাক প্রতিষ্ঠাত গ্যাসাঞ্চলে নামকাওস্তে কর্মকান্ড বলা চলে।
গ) মাগুরছড়ায় দুর্ঘটনার মাধ্যমে বিপুল গ্যাস আর পরিবেশের ক্ষতিসাধণ।
ঘ) নিজ দেশের গ্যাস IOC নিকট হতে আন্তর্জাতিক বাজার দরে বৈদেশিক মূদ্রায় ক্রয় করে দেশের তহবিল শুণ্যকরণ। আর মূল্য সমন্নয়ের নামে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি বোঝা জনগণের পিঠে চাপানো।
ঙ) দেশের চাহিদা পূর্ণে দেশের গ্যাস বাজারের IOC কে প্রধান নিয়ন্ত্রকে পরিণত করণের লক্ষ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস ৎপাদন কোম্পানী বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানী লিমিটেড ও সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের উৎপাদন হ্রাসকরণ- নতুন উৎপাদন কূপ খননে বাধা ( এমন কি কোম্পানীর নিজস্ব অর্থায়ণে)- পুরাতন কূপ সংস্কার করতে না দেওয়া সহ নানামুখি অপতৎপরতা ।
চ) চুড়ান্ত অবস্থায় দেশ যখন ভয়াবহ জ্বালানি সংকট মূখে তখন IOCএর নিকট জাতি কতটুকু অসহায় তার প্রমাণ কেয়ার্ণ কর্তৃক ৩য় পক্ষের নিকট গ্যাস বিক্রয়ে লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষবের বাধ্য করা আর শেভরনের কম্প্রেসর কেনা জায়েজকরণ।
বিদেশি কুকুরের পদলেহনের দ্বিতীয় অধ্যায় ।
একদিকে দেশের জ্বালানী সংকটে ক্রমাবনতি এবং অপরদিকে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ- বন্দর রক্ষায় জাতীয় কমিটির আপোসহীন নিবিচ্ছিন্ন সংগ্রামের ফলে সচেতন জনগণের নিকট উম্মোচিত হয় যে এদেশের গ্যাস সেক্টরে ক্রিয়াশীল IOC গুলো কিভাবে সমগ্র জাতিকে জিম্মি করে ফেলেছে।জনগণের মাঝে আন্তর্জাতিক প্রভুদের উপর নির্ভরতা পরিবর্তে জাতীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তেল/গ্যাস সেক্টরের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান কে সক্রিয় করা দাবি উত্থাপিত হয়।
২০০৯ সালে ডিজিটাল মহাজোট নামধারী আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে প্রথমেই দেশকে জ্বালানি সংকট মুক্তকরণের মহা স্বপ্ন দেখায়।শুরু হয় বিদেশি কুকুরের পদলেহনের দ্বিতীয় অধ্যায় ।
তবে এবার একটু ভিন্ন প্রক্রিয়ায়।
সরকরা বা তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ সক্টরের সরকারের মুখপাত্র পেট্রাবাংলা আন্তর্জাতিক প্রভুদের হাতে স্থলভাগে গ্যাস ক্ষেত্রগুলো সরাসির তুলে না দিয়ে বরং জনগণ যে রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় করবার এবং দক্ষতা বৃদ্ধি দাবি তুলেছে সেই সকল প্রতিষ্ঠান দিয়ে First Track Programme / Project বা অগ্রাধিকার প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কাগজে কলমে গ্যাস সেক্টরের রাষ্ট্রায়াত্ত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এই প্রকল্প বাস্তবায়েনর কথা বলা হলেও কাজগুলো সম্পাদনের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ গ্যাস ফিলড লিমিটে (BGFCL)ও সিলেট গ্যাস ফিলড লিমিটের (SGFL ) মালিকানাধীন গ্যাস ক্ষেত্রে প্রাথিমিক ভাবে ৫ টি উন্নয়ন কূপ খননে জন্য বিদেশি কূপ খনন কোম্পানির নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।অপরদিকে বাপেক্সের নামে ৩২০০ কিমি ২-ডি সিসমিক সার্ভের নামে বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব প্রদানের কথা বলা হয়।(বিদ্যুৎ,জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনারয়, পত্র তাং ১২ জুলাই ২০০৯)।জ্বালানি সংকটকে জাতিয় দুর্যোগ বিবেচনায় ক্রয় বিধান মালা কে ( পিপিআর-২০০৮/পিপিএ-২০০৬) শিথিল করে দেওয়া হয়।
কয়েকগুণ বেশি ব্যয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠান কে নিয়োগ করে ৩য় পক্ষ সেবা গ্রহণের মূল যুক্তি দেখানো হযেছিল রাষ্ট্রায়ত্ত অনুসন্ধান ও খনন কারী একক প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের পক্ষে সংক্ষিপ্ত সময়ে এতো বিপুল কাজ জাতিয় জরুরী মুহুর্তে সমাধান সম্ভব নয়।
এখন দেখা যাক জ্বালানি কে সর্বোচ্চ অগ্রধিকার বলে পুনরায় জাতির ভাগ্যে যে বিদেশিদের উপর ছেড়ে দেওয়া হল দেড় বৎসরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর অগ্রগিত কতটুকু।
আজ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১১ এ The Financial Express ও The New Age পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায় ,
দীর্ঘ ২০ মাস কাল ক্ষেপণ করে বাংলাদেশ গ্যাস ফিলড লিমিটে (BGFCL)ও সিলেট গ্যাস ফিলড লিমিটের (SGFL ) মালিকানাদীন গ্যাস ক্ষেত্র ৫ টি উন্নয়ন কূপ খননে জন্য যে পোলিশ কোম্পানি Polish Poszukiwania Nastyi Gazu Krako এর সাথে চুক্তি হয়েছিল তারা জানিয়ে দিয়েছে চুক্তি মোতাবেক খনন কাজ করতে পারবে না।
পোলিশ কোম্পানির এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকারের ২০১২ সাল নাগদ প্রতিদিন অতিরিক্ত ১০০ এমএমিসিএফ গ্যাস উত্তোরণের আশাবাদের পানি ঢেলে দিযেছে।
সংবাদ মাধ্যমে যে দিন বিদেশি কোম্পানি কর্তৃক জাতিয় সংকটে কি আরও দীর্ঘায়িত সংবাদ এসেছে. একই দিন সকল দৈনিক সংবাদ পত্রে প্রকাশিত হচ্ছে আবারও সরকার রাশিয়ান কোম্পানি Gazprom সাথে ১২ টি উন্নয়ন কূপ খননের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়তে যাচ্ছে।
আজ সময় এসেছে জনগণ কে বলিষ্ট কন্ঠে বলতে হবে যে..................
বিদেশি কুকুর ছেড়ে দেশি ঠাকুর ধর।
***********************************************
সূত্র :
১।
বিদ্যুৎ,জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনারয়, পত্র তাং ১২ জুলাই ২০০৯।
২।The Financial Express: ২০ ফেব্রুয়ারি২০১১১।
Polish firm pulls out of 'fast-track' gas exploration.
Click This Link
৩।ও The New Age:২০ ফেব্রুয়ারি২০১১১।
Gazprom deals likely under supplier’s credit scheme
Click This Link
৪। Augmentation of Gas Production under Fast Track Program
(BGFCL Part)
http://www.bgfcl.org.bd/list.html
৫। দৈনিক প্রথম আলো : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১১।
কাল আসছে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল:
জ্বালানি খাত উন্নয়নে রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক মার্চে
Click This Link