সময়টা ২০১০ সাল, সিলেটে থাকি। দ্বিতীয় সন্তানের আগমন ঘটবে শিঘ্রই। প্রস্তুতি , ব্যাস্ততা, আশা, উৎকন্ঠার শেষ নাই। আমার উপর দায়িত্ব পড়ল খাঁটি সরিষার তেল যোগার করতে হবে, অনাগত সন্তানের শরীরে মেখে রোদে পোহানো হবে।
অফ টপিক: বড় সন্তান (ছেলে) বাজারের সবচেয়ে দামী লোশন মেখে বড়, তবু ও চামড়া খসখসে।
সন্তানের মাতার আদেশ ( আমর কিন্তু স্ত্রী হয়, ভুল কইরেন না ) ঝাঁপাইয়া পড়লাম। সব গুলো টি.ভি. চ্যানেল এ যতগুলো এ্যড দেখলাম, আর বাজারে যত ব্রান্ড পাইলাম, অল্প অল্প করে কিনতে লাগলাম। কিনলাম, ব্যবঃহার করলাম আর বাতিল করলাম। ঝাঁজের দিক থেকে কে যে কার থেকে সেরা যেন সেই প্রতিযোগীতা। তার সাথে আছে রংএর বাহার, ঘ্রাণ ও এক এক ব্রান্ডের একেক রকম। আমিতো পুরাপুরি কনফিউজ/বিভ্রান্ত। এই সময় পারিবারিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হল, তেল হতে হবে খাঁটি, যে কোন ও মুল্যে, চাই সে তেলের কম্পানি দিয়ে হলেও।
আইডিয়া!!!
আমার বাবা থাকেন বরিশালে। বাবাকে বললাম, বাবা, খাঁটি সরিষার তেল লাগবে। বাবা চিন্তা করতে না করলেন। যথা সময়ে ১লিটারের কোকের বোতলে ভরে খাঁটি সরিষার তেল পৌঁছে গেল বরিশাল থেকে সিলেটে। কিভাবে, সেটা পরে বলছি। কিন্তু বাবার পাঠানো তেলের ঝাঁজ এতকম কেন? বাবা নিশ্চয়তা দিলেন এটাই খাঁটি সরিষার তেল। কেন? আর কিভাবে তিনি নিশ্চিত? বাবা যা বললেন:
তিনি নিজে হাট থেকে ৫ (পাঁচ) কিলো সরিষা কিনেছেন। আমার মা সেগুলো ধুঁয়ে, রোদে শুকিয়েছেন। তারপর বাবা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মিল/ঘানি থেকে তেল করে এনেছেন। বরিশাল শহরের বড়বাজারের ভিতরে হাটখোলা নামক স্থানে তেলের মিল/ঘানি আছে। এরপর সেই তেল কিছুদিন নড়াচড়া না করে রেখে দিয়েছেন। ভাসমান কিছু মায়লা থাকে ঘানি ভাঁঙ্গা তেলে, সরিষার খোসার টুকরা, ও গুলো তলে চলে গেলে, উপর থেকে ১ লিটার পাঠিয়েছেন সিলেটে। বাকী টুকু রান্নার কাজে ব্যবঃহার হয়েছে।
৩০ বছরের চেয়ে বড় বয়সী পাঠক সহজেই মনে করতে পারার কথা, সরিষা বা তিলের তেলের রান্না করার কথা। আমার ছোটবেলায় আমাডের বাসায় হত সরিষার তেলের রান্না আর আমার নানাবাড়িতে হত তিলের তেলের রান্না।
(আগামী পর্বে সমাপ্ত)