ধরা যাক, আমি এ পর্যন্ত পাঁচ হাজার কবিতা লিখেছি। [সংরক্ষণ করেছি হয়ত হাজার খানেক] প্রত্যেকটি কবিতার পিছনে একটি ভাবনা থাকে।
ধরলাম, ভাবনা এবং লেখা মিলিয়ে প্রতিটি কবিতায় ব্যয় হয়েছে গড়ে ত্রিশ মিনিট। তার মানে ৫০০০*৩০ = ১৫০০০ মিনিট = ২৫০০ ঘণ্টা = ১০৪ দিন (প্রায়)।
গল্প লিখেছি ১০০ টা। প্রতিটি গল্পের প্লট তৈরি, লেখা এবং এডিট মিলিয়ে ১২ ঘণ্টা ধরলে, এখানে ব্যয় হয়েছে ১০০*১২ = ১২০০ ঘণ্টা = ৫০দিন।
উপন্যাস লিখেছি ২টা। ২*১ = ২ মাস।
প্রবন্ধ আছে ২০০টি। ২০০*২৪ = ৪৮০০ ঘণ্টা = ২০০ দিন।
ছোটদের বিভিন্ন ধরনের বই আছে ২০টি। ২০*৭দিন = ১৪০দিন।
একটি অনলাইন পত্রিকা আছে, যেখানে প্রতিদিন ১ঘণ্টা ব্যয় করি দুই বছর ধরে, মানে মোট সময় হিসেবে ৩০ দিন প্রায়, এখানে কিছু খরচও আছে।
ফটোগ্রাফি করি। রোজ গড়ে এ ঘণ্টা ধরেন। গত সাত বছরে এক্ষেত্র তাহলে ব্যয় হয়েছে ৩৬৫*৫*১ =১৮২৫ ঘণ্টা = ৭৬ দিন প্রায়।
অর্থাৎ পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এবং এখন পর্যন্ত (চলমান) অবৈতনিক সেক্টরে খরচ করেছি ৬৬০ দিন বা প্রায় দুই বছর। এগুলো হচ্ছে আমার সেরা (আমার কাছে) কাজ, যার কোনো বাজার মূল্য এখন পর্যন্ত নেই। যা দিয়ে এক পয়শাও আসেনি, বরং খরচ হয়েছে বিভিন্নভাবে।
এবার আসি ফেসবুকের কথায়। ফেসবুক খোলা থাকলেও, এখানে দিনে এক ঘণ্টার বেশি সময় আমি ব্যয় করিনে। দুই বছর ১ ঘণ্টা করে হলে ১ মাস হয়। তবে এখানে কিছু রির্টার্ন আছে। অন্তত কয়েকশো মানুষের সাথে অদৃশ্য যোগাযোগ হয়, তার একটা নগদ মূল্য আছে।
এর বাইরেও আছে। আমিও খুব ভালো করেই বুঝি যে, এনোনিমাস কাউকে হেল্প করলে তাতে নিজের লাভ হয় না। কারণ, তার নাগাল তো আর পাওয়া যাবে না। সর্বহারাকে খাওয়ালে আত্মতৃপ্তি ছাড়া কিছুই মিলবে না।
সবই বুঝি, এসব হিসেব-নিকেষ বুঝি না তা নয়, তারপরও বিবেকের তাড়নায় ঐ শ্রেণির প্রতিই আমার হস্ত প্রসারিত, তারমানে এমন সব জায়গায় আমি এগিয়েছি এবং এগোই, যারা আমার জন্য এগোতে পারবে না কোনোদিন। এই হিসেবটা ভালো করে বোঝার পরও সচেতনভাবেই আমি তা করি। এখানে কিন্তু সময় খুব কম যায় না, কিছু টাকাও যায়। আমার কাছে সময় মানেই টাকা, টাকা মানেই সময়।
অর্থাৎ পারিবারিক জটিল দায়িত্বের বাইরেও আমার একটা আলাদা জীবন আছে, যেটা পরিবার জানে না, জানে না নিজের স্ত্রীও। এটা কিন্তু ভয়ঙ্কর, অর্থাৎ আমার আসল জীবনটাই কাছের লোকগুলো জানে না। তারা জানে শুধু আমি কতটাকা আয় করলাম, অথচ আমি আয় করি সেসব (কাজ) দিয়ে, যে কাজ আমার নয়। তাহলে পরিশ্রম এবং মানুসিক পীড়া কতটুকু হয়? তবে আমি খুব তৃপ্ত মানুষ, গ্লানি নেই, আত্মপ্রবঞ্চনা নেই।
পাশাপাশি চিন্তা-ভাবনার সাথে অস্থিরতার একটা সম্পর্ক আছে। আপনাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াবে অনেক সময়। থিতু হতে সময় লেগে যায় কোনো কোনো সময়। কেউ কেউ তো একেবারে হারিয়েই যায়।
এর বাইরে আড্ডা-আসক্তি, হাতছানি -এসব তো থাকেই।